নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ বছর দেড়েক আগে হুইলচেয়ারে চেপে একটি মঞ্চে উঠে গানটি শুনিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। গাইবার সময় তিনি নিজে যেমন কেঁদেছিলেন, কাঁদিয়েছেন শ্রোতাদেরও। সেটিই তাঁর শেষ গাওয়া ছিলো। যার সবকিছু স্মৃতিতে মুড়ে সংগীতের দীর্ঘ ও রাজকীয় পর্দা নামিয়ে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে গতবছর এই দিনে (৬ জুলাই) কোটি কোটি ভক্তদের চোখেল জলের সাগরে ভাসিয়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। শাশ্বত এই গুনি শিল্পির প্রয়ান দিবসটি নিরবে কেটে গেলো।
আজ (৬ জুলাই) এই প্লেব্যাক সম্রাটের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। না, ঢাকা ও তাঁর জন্মস্থান রাজশাহীতে কোনও আয়োজনের খবর মেলেনি। একদিকে মহামারি অন্যদিকে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা। অথচ এমন শিল্পী পাওয়া যায় না যুগান্তরেও একজন।
এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর পর তার দীর্ঘজীবনের সহকর্মী কনকচাঁপা বলেছিলেন, ‘এন্ড্রু কিশোরের গান গাওয়ার স্টাইল, গাওয়ার জন্য দাঁড়ানোর স্টাইল তাকিয়ে থাকার মতো। উনার কণ্ঠকে আমি বলি গলিত সোনা। উনি যখন গান গাইতেন, মনে হতো সত্যি সত্যি সোনা গলে গলে পড়ছে। এত অপূর্ব কণ্ঠ, এত শক্তিমান কণ্ঠ। সূর্যের মতো শাশ্বত কণ্ঠ।’
টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থেকে গত বছরের ১১ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে দেশে ফিরেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তারপর থেকে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এই শিল্পী। যদিও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার আগেই সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এক মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর বাঁচবেন এই শিল্পী। মূলত এমন তথ্য পেয়েই দেশে ফিরে ঢাকায় না থেমে এন্ড্রু কিশোর নিজ সিদ্ধান্তে নীরবে চলে যান জন্মশহর রাজশাহীতে। সেখানে তিনি জীবন পেয়েছিলেন এক মাসেরও কম।
মৃত্যুকালে এই কিংবদন্তি বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন রাজশাহীতে। এন্ড্রু কিশোর ও লিপিকা এন্ড্রু দম্পতির দুই সন্তান। ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক এবং মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা। দু’জনেই পড়াশুনা করছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা হয় ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সেখানে তিনি ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানে কণ্ঠ দেন। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গাওয়া গান প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে।
প্লে-ব্যাকে তার গানের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। অন্যতম জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।
গান গাওয়ার জন্য তিনি ৮বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। সুরের এই কিংবদন্তী আজীবন বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি ভক্তর হৃদয়ে। তিনি যেন অপারে ভাল থাকেন, তারজন্য ভক্তরা প্রার্থনা করেন।