নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশের ন্যায় সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে রাজশাহীতে আজ শনিবারও (২৪ জুলাই) কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোর থেকে রাজশাহীর প্রধান প্রধান সড়ক পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে পড়েছে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও মহানগরে বিরাজ করছে সুনসান নিস্তব্ধতা। তবে লক্ষ্মীপুর এলাকা চিকিৎসা সেবা প্রদান এলাকা হওয়ায় এখানে জনসমাগম ও যানবাজান কিছুটা বেশী দেখা যায়। এছাড়া কেবল সংযোগ সড়কগুলোতে হাতে গোনা দু-একটি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, রিকশা ও জরুরী সেবার গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
তবে কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া মহানগরের শপিংমল, শপিং কমপ্লেক্স, সব ধরনের মার্কেট, বিপণিবিতান ও ব্যবসায়িক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী থেকে বন্ধ রয়েছে আন্ত:জেলা ও দূরপাল্লা রুটের সব যানবাহন চলাচল। কিন্তু পাড়া মহল্লায় খোলা রয়েছে দোকানপাট। তারা লকডাউনকে তোয়াক্কা করে না। এছাড়াও পাড়া মহল্লার উঠতি বয়সের ছেলেরা দলবেধে একস্থানে আড্ডা দিচ্ছে। এসময়ে কারো মুখে মাস্ক দেখা যায়না। এমনকি বেশীরভাগ মসজিদ গুলোতে নেই সামাজিক দুরত্বের বালাই এবং মাস্ক পড়ার প্রবণতা। ইমাম কিংবা কমিটি এ বিষয়ে মুসল্লীদের বললে তারা রাগ দেখান।
এদিকে আশপাশের জেলা উপজেলাসহ পুরো দেশের সঙ্গেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজশাহী শহর। শনিবার মহানগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর, শিরোইল বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, সাহেববাজার, নিউমার্কেট, উপশহর নিউ মার্কেট, লক্ষ্মীপুর, কাশিয়াডাঙ্গা, কোর্ট বাজার, শালবাগান, তলাইমারী, কাঁটাখালী ও নওদাপাড়া আমচত্বরসহ মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট একেবারেই জনশূন্য। আর দোকানপাটসহ সবকিছুই রয়েছে বন্ধ।
মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। টহলে ও ভাম্যমান আদালতে রয়েছে সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও জনগণের গতিরোধ করছেন। কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হলেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও কঠোরভাবে চেক করা হচ্ছে। করা হচ্ছে জরিমানাও। এছাড়াও অহেতুক রাস্তায় বের হওয়া পথচারীদেরও ছাড় দেয়া হচ্ছেনা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কাউছার হামিদ জানান, রাজশাহীতে ‘লকডাউনের’ গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা। এদিকে শনিবার সকাল থেকেও ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে রয়েছে। দুপুরে নগরীর সাহেববজার জিরো পয়েন্টে সাংবাদিকদের ভ্রাম্যমান আদালত বিষয়ে ব্রিফ করেন নির্বাহী মেজিস্ট্রেট কৌশিকুর রহমান। সাথে ছিলেন আর্মি মেজর এফ.এম তাবিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে তিনটি মামলা করা হয়। সেইসাথে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, কঠোর লকডাইনে কোনভাবেই দোকানপাট খোলা রাখা যাবেনা। যারাই খুলে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের জরিমানা করা সত্বেও আবারও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও পাড়া মহল্লায় ভ্রাম্যমান আদালত জোরদার করা হবে বলে জানান তিনি। সেইসাথে সবাইকে মাস্ক ও সরকারী বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানান এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এদিকে সকাল থেকে মানুষকে অহেতুক বাইরে না বের না হওয়ার জন্য পথচারীদের উদ্দেশ্যে মাইকিং করা অব্যাহত রেখেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের প্রত্যেককেই সেনাবাহিনী বা পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন প্রমানে ব্যর্থ হলে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার কখনো কখরো জরিমানাও করা হচ্ছে। আর যারা জরুরী প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের দ্রুত কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহীতে কঠোর ‘লকডাউন’ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে মহানগরজুড়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের চারটি ও নয়টি উপজেলায় ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। মহানগরের প্রবেশপথগুলোতেও পুলিশের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সার্বিক) মুহাম্মদ আবু আসলাম জানিয়েছেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ছাড়া উপজেলাগুলোতেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব টহল দিচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ অহেতুক বাইরে ঘোরাঘুরি করলে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে জানান আবু আসলাম।