এস.আর.ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৮ জন শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী। আজ শনিবার (২৬ জুন) দুপুর ১২ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ অভিযোগ করেন তারা। একই সঙ্গে দ্রæত পদায়নে আবারও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলেন সদ্য নিয়োগ প্রাপ্তরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগ নেতা এবং সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর আব্দুস সোবহান ৭৩ এর অধ্যাদেশ ১২(৫)অনুযায়ী তার উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে শূন্য পদের বিপরিতে ১৩৮ জন জনবল নিয়োগ দেন। পরের দিন ৬ মে আমরা দপ্তরে যোগদান করি। কিন্তু প্রফেসর আব্দুস সোবহান এর মেয়াদ শেষ হলে রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা আমাদের যোগদানকে অবৈধ আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে নানা অজুহাতে আমাদের কর্মস্থলে যোগদান থেকে বিরত রেখেছেন।৭৩’ এর অধ্যাদেশ মতে রুটিন উপাচার্য এ ধরণের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের রুটি রুজির উপর অমানবিক নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিতে মরিয়া বর্তমান রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা। তিনি এই নিয়োগ বাতিলে প্রতিনিয়ত মিথ্যার আশ্রয় এবং ৭৩ এর এ্যাক্ট লঙ্ঘন করে আসছেন। আমরা হতবাগ হয়েছি রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা গত২৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর এই নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন যা আমাদের নজরে এসেছে। প্রতিবেদনটি মিথ্যার আলোকে সাজানো এবং ৭৩ এর এ্যাক্টের ভুল ব্যাখ্যায় ভরপুর। এধরণের ভুল ব্যাখ্যায় ভরা প্রতিবেদন মন্ত্রনালয়কে দেওয়া ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ এবং উক্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহারের দাবী জানাই।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ঐ প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন- ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য এ্যাডহকে নিয়োগ দিতে পারেন, তবে নিয়োগ দেওয়ার পর রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হল- বর্তমান রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়েছেন। মূলত নিয়ম হলো- এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার পর পরবর্তী সিন্ডিকেটে রিপোর্ট প্রদান করতে হয়। গত ৫ মে এই নিয়োগ হওয়ার পর অদ্যবধি কোনো সিন্ডিকেট হয় নাই। এধরনের তথ্য গোপন ও মিথ্যাচারে আমরা নিজেরাই লজ্জিত।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, রেজিষ্ট্রার উপস্থিত থাকা সত্তেও অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে, যা ৭৩ এর এ্যাক্টের ব্যত্বয়। অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার গত ৫ ও ৬ মে অজ্ঞাত কারনে আত্মগোপনে ছিলেন এমনকি তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ ছিলো। গত ৭ মে তিনি রাবিতে এসে তাঁর আত্মগোপনে যাওয়ার রহস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
এখানে বর্তমান রুটিন উপাচার্য সত্যকে লুকিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। রেজিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য। কিন্তু তার দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতি এক্ষেত্রে উপাচার্য অধিনস্থ কোন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে কার্য সম্পন্ন করতে পারেন। আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন.৭৩ এর এ্যাক্ট অনুযায়ী উপাচার্য এর উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে রেজিস্ট্রার উপস্থিত থাকা সত্বেও অন্য কোন কর্মকর্তা দিয়ে কার্য সম্পাদন করতে পারেন।
এছাড়া যে সকল পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন সে সকল জায়গায় এ্যাডহক দেওয়া আইনসিদ্ধ নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু উল্লেখিত পদের বিপরীতে এডহক নিয়োগ দেওয়া হয় নি। বরং রাবির যথাযথ দপ্তর থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি শূন্য পদের বিপরীতে এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।
ঐ প্রতিবেদনে আনন্দ কুমার সাহার উল্লেখ করেছেন, শিক্ষক নিয়োগে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি এছাড়া অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে বর্তমান যে, নীতিমালা রয়েছে সেই নীতিমালা প্রনয়নের সাত সদস্য কমিটির সভাপতি ছিলেন বর্তমান রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা নিজেই। যার তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।
রাবির ৭৩ এর এ্যাক্ট অনুযায়ী কোন বিভাগে বা অফিসে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে বিভাগ বা অফিসের পানিং কমিটির বা কর্তৃপক্ষের চাহিদা পত্র থাকতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন আনন্দ কুমার সাহা। কিন্তু এটিও মিথ্যাচারের একটি অংশ। মূলত শূন্য আসনের বিপরীতে উপাচার্য তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা বলে যেকোনো পরিস্থিতিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারেন।
প্রতিবেদনের সবশেষে তিনি উল্লেখ করেছেন- মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির নিয়মিত নিয়োগ এবং এডহক নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে লেখা ছিল স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। তবে অনুরোধ কখনও নিষেধাজ্ঞা হতে পারে না। অনুরোধ সম্বলিত পত্রটি আসার পর সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুস সোবহান উক্ত পত্রটি ক আকারে মার্ক করে পত্রটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।
রুটিন দায়িত্বত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য এর মর্মার্থ না বুঝেই এই চিঠির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অনুরোধ সম্বলিত পত্রটি আসার পর রাবিতে এডহক ভিত্তিতে একজনকে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই নিয়ম চলতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার দিনই তাৎক্ষনিকভাবে মন্ত্রনালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। আমাদের জানামতে তদন্ত কমিটি এ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষনা করেনি বা শিক্ষা মন্ত্রনালয় এ নিয়োগকে অবৈধ বলেনি। কিন্তু রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য কোন ক্ষমতা বলে এ নিয়োগকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে আমাদেরকে কর্মস্থলে যোগদান করতে দিচ্ছেন না।
আমরা মনে করি, একজন রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য তার কর্তব্য দায়িত্ব এবং ক্ষমতা ভুলে গিয়ে মিথ্যাচার এবং একের পর এক ৭৩ এ্যাক্ট লঙ্ঘন করছেন। একজন রুটিন উপাচার্য পদায়ন, বদলি, ফাইন্যান্স কমিটির মিটিং ও সিন্ডিকেট করতে পারেনা। ইতিমধ্যে তিনি পদায়ন এবং বদলি করেছেন এখন তিনি ফাইন্যান্স ও সিন্ডিকেট মিটিং করতে মরিয়া। তিনি নীলনকশা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রগতিশীল সমর্থিত অফিসার কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেই জায়গায় জামাত-বিএনপি কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গত ২৪ জুন মিডিয়ার সামনে সাক্ষাৎকারে নিজের অক্ষমতার কথা প্রকাশ করেছেন সেই সঙ্গে তিনি এবং তার পরিবার নিরাপত্তাহীন্তার আশংকা প্রকাশ করেছেন। এটা তার নীলনকশা বাস্তবায়নের আরেক ধাপ। সহানুভূতি আদায় করতে এধরণের নাটক সাজিয়েছেন। তিনি ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উল্লেখ করে মিডিয়ার সামনে বলেছেন তারা নাকি তার হাত পা বেধে রেখেছেন। এটি হতে পারেনা এটা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। মনে রাখা বাঞ্ছনীয় উপাচার্য রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
রুটিন উপাচার্য তিনি কি শঙ্কায় রয়েছেন? সত্য কথা বলতে শঙ্কায় তো রয়েছি আমরা। আপনারা জানেন আমরা কর্মস্থলে যোগদানের লক্ষ্যে লাগারতার আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন নস্যাৎ করতে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এবং তাদের গুন্ডাবাহিনীর দ্বারা ইতিমধ্যে আমাদের আন্দোলনের আহবায়ক ওমর ফারুক ফারদিন কে কে হত্যার চেষ্টা করেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত হুমকির শিকার হচ্ছি।
রুটিন উপাচার্য নিজে আমাদের সাথে নিয়োগ প্রাপ্ত অনেকের সহিত ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে নানা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে চলমান আন্দোলন নস্যাৎ এবং গন্ডগোল বাধানোর পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি এর দায়ভার রুটিন উপাচার্যকে নিতে হবে। আমাদের কাছে তার প্রমান আছে নিরাপত্তার স্বার্থে এখন প্রকাশ করছিনা যথা সময়ে তা প্রকাশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আমরা অসহায় কর্মস্থলে যোগদান করতে চাই। যে নিয়োগ হয়েছে সম্পন্ন বৈধ উপায়ে সেই নিয়োগকে কিভাবে রুটিন উপাচার্য অবৈধ বলেন? গভীর বেদনার সহিত আমরা লক্ষ্য করছি কিছু কিছু গণমাধ্যম তাদের লেখুনির সময় অবৈধ নিয়োগ, ছাত্রলীগ যুবলীগ উল্লেখ করেন। আমরা বিনয়ের সহিত বলতে চাই আগে ছাত্র হয়েছি পরে ছাত্রলীগ হয়েছি। একজন ছাত্রলীগ করা ছেলে কি চাকরি পেতে পারে না। বর্তমান রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা কর্তৃক মন্ত্রনালয়ে প্রেরিত ভুল ব্যাখ্যার প্রতিবেদন এবং তার অবিরাম মিথ্যাচারে এটা প্রতিয়মান যে তিনি যে কোন উপায়ে এই নিয়োগ বাধাগ্রস্থ করতে চায়। আমরা মনেকরি তিনি জেনেবুঝে এবং তাদের অভ্যন্তরীন গ্রæপিংয়ের বলির পাঠা হিসেবে আমাদের ব্যবহার করছেন।
আমরা আহবান জানাই মিথ্যার ফুলঝুড়ি বাদ দিয়ে সত্যকে উপস্থাপন করে ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী আমাদের বৈধ নিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে কর্মেস্থলে যোগদান করার সুযোগ দিন । অন্যথায় আমাদের লাগাতার আন্দোলন থেকে বিচ্যুতি হবো না। প্রয়োজনে নায্য অধিকার আদায়ে আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবো।
উক্ত সমস্যা নিরসনে এবং দ্রæত প্রদানের দাবিটি সার্থকভাবে সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন নিয়োগ প্রাপ্তরা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমন, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন, রাজশাহী মহানগর যুবলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক একেএম আরকান উদ্দিন বাপ্পি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ, মাসুদ রানা, দেলোয়ার হোসেন ডিলস, বর্তমান সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, তৌহিদ মোরশেদ, সদস্য বোরহান উদ্দিন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাবি শাখার সাবেক আহ্বায়ক মতিউর রহমান মর্তুজাসহ নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।