নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার প্রতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এঁর গভীর ভালবাসা ছিলো। বঙ্গমাতার সহযোগিতাই ছিলো বঙ্গবন্ধু রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি। তিনি এটাকে রশদ হিসেবে গ্রহন করতেন। তিনি সকল বিপদে আপদে বঙ্গবন্ধর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এঁর ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও অসচ্ছল নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর এই কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা বহু প্রতিভা ও গুনের অধিকারী ছিলেন। তাঁর নিকট হতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ও বেগম ফজিলাতুন নেছার কন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতি, ধর্য্য, কৌশল ও প্রতিবাদ করার শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, মাত্র তিন বছর বয়সে বঙ্গমাতার শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই তাঁর মায়ের মৃত্য হলে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেই তিনি বড় হন। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি প্রথম সন্তানের জননী হন।
বিভাগীয় কমিশানর আরো বলেন, বঙ্গমাতা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে অনেক সময় দিক নির্দেশনা দিতেন। ৭ মার্চের ভাষন কি হবে তা তিনি অনেকটাই বঙ্গবন্ধুকে বলে দিয়েছিলেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু আটক হলে থানা, পুলিশ ও জেল খানার সকল কাজ তিনি নিজেই করতেন। সেইাসথে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি, সংগঠন ও সুশিল সমাজের ব্যক্তিদের সাথে গোপনে রাজনৈতিক সভা ও বৈঠক করতেন বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, বেগম ফজিলাতুন নেছা একজন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও সাধারন জীবন যাপন করতেন। তাঁর ব্যক্তিগত কোন চাহিদা ছিলোনা। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের নিয়ে সংসার পরিচালনা করতেন।
প্রধান অতিথি বলেন, এই মহীয়সী নারী জনগণের কল্যাণে সারাজীবন অকাতরে দু:খবরণ এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাত্রিতে জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে তিনি নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেন। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের সময়ও বঙ্গবন্ধুর আজীবন সুখ-দু:খের সাথী, মৃত্যুকালেও তাঁর সঙ্গী হয়েই রইলেন। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিনে এই মহীয়সী নারীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত এবং বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির আজীবন সুখ-দুঃখের সঙ্গী এই মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন নেছার প্রতি অতিথিবৃন্দ গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন করেন।
বক্তব্য শেষে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৩০ জনকে ২০০০ করে টাকা ও ১০ জনকে ১০ টি সেলাই মেশিন প্রদান করেন তিনিসহ অতিথিবৃন্দ। এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের অর্থায়নে ৩ টি, জেলা মহিলা বিষয়ক এর পক্ষ থেকে ৭টিসহ মোট ১০ টি সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এঁর ৯১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী জেলায় সর্বমোট ৭০ টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন পিপিএম, বিপিএম, আরএমপি পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার), রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শবনম শিরিন।
এসময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ডক্টর আব্দুল মান্নান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিদ সরকারসহ বিভাগীয় কমিশনার অফিস, জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারী অফিসের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সুশিল সমাজের প্রতিনিধি, ও সাধারণ জনগণ।