নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে দিন দিন করোনার প্রকোপ বেড়েই চলছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের আসন শেষ। মেঝেতে এখন অনেককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১১ জুন শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ১৭ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘ্ষোনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে এবং সাহেববাজারে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও পাড়ার ওলিতে গলিতে সারাদিনরাত ব্যবসা করে যাচ্ছে দোকানীরা। তবে দূরপাল্লাসহ লোকাল যানবাহন চলাচলও বন্ধ আছে। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে স্বল্প পরিসরে চলছে অটো ও অটোরিক্সা, মোটর সাইকেল এবং বাইসাইকেল।
সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রনে তখন রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রিতে ক্রেতারা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। টিসিবির এই পণ্য ক্রয়ের লাইন থেকেও করোনার বিস্তার ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সাধারণ জনগণ। এদিকে আজও করোনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শতকরা হার ২৪ভাগের এর উপরে। এই বাস্তবতায় শুরুর দিকে করোনার নমুনা পরীক্ষা (র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা) ছাড়া টিসিবির পণ্য ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন অনেকেই করোনা পরীক্ষা না করেই পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে করোনা বিস্তার ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে বেশ কয়েকদিন থেকে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চলছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর পাঁচটি স্থানে এ পরীক্ষা চলছে। প্রথমের দিকে করোনা পরীক্ষায় মানুষের সাড়া কম হলেও এখন তা বেড়েছে। এখন আর মানুষকে ডেকে করোনা টেস্ট করাতে হচ্ছেনা। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর পুলিশ বক্সের পাশে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে জানা যায় মোট ৬৮ জনের মধ্যে ১৮ জন পজেটিভ। এটা অনেক বড় বিষয়। কারন করোনা পরীক্ষায় অগ্রহী করে তুলতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে টিসিবি পণ্য বিক্রির ট্রাকের পাশে বুথ বসানো হয়। সেখানে ক্রেতাদের করোনা পরীক্ষা করে টিসিবি পণ্য কিনতে বলা হয়। র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরুর দিকে অনেকেই পরীক্ষার পর টিসিবির পণ্য কিনেছেন।
আজ বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর রেললাইনে ও জিয়া পার্কের দিকে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের ট্রাকের সামনে গাদাগাদী (একজনের শরীরে সঙ্গে আরেকজনের শরীর লাগানো) করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য ক্রয় করছেন। এদের বেশরিভাগ করোনা পরীক্ষা না করেই লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন। অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও তা ঝুলানো ছিল গলায়।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে আসা মাহমুদ হাসান ও হাবিবুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি বলেন, রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে এবং সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য প্রচারনা করে যাচ্ছে। অথচ পুলিশি পাহারায় গাদাগাদি করে টিসিবির পণ্য ক্রয় করছে জনগণ। এভাবে চলতে থাকলে করোনা সংক্রম কোনভাবেই কমানো সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘করোনার পরিস্থিতি রাজশাহীতে তি পরিমান ভয়াবহতা রুপ নিয়েছে তা সাধারণ মানুষ এখন পর্যন্ত আঁচ করতে পারছে না। এখনো তারা সচেতন হচ্ছে না। তাঁর থানা এলাকায় যেখানে টিসিবির পণ্য দেয়া হচ্ছে- দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ক্রেতাদের সচেতন করতে তিনি নিজেই ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদেরকে সচেতন করছেন। তবে বিষয়টি তিনি আরো গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
টিসিবির রাজশাহী বিভাগীয় কর্মকর্তা রবিউল মোর্শেদ বলেন, করোনার পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য বুথের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। এ কারণে বুথের পাশে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। তার জানামতে, অধিকাংশ ক্রেতাই করোনা পরীক্ষা করে পণ্য কিনেছেন। এছাড়া আমার কর্মীদের নিদের্শনা দেয়া আছে- স্বাস্থ্যবিধি না মানলে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীর ৬টি পয়েন্টে টিসিবি এর পণ্য বিক্রয় করার অনুমতি দেয়া হয়। সেইসাথে করোনা পরীক্ষায় মানুষকে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলতে টিসিবির পণ্য করোনা টেস্টের বুথের পাশে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ সময় করোনা টেস্ট করিয়ে তারপর পণ্য কিনতে মানুষকে আগ্রহী করা হয়।
তবে করোনা টেস্টে মানুষের ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। আজ থেকে প্রশাসন আরো কঠোর অবস্থানে গেছে। কোন ব্যক্তি টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে গেলে অবশ্যই র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে পণ্য করতে হবে। আর এই পরীক্ষার ফলাফল সিট মানে চিরকুট না দেখালে পণ্য না দেয়ার জন্য বিক্রেতাদের নির্দেশ দেন তিনি। এর ব্যতিক্রম ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।