নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারীর মধ্যেও কৃষকরা ধান ও চালের দাম ভাল পাওয়ায় চলতি খরিদ- ২ মৌসুমে কৃষকরা আমন ধান চাষের দিকে বেশী ঝুঁকেছে। এই মৌসুমে রাজশাহীতে ৭৭,৩২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে রাজশাহী কৃষি অধিদপ্তর। বিগত দণন থেকে তিন বছর পূর্বেও ধান চাষ করে কৃষকগণ লোকসানে পড়েন। এতে তারা ধান চাষ করা থেকে এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিকল্প হিসেবে কৃষি জমিতে মাছ চাষ করার জন্য পুকুর খনন, বাগান করা ও শাক-সবজী চাষের দিকে ঝুঁকে পরেছিলেন।
এই অবস্থা থেকে কৃষকদের ধান চাষের দিকে ফিরিয়ে আনতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলস কাজ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনা দিয়ে আসছেন। ফলে কৃষকরা বতর্মানে ধান চাষের দিকে আবারও ঝুঁকেছেন। রাজশাহীর মাঠে মাঠে এখন রোপা আমন ধান রোপনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। কৃষকরা কেউ জমি তৈরী করছে, কেউ চার উত্তোলন করছে, আবার কোন কোন জমিতে ধানের চারা রোপন করছে কৃষি শ্রমিকরা। এখন প্রায় দিন বৃষ্টি হওয়ায় সেচও কম লাগছে।
গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়ন এলাকার কৃষক আমিনুল, মাহবুব, ইয়ামিন, নয়ন ও কামাল হোসেনসহ অন্যান্যরা বলেন, এই মৌসুমে ধান চাষ করতে খরচ অনকেটা কম হয়। কারন বৃষ্টির মৌসুম হওয়ায় সেচ কম লাগে এবং পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। বিঘাপ্রতি ১৬ থেকে ১৮ মন হারে হয়। খরচ বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা হয়। এ ধান ৮০- ৯০ দিনের মধ্যে পেকে যাওয়ায় কিটনাশক ও রাসায়নিক সারও কম লাগে বলে জানান তারা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায় রাজশাহী জেলায় গত খরিদ-২ মৌসুমে ৭৭৫৭০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়। এবার ধান চাষের লক্ষমাত্রা ৭৭,৩২৫ হেক্টর হলেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এই মৌসুমে মতিহার থানায় ২৫ হেক্টর, বোয়ালিয়া থানায় ১০, পবা উপজেলায় ৯১৮০ হেক্টর, তানোর উপজেলায় ২২১৬৫ হেক্টর, মোহনপুর উপজেলায় ২১৯০ হেক্টর, বাগমারা উপজেলায় ৩০১৫ হেক্টর, দূর্গাপুর উপজেলায় ৪৬৩০ হেক্টর, পুঠিয়া উপজেলায় ৪৮৭০ হেক্টর, গোদাগাড়ী উপজেলায় ২৪৬৮০ হেক্টর, চারঘাট উপজেলায় ৪২০০ হেক্টর ও বাঘা উপজেলায় ১৩৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭৯৩১ হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপন করা হয়ে গেছে বলে জানান তারা।
রাজশাহী গোদাগাড়ী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় রাজশাহীতে এই মৌসুমে চাষকৃত উল্লেখযোগ্য ধানের জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রি-ধান ৩৪,৪৯,৫১,৫২,৭১,৫৬,৫৭,৬২,৭২,৭৫,৮০,৮৭,৯০, বিনা-৭,১৬,১৭,২০ ও ২২, হাইব্রিড এজেড ৭০০৬।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মতিয়র রহমান বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে এ অঞ্চলে এবার ধানের ভালো ফলন হবে বলে। তাঁরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এই করোনাকালীন সময়ে এবার বোরোর অধিক উৎপাদন আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। রোপা আমন ধানের উৎপাদনও খাদ্য নিরাপত্তায় ভাল ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ধানের দাম অনেক ভালো। ফলে কৃষক অনেক সচেতন রয়েছে। তারা কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিচ্ছেন। ধান কর্তনের সময় যেন কৃষক শ্রমিক সংকটে না পড়ে এ জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জোর দিয়েছেন তাঁরা। ধান কর্তনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র রয়েছে। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য কৃষি অফিস কৃষকের পাশে থেকে আন্তরিকভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।