এস.আর.ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-মরণের সহযাত্রী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আজীবন নিভৃতচারীর জীবন কাটানো বেগম মুজিব নেপথ্যে থেকে বঙ্গবন্ধুকে জুগিয়েছিলেন সাহস। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও তাঁর জীবন ছিল অতি সাধারণ। বেগম মুজিব যখন পান খেতেন তখন তাঁকে কোনও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী নয়, একজন আত্মত্যাগী খাঁটি বাঙালি মাতৃমূর্তিই মনে হতো।
বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নিয়ে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এই মহীয়সী নারীর সান্নিধ্য পাওয়া রাজনীতিকরা। তারা বলেছেন, সংসার চালাতে গিয়ে যাবতীয় আরাম আয়েশ ত্যাগ করেছিলেন বেগম মুজিব। সংসারের কোনও চাপই বঙ্গবন্ধুর গায়ে লাগতে দেননি। এ কারণেই দেশের মুক্তি-সংগ্রামে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। পেরেছেন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি জাতি-রাষ্ট্র উপহার দিতে।
তৎকালীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ নেতা পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান ব্যক্তিত্বের সহধর্মিণী হয়েও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবনযাপন ছিল সাদামাটা। বেশ সহজ সরল ছিলেন। কথাবার্তা ও পোশাক ছিল অতি সাধারণ। তাঁর অবিচল মাতৃমূর্তির প্রতি আমি সব সময়ই শ্রদ্ধাশীল।
বর্তমান ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কেউ দেখা করতে গেলে তিনি তাদের নাশতা না খাইয়ে আসতে দিতেন না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলেই ভেতর থেকে খবর পাঠানো হতো, নাশতা করা ছাড়া যেন না যাই।
এত বড় জাতীয় নেতা ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও ফজিলাতুন নেছা মুজিবের মধ্যে কোন চাকচিক্য চোখে পড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর মধ্যে চিরন্তন মায়ের যে রূপটি দেখেছি তাতে উনাকে ভাবি সম্বোধন করে থাকলেও মনে হতো ‘মা’ বলেই ডাকি।
সুযোগসন্ধানীরাও তাঁর এই সরলতার সুযোগ নিয়েছিল উল্লেখ করে এই বাম নেতা বলেন, তিনি সবাইকে সমাদর করতেন। উনার সরলতা ও আতিথেয়তার সুযোগ ষড়যন্ত্রকারীরাও নিয়েছে। আমি নিজে একদিন যখন টেবিলে বসে নাশতা করছি, সেখানে খন্দকার মোশতাককেও দেখেছি। তাকে দেখলাম ভাবির (বেগম মুজিব) হাতের পান খাওয়ার জন্য সে কী আবদার! মনে হয়েছিল বেগম মুজিবের অন্তর জয় করতে মরিয়া সে। নাশতার টেবিলে এসে বলে কিনা আমাকে একটি পান খেতে হবে ভাবির হাতে। ১৫ আগস্টের পর বুঝি ওই সবই ছিল মোশতাকের কূটচাল।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বব্যাপী পরম শ্রদ্ধেয় হয়ে ওঠার নেপথ্যে ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আমৃত্যু নেপথ্যে থেকে বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে বাস্তবোচিত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি বাঙালির জাতির মুক্তি-সংগ্রামকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ায় অনন্য ও ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন।
নেতাকর্মীদের বিপদেও বঙ্গমাতা তাদের পাশে দাঁড়াতেন উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, কোনও কাজে বঙ্গমাতার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিতেন। কঠিন দুঃসময়ের মধ্যেও আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আমাদের কর্মকাণ্ড সচল রেখেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দরজা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। বঙ্গমাতা সবাইকে হাসিমুখে গ্রহণ করতেন। তিনি আমাদের সন্তানের মতো যত্ন করতেন। নিজের হাতে রান্না করতেন। বঙ্গবন্ধুর সব গুছিয়ে রাখতেন।
ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ভাগ্নে, বর্তমানে জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, বেগম মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহধর্মিণী। এ রকম একজন সহধর্মিণী কোনও রাজনীতিবিদের পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই মহীয়সী নারীর কথা খুব কমই এসেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যখন কারাগারে যেতেন, তখন তাঁকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আসতেন ত্যাগস্বীকারে। নিজে একহাতে আগলে রেখেছিলেন সংসার। কারাগারে থেকেও তাই বঙ্গবন্ধুকে পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয়নি।
‘বঙ্গমাতা কেবল গৃহবধূ ছিলেন না, ছিলেন রাজনীতিবোদ্ধাও। তবে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন’- এমনটা উল্লেখ করে শেখ শহীদ বলেন, ‘তিনি জানতেন তার কর্তব্য কী। এর বাইরে যাননি তিনি। নিজের অধিকার বা প্রাপ্য নিয়েও চিন্তা করেননি। আটপৌরে শাড়ি পরতেন। অল্প দামের পোশাক গায়ে চড়ালে সেই পোশাকই দামি হয়ে যেত তাঁর ব্যক্তিত্বের জোরে।’