নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে দিন দিন করোনার প্রকোপ বেড়েই চলছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের নেই আসন। আসন সংখ্যার চেয়ে বেশী রোগি ভর্তি এবং চিকিৎসা নিচ্ছে। এই যখন করোনার বাস্তবচিত্র, ঠিক এ সময়ে আবারও চালু করা হলো ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রয়। আজ বেলা ১১টা দিক থেকে নগরী ৮টি পয়েন্টে এই পণ্য বিক্রয় শুরু হয়েছে। নগরীর প্রতিটি বিক্রয় স্থানে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই চোখে পরেনি।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট বড় মসজিদের সামনে টিসিবির পণ্য ক্রয় করার জন্য পূর্ব থেকেই জণগণকে বসে থাকতে দেখ যায়। তারা সকাল সাড়ে ৮টার দিক থেকে বসে ছিলেন বলে জানান। কিছুক্ষণ পরে ট্রাক আসলে মানুষ হুমরী খেয়ে পড়ে। কে কার আগে লাইনে দাঁড়াবে। ট্রাকটিকেও নির্দিষ্ট স্থানে তারা রাখতে দিচ্ছিলনা। পুলিশ জনগণকে লাইনে সঠিকভাবে দাঁড় করাতে হিমশিম খায়। টেলাঠেলিতে কয়েকজন নারী রাস্তায় পড়ে যান।
উপস্থিত জনগণের প্রশ্ন হলো সরকার যেখানে কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। নিত্যপন্য, ঔষধ ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। জনগনের চলাচল সিমিত করেছে। পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার যানবাহন। তাহলে এই সময়ে কেন এই সিদ্ধান্ত। এই কঠোর লকডাউনে টিসিবি পণ্য বিক্রয়ের অনুমতি না দেয়াই ভাল ছিলো বলে বাজারে আসা আসাদুল ইসলাম, আব্দুল মোমিন, রিয়াজুল ইসলাম ও আবিদসহ আরো অনেকে বলেন। কারন এখানে পণ্য ক্রয় করতে আসা ব্যক্তিদের পুলিশ কোনভাইে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে না বলে উল্লেখ্য করেন তারা।
টিসিবির রাজশাহী বিভাগীয় কর্মকর্তা রবিউল মোর্শেদ বলেন, করোনার পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য বুথের নিকট টিসিবির পণ্য বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। এ কারণে বুথের পাশে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। তার জানামতে, অধিকাংশ ক্রেতাই করোনা পরীক্ষা করে পণ্য কিনেছেন। এছাড়া তাঁর কর্মীদের নিদের্শনা দেয়া আছে- স্বাস্থ্যবিধি না মানলে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার জন্য।
এদিকে রাজশাহীর জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু আসলাম চলমান লকডাউনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে গেলে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন, এসময়ে তিনি বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীর ৮টি পয়েন্টে টিসিবি এর পণ্য বিক্রয় করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেইসাথে করোনা পরীক্ষায় মানুষকে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলতে টিসিবির পণ্য করোনা টেস্টের বুথের পাশে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ সময় করোনা টেস্ট করিয়ে তারপর পণ্য কিনতে মানুষকে আগ্রহী করা হচ্ছে।
জনগনের স্বাস্থ্যববিধি না মানা এবং নগরীতে লোকের যাতায়াত বৃদ্ধি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংক বন্ধ ছিলো। রোববার ব্যাংক খোলাতে লোকের আনাগোনা একটু বেশী হয়েছে। এছাড়ার পাড়া মহল্লায় টহল জোরদার করা হয়েছে। যাতায়াত ও বিধি নিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নগরীতে জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমান আদালত এবং উপজেলা পর্যায়ে দুইটি করে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে। সেইসাথে পুলিশ, র্যাব ও আর্মি আদালাভাবে কাজ করছে। এছাড়াও আনসার ব্যাটালিয়ানও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আবু আসলাম আরো বলেন, জনগণ সচেতন না হলে করোনা সংক্রমণ রোধ করা অত্যন্ত কষ্টকর। করোনা প্রতিরোধে সরকারীভাবে নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। জনগণকে ঘরে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেইসাথে অন্যান্যদের ন্যায় জেলা প্রশাসক অসহায়দের মধ্যে বিভিন্নভাবে অনুদান প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সরকারী স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং অতি প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে আসলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও কোন ব্যক্তি টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে গেলে অবশ্যই র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে পণ্য করতে হবে। আর এই পরীক্ষার ফলাফল সিট মানে চিরকুট না দেখালে পণ্য না দেয়ার জন্য বিক্রেতাদের নির্দেশ দেন তিনি। এর ব্যতিক্রম ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট। এসময়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট অভিজিত সরকার উপস্থিত ছিলেন। তিনি টিসিবির পণ্য ক্রয়কারীদের তিন থেকে চারটি করে লাইন করার পরামর্শ দেন পুলিশকে। সেইসাথে নিম্নপক্ষে তিনফিট দুরত্ব বজায় রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেন তিনি।