রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন

লকডাউনের আগেই রাজশাহীতে ছড়িয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

  • প্রকাশ সময় শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১
  • ২১৮ বার দেখা হয়েছে

এস.আর.ডেস্ক: লকডাউন শুরুর আগেই রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। শুধু রাজশাহীতে নয়, এর বাইরের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনার এই ভয়ঙ্কর ডেল্টা সংস্করণ যা ভারতীয় ধরন। ফলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেমন বেড়েছে রোগী, তেমন বেড়েছে মৃত্যুর হার।

এদিকে, প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার (১১ জুন) বিকেল ৫টা থেকে রাজশাহী নগরীতে লকডাউন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এর আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মার্কেট, দোকানপাট, শপিংমলসহ গণপরিবহন চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে; তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানো জনসাধারণকে ঘরমুখী করার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। লক্ষ্য একটায় করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সবাইকে মুক্ত রাখা।

তবে লকডাউন ঘোষণার আগেই করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়ার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। একই সঙ্গে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন তিনি।

যদিও রাজশাহী অঞ্চলের মৌসুমি ফল ও জীবিকাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কঠোর লকডাউনের পরিবর্তে বিশেষ বিধিনিষেধ দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীর মৃত্যু ও শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণ।

করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ইয়াজদানী বলেন, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। তবে সবাইকে আরও সতর্ক হতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করতে হবে। যাতে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কমে আসে। এখন ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, এটি অনেকটা নিশ্চিত। সুতরাং লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে লকডাউন বাড়ানো হবে কি না পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে নিজেদের স্বার্থে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার সংক্রমণরোধে সহযোগিতা করতে হবে।

শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুবই ভয়ঙ্কর। এটা বৃদ্ধদের বেশি আক্রমণ করছে। এটা দ্রুত রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ করছে। আইসিইউতে ডাক্তাররা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে; তারপরও দেখা যাচ্ছে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিরেন্টে আক্রান্ত কতজন আছেন, এটা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না। কেন না আমাদের এটি পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থা নেই। তবে কিছুদিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নমুনা পরীক্ষা করে ঢাকা থেকে জানানো হয়েছিল প্রায় ৮০ শতাংশই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। আগে যারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে যারা হচ্ছেন, এদের লক্ষণ কিন্তু একই। রোগীদের লক্ষণ দেখেই বোঝা যায় ৮০ শতাংশই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এটা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। কত দূরে গিয়ে এটা থামবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর সংযোগ ভারতীয় নদীর সঙ্গে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানের মানুষ নদীর মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শামীম ইয়াজদানী বলেন, নদীর পানির মাধ্যমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে কি না- এ বিষয়ে কোনও গবেষণা হয়নি। এটি সম্ভব কি না তা আমি জানি না।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছিলেন; তাদের ৯০ শতাংশই সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জর অধিবাসী। এরপর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়েছে। এতে করে করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর ডেল্টা সংস্করণ যা ভারতীয় রূপ বলেও পরিচিত-তা শুধু রাজশাহী নয়, এর বাইরের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। রামেক হাসপাতালে করোনা রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে। মে মাসের মধ্যভাগে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট শয্যা সংখ্যা ছিল ৬৫।

শুক্রবার (১১ জুন) পর্যন্ত হাসপাতালের ১০টি ওয়ার্ডে মোট ২৭১টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ২৯৭ জন। হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা নেই। সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে আরও ১৫ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে সাতজন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে গত ২৪ মে থেকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন মোট ১৫৭ জন। তাদের মধ্যে ৮৩ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

রাজশাহীর দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরির বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। নাটোরে এই হার ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ, নওগাঁয় ৫০ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৯ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, আমরা দেখছিলাম যে, আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা সীমিত। তাই আমরা সবাইকে সতর্ক হতে অনুরোধ করছিলাম। কিন্তু সেটা যখন হতে দেখিনি, তখন আমরা যতটা সম্ভব সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। হাসপাতালের ১৮টি শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সবসময় পূর্ণ থাকছে। নতুন করে ভেন্টিলেটর যুক্ত করতে চাইলেও অবকাঠামো না থাকায় তা সম্ভব হবে না। মোট ২৭১টি শয্যার সব কটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন আছে। এছাড়া ১৮৩টি শয্যায় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে। ৭০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি হলে পূর্ণ করে নিয়ে আসার লোকবলের অভাব। এখন আমরা যেটা করছি, নতুন আরও ওয়ার্ড করোনা ইউনিটে যুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এজন্য প্রতিটি শয্যায় আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ লাইন যুক্ত করতে হচ্ছে। রাত-দিন এই কাজই করতে হচ্ছে। মুমূর্ষু রোগী এলে তাকে তো ফেরানো যাবে না। তাকে তো চিকিৎসা দিতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলায় এ পর্যন্ত এক হাজার ১৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১৮০০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। মারা গেছে ৭২ জন। সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin