সুরায়ে কাউসারে আল্লাহ তায়ালা হুজুর সা. কে হুকুম করে বলেন, নিশ্চয় আমি আপনাকে হাউজে কাউসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ ও কুরবানি আদায় করুন।
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন- হে আমার হাবিব আপনি বলুন যে, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, সব কিছুই মহান প্রতিপালকের জন্য। (সূরা আনআ’ম- ১৬২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- তারা কতক নির্দিষ্ট দিনে গৃহ পালিত চতুষ্পদ জন্তুর মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করে। (সুরা হজ্ব: আয়াত- ২৮)
আল্লাহর কাছে (কুরবানীর পশুর)) গোশত ও রক্ত পৌঁছে না বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া পৌঁছে থাকে। (সূরা হজ্ব, আয়াত- ৩৭)
রাসুল সা. হাদিসে বলেন, হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কুরবানির দিন পশু কুরবানির চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আর কোন আমল, নেই। কেয়ামতের দিন জবেহ করা পশুকে তার শিং ও খুরসহ হাজির করা হবে। কুরবানির জন্তুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা খোলা মনে এবং সন্তুষ্টি চিত্তে কুরবানি কর। (মেশকাত শরীফ : খ:১ পৃ:১২৮)
হাদিসে আরো আছে- হুজুর সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বচ্ছল ও কুরবানি করতে সক্ষম, অথচ কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়। (বাইহাকী শরিফ)
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রা. হতে বর্ণিত, একদা সাহাবায়ে কেরাম রা. হুজুর সা. কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কুরবানি কি জিনিস? হুজুর সা. ইরশাদ করেন, ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নত। অতপর সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই কুরবানির বিনিময়ে আমাদের জন্য কি প্রতিদান রয়েছে? হুজুর সা. ইরশাদ করেন, প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী দেওয়া হবে। অতপর সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দুম্বা, ভেড়া এর পশমের পরিবর্তেও কি এরূপ সাওয়াব মিলবে? হুজুর সা. ইরশাদ করেন, হ্যাঁ প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী দেওয়া হবে। (মিশকাত শরীফ)
কুরবান শব্দের আভিধানিক অর্থ হল নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকছি যাওয়া। আর কুরবানীর পারিভাষিক অর্থ হল, কান জন্তু জবেহ করার মাধ্যমে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
কুরআন হাদিস ও ইতিহাস দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, এই কুরবানির আমল হযরত আদম আ. হতে শুরু করে সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের শরিয়তে ছিল। বিশেষ করে হযরত ইবরাহীম আ. এর স্মৃতিচারণে দ্বীনে মুহাম্মদিতেও কুরবানি একটি গুরুতপূর্ণ আমল। যা স্বয়ং রাসুল সা., সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়ীন-এর যুগ হতে এই আমল আজ পর্যন্ত চলে আসছে, তাই এ কুরবানি ইসলামের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
পৃথিবীতে এমন কোন জাতি ছিলনা যারা স্বীয় মাযহাব অনুসারে কুরবানি করেনি। বর্তমানে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে হযরত আদম আ. এর সন্তান হাবিল ও কাবিলের মাঝে তাদের বোন আকলিমার বিবাহ নিয়ে দ্বন্দ¦ দেখা দিলে হযরত আদম আ. তাদেরকে এখলাসের সাথে কুরবানি করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, তোমাদের মধ্যে যার কুরবানি কবুল হবে তার সঙ্গেই এ মেয়েকে বিবাহ দেওয়া হবে। তখনকার যুগে কুরবানি কবুল হওয়ার আলামত ছিল, যে কুরবানিটি কবুল হতো তাকে আসমান থেকে আগুনের মত একটি অদৃশ্য বস্তু এসে নিয়ে যেতো। অতপর হাবিল ও কাবিল আদম আ. এর নির্দেশে কুরবানি করলো। তবে হাবিল পশু পালনের কাজ করতো সে তার পশুগুলো থেকে বেছে নিয়ে সবচেয়ে সুন্দর একটি ভেড়া আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করলো, আর কাবিল অন্যায়ভাবে বিবাহ করতে চায় ও শরিয়ত বিরোধী কাজ করতে চায়। সে কৃষি কাজ করতো। সে তার কৃষি পণ্য থেকে কুরবানি দিলো এবং সেগুলোকে একটি পাহাড়ের চ‚ড়ায় রেখে আসা হলো। অতপর হঠাৎ করে আসমান থেকে একটি অগ্নি প্রবাহ এসে হাবিলের জন্তুকে জ্বালিয়ে দিলো, অর্থাৎ তার কুরবানি আল্লাহ কবুল করে নিল। কাবিলের কুরবানি আল্লাহ কবুল করলেন না। সেই ঘটনাকে লক্ষ করে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন-
হে হাবিব (সা.)! আপনি তাদেরকে পাঠ করে শুনিয়ে দিন আদমের পুত্রদ্বয়ের ঘটনাকে যথার্থরূপে, যখন তারা উভয়ে নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানি দিয়েছিল। (সূরা মায়েদা আয়াত ২৮)
অতপর তাদের একজনের কুরবানি কবুল হলো এবং অপরের কুরবানি কবুল করা হয়নি। হযরত আদম আ. নিজ সুন্দরী মেয়েকে বিবাহ দেওয়ার জন্য যে মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন সে মাপকাঠি অনুযায়ী হাবিল তাকে বিয়ে করার জন্য অনুমতি প্রাপ্ত হলো, আর কাবিল বিয়ে করতে ব্যর্থ হলো। এতে কাবিলের মাথার জিদ আরো বৃদ্ধি হয়ে গেল। সে বলল- হে হাবিল আমি তোমার কারণে সুন্দরী (আকলিমা) কে বিয়ে করতে ব্যর্থ হলাম এজন্য আমি তোমাকে হত্যা করবো। হাবিল ছিল নিরিহ