নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এ নিয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন চিন্তাগ্রস্থ হলেও চিন্তা নেই সাধারণ মানুষের। তারা ভাবে করোনা নামে কোন কিছুই নাই। মানুষ প্রতিদিন স্বাভাবিক ভাবে মারা যায়। এই গুলোই গণনা করেন সরকার। তারা আরও বলেন, সরকার বিরোধীমত দমনে এবং হেফাজত ইসলামকে নির্মূল করতে করোনার দোহাই দিয়ে লকডাউন দিচ্ছে। সেইসাথে করোনার নামে মিথ্যাচার করছে। সাধারণ জনগণকে মাস্ক ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কথা বললেই এই ধরনের কথা বলে প্রতিবেদকদের বিব্রত করে ফেলে।
অথচ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঐ সকল রোগিরা মারা যান। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে ৪ জুনেও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ১১ জুন থেকে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ থেকে ১৩ জনের মধ্যে ছিল। শুধু ১২ জুন মৃত্যু হয়েছিল ৪জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ১৮ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই বাড়ি রাজশাহী জেলায়। একদিনে রাজশাহীরও এত বেশি সংখ্যক রোগী আগে কখনও মারা যাননি। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নওগাঁর ৪জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে রাজশাহীর ৭জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। বাকি ১০ জন মারা গেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। এ নিয়ে চলতি মাসে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২৫৫ জনের মৃত্যু হলো।
আজ আবারও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তারা মারা যান। মৃত ১৪ জনের মধ্যে রাজশাহীর ৬জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪জন, নাটোরের ১জন এবং নওগাঁর ৩জন মারা গেছেন।
এতকিছুর পরেও রাজশাহীর পাইকারী কাঁচাবাজার গুলোতে সকালে গেলে দেখা যায়, নেই সামাজিক দুরত্বের বালাই এবং মাস্ক পরার তাগিদ। তারা দিব্যি গাদাগাদি করে একসাথে বাজার করছে। শতকরা ৯৮ভাগ ক্রেতা বিক্রেতার মুখে নেই মাস্ক। কারো কারো থাকলেও থুতনিতে ঝুলতে দেখা য়ায়। আজ নগরীর কোর্ট পাইকারী কাঁচা বাজার, সাহেব বাজার মাস্টার পাড়া এবং শালবাগানে সকালে যেয়ে এই পরিস্থিতি দেখা যায়।
অথচ এখন করোনা আক্রান্তের হার শহরের থেকে বেশী গ্রামের মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এটা শহরের গন্ডি পেড়িয়ে গ্রামে প্রবেশ করেছে বলে বিষেজ্ঞরা বলছেন। আর এসকল বাজারে গ্রাম থেকেই বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি নিয়ে পাইকাররা বিক্রি করতে বাজারে আসেন। বিষয়টি নিয়ে ভাববার সময় হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মানুষরা।
মাস্ক পড়তে অনিহা কেন জানতে চাইলে বিক্রেতা মাসুম বিল্লাহ, আসাদ, সাইদুর, মানিক এবং বিক্রেতা আলিফ, সজল ও মনিসহ অনেকেই বলেন, গরমে তারা মুখে মাস্ক রাখতে পারেন না। আবার অনেকে বলেন, কিসের করোনা। আবার অনেকে বলেন, বাড়ি থেকে আনতে মনে নেই। এই অবস্থা হওয়ার মূল কারন হচ্ছে ভোরে না থাতে জোরতাল পুলিশের টহল, না থাকে ভ্রাম্যমান আদালতের নজরদারী । এই সুযোগটার মুল কারন এটাই।
খুচরা বাজার করতে আসা বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, পাইকারী বাজারে আসা ব্যক্তিদের মুখে মাস্ক ও সামাজিক দুরত্ব না দেখে নিজেদের লজ্জা ভয় লাগে। কারণ কার শরীরে করোনার জীবানু রয়েছে তা সাধারণভাবে দেখে কেউ বলতে পারবেনা। খুব ভোরে আইনশৃংখলা বাহিনী সদস্য মোতায়েন এবং ভ্রাম্যমান আদালতদের নজরদারী করার দাবী জানান তারা।
শুধু কাঁচা বাজার নয়। নির্মাণ শ্রমিক এবং যারা গ্রাম থেকে শহরে প্রতিদিন আসেন কাজের সন্ধানে তাদের মধ্যে সরকারী নিয়ম কানুন মানার কোন বালাই নাই। শতভাগ ব্যক্তির মুখে মাস্ক নাই। এছাড়াও সামাজিক দুরত্ব কি তারা জানেনা। তারা বলেন, যারা হাটে, মাঠে ও ঘাটে প্রখর রোদের মধ্যে কাজ করে তাদের করোনা ধরতে পারেনা। এজন্য তারা মাস্ক ও সামাজিক দুরত্ব মানে না। আজ সকালে নগরীর আয়কর বিভাগের অফিসের সামনে দিয়ে কাজের সন্ধানে শহরের আসা বেশ কয়েক সাইকেল আরোহীকে এবং কোর্ট স্টেশন ও ল²ীপুর মোড়ে ডালি কোদাল নিয়ে বসে থাকা শ্রমিকদের এমনটাই দেখা যায়।
এ বিষয়ে করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, আইন শৃংখলাবাহিনীর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমান টিম প্রতিদিন টহল দিচ্ছে। সেইসাথে অনেককে জরিমানা করছে। এ বিষয়টি তাদরে অবগত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি। সেইসাথে নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন। এছাড়াও অতি প্রয়োজনে বাহিরে আসতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরে বাহিরে আসার আহবান জানান তিনি।