বিনোদন ডেস্ক : ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি উত্তাল। বনানীর বাসা থেকে ভয়ংকর মাদক এলএসডি, আইস, ইয়াবা, বিপুল মদসহ আটক হয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। চলচ্চিত্র শিল্পীদের অবক্ষয় নিয়ে খানিকটা নীরব ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। আজ (৭ আগস্ট) পরীমণির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে শিল্পী সমিতি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ও অভিনেতা মিশা সওদাগর বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সদস্য চিত্রনায়িকা পরীমণি অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার নামে মামলাও চলছে। তার ব্যক্তিগত কোন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায় সংগঠন হিসেবে শিল্পী সমিতি নিবে না। তার ব্যক্তিগত যাবতীয় কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব শুধু তাদের। এর সাথে শিল্পী সমিতির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই শিল্পী সমিতির ভাবমূর্তি রক্ষার্থে পরীমণির শিল্পী সমিতির সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্রের ৬-এর ‘খ’ ও ৯-এর ‘গ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সমিতির কোনো সদস্য যদি সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে কোনো কাজে লিপ্ত হয় সঙ্গে সঙ্গে তার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত হবে। তবে আদালতে যদি প্রমাণ হয় তিনি নির্দোষ, তাহলে পদ ফিরে পাবেন। আর যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে আজীবনের জন্য সমিতির সদস্যপদ হারাবেন।’
গত বুধবার (৪ আগস্ট) বিকাল থেকে র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা বনানীতে আলোচিত এই নায়িকার বাসার সামনে অবস্থান নেন। এরপর র্যাবের কয়েকজন সদস্য পরীমণির বাসায় যান। র্যাব পরিচয় দিলেও প্রথমে তিনি দরজা খুলেননি। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ফেসবুকে লাইভ শুরু করেন পরীমণি। দীর্ঘ প্রায় ৩২ মিনিট লাইভে ছিলেন তিনি। কিছু সময় পর বাসার দরজা খুলে দেন নায়িকা। তখনও লাইভ চলছিল। এরপর র্যাবের হস্তক্ষেপে লাইভ বন্ধ করতে বাধ্য হন পরীমণি।
গত বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পরীমণিকে হাজির করা হয়। এরপর মাদক মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা।
অন্যদিকে পরীমণির আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরীমণিকে আটকের পর থেকেই প্রকাশ্যে আসছে তার অন্ধকার জগতের নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। নায়িকা হিসেবে রাতারাতি তারকা বনে যান পরী। অঢেল টাকা আর অভিজাত জীবন যেন স্বেচ্ছায় ধরা দেয় তার হাতে। দামি গাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, মূল্যবান অলঙ্কার কি নেই তার? অথচ তার সমসাময়িক নায়িকাদের অনেকে বাসা ভাড়া দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
জানা যায়, সিনেমার শুটিংয়ের আড়ালে প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে বেশি পছন্দ করতেন পরীমণি। রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি শেষে মদ্যপ অবস্থায় বের হতেন তিনি। এই নায়িকা নিয়মিত ধূমপান করেন। তার বাসায় বিদেশি সিগারেট ও মদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। কাঁচে ঘেরা একটি রুমে সাজানো সারি সারি বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের বোতলগুলো দেখে মনে হবে পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো বিলাসবহুল বারে ঢুকে পড়েছেন আপনি।
অভিযোগ আছে, পরীমণি কথায় কথায় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করেন। পুলিশও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। গায়ে দামি পারফিউম মেখে বিলাসবহুল গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো পরীর মুখে মদের গন্ধ থাকলেও কেউ তাকে আটকায় না।
জানা গেছে, দেশের সব অভিজাত ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে পরীমণির বেশ ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের রেফারেন্সে তিনি বিভিন্ন ক্লাবে যাতায়াত করেন। তারকা হোটেলের বারেও তার যাতায়াতের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও তার ঘনিষ্ঠদের তালিকায় আছেন অনেক প্রভাবশালীর নাম। যাদের কেউ কেউ পরীকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশেও ঘুরতে যান।
এখানেই পরীর উশৃঙ্খলতার শেষ নয়। কয়েকটি ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকা রয়েছে তার। যার বেশিরভাগই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে পেয়েছেন। জানা গেছে, এক পর্যায়ে তিনি পর্নোগ্রাফির নিষিদ্ধ জগতে প্রবেশ করেন। ঘনিষ্ঠ মডেলদের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন একটি চক্র। যাদের কাজ হলো- উঠতি মডেল ও চিত্রনায়িকাদের পর্নোছবি তুলে সমাজের কথিত হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিদের পাঠানো। তারপর বিভিন্ন ছল-বাহানায় তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করা।
এই নায়িকা শিডিউল ফাঁসাতেও সিদ্ধহস্ত। আমার প্রেম আমার প্রিয়া, আরও ভালোবাসবো তোমায় ছবিসহ একাধিক ছবির শিডিউল ফাঁসিয়েছেন বলেও জানা যায়। অনেকেই বলেছেন পরীর শুটিং করতে ইচ্ছে না করলেই শরীর খারাপের বাহানায় শিডিউল ফাঁসাতেন। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার সখ্যতার কারণে পরিচালক-প্রযোজকরাও নায়িকার নানা অন্যায় আবদার সহ্য করতেন।