নিজস্ব প্রতিনিধি: রোদ-বৃষ্টি ও লকডাউন উপেক্ষা করে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন চা বিক্রেতা পারভীন খাতুন ও স্বামী জাকির হোসেন। তারা বসবাস করেন শিরোইল কলোনীর খাদ্য গোডাউনের পেছনে। অনেক কষ্টে সেখানে মাথা গোঁজার একটি ঠাই করেছেন তারা। পৃথিবীর নিষ্ঠুর খেলায় বার বার হার মানলেও হাল ছাড়েননি তিনি। প্রতিকুলতার সাথে পাল্লা দিয়ে একটু শান্তি ও সংসারের সচ্ছলতার জন্য জীবন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি।
পারভীন বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ স্বামী-স্ত্রী মিলে পাঁচ সদস্যের পরিবার তাদের। জোড়াতালির এই সংসারে উপার্জনের একমাত্র ভরসা ছিল স্বামী জাকির হোসেন। স্বামী পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। ভাড়া করা অটো চালিয়ে পাঁচ সদস্যদের সংসারের বোঝাটা কোনভাবেই একা টানতে পারছিলেন না তার স্বামী। বাধ্য হয়ে সংসারের একটি খাবারের মুখ কমিয়ে আনতে খুব অল্প বয়সেই বড় মেয়ের বিয়ে দেন তারা।
কিন্তু তাতে লাভ হয়নি খুব একটা। মেয়ের সংসারেও সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করতে হয়। কোনভাবেই যেন অভাব নামের দানবটা তাদের পিছু ছাড়ছিলোনা বলে জানান পারভীন। স্বামীর একার উপার্জনে যখন সংসার নিয়ে চরম বিপাকে, ঠিক তখনই তিনিও আয়ের কথা চিন্তা করেন। এই চিন্তা থেকেই পারভিন বেসরকারী একটি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে একটি অটোরিক্সা কিনে দেন। বাঁকী টাকা দিয়ে পারভীন রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় ফুটপাতে চায়ের দোকান দেন।
অটোরিক্সা ও চায়ের দোকান চালিয়ে সংসারটা ভালই চলছিলো। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া তাদের আরেক মেয়ে জাকিয়া আক্তার মীমকে নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করার কথা ভাবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন তাদের অধরা হয়ে যায়। গত রোজার ঈদের পূর্বে তাদের অটোরিক্সা চুরি হয়ে যায়। পুলিশকে জানিয়ে আজও তার কোন খোঁজ হয়নি। এরপর তারা উভয়ে চায়ের দোকানের উপর নির্ভর হয়ে পড়েন। কিন্তু মহামারী করোনা তাদের উপার্জনের একমাত্র পথও বন্ধ করে ফেলেছে।
কারন জনগণকে রক্ষা করতে সরকার শুরু থেকেই লকডাউন, কঠোর লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ রোধের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এতে করে খেটে খাওয়া মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়েছে। এই তালিকায় পারভীন ও তার স্বামীও রয়েছেন। একদিকে নিত্যপন্ন দ্রব্য,ঔষধ এবং কাঁচা বাজার ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল ও মার্কেটসহ সকল কিছু বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও আইন শৃংখলাবাহিনী ও ও প্রশাসনের কারনে বন্ধ রয়েছে চায়ের দোকান। এখন তিনি ফেরি করে চা- সিগারেট বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করছেন। একার আয় দিয়ে চলছে না তার সংসার। তারপরেও তিনি থেমে নেই। শহরের বিভিন্ন স্থানে তিনি ফেরি করে চা বিক্রি করছেন বলে জানান পারভীন।
পারভীন আরো বলেন, একদিকে লকডাউনে অভাব শেষ হচ্ছেনা। এর উপর আবার এনজিও এর কিস্তির চাপ। প্রতি সপ্তাহে তাদের তিন হাজার টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। সংসার পরিচালনা এবং কিস্তির চাপ সামাল দিতে রাস্তায় চা নিয়ে বসলে আইন শৃংখলা বাহিনী তাড়িয়ে দেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলে জানান তিনি। তাদের মত অসহায়দের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন পারভীন।
বিষয়টি নিয়ে টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসির উদ্দীনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তাদের কিছুই করার নাই। তারা সরকারে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন মাত্র। কোন গণজমায়েত করা যাবেনা। চা দোকান বসতে দিলে জনসমাগম বাড়ে তাই উর্ধ্বতনের নির্দেশে শুধু চা দোকান নয়, কোন দোকানপাট খুলতে দেয়া হচ্ছেনা। তারপরও পারভিন গরীব, তাকে তারা যথেষ্ট সহযোগিতা করেন বলে জানান নাসির।