নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১০ আগস্ট মঙ্গলবার । পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে খুলে দেওয়া হয়েছে সবকিছু। আজ বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে চলছে সরকারি-বেসরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সকল অফিস-আদালত। সড়কে চলছে সকল প্রকার যানবাহন। নৌপথে চলছে লঞ্চ-স্টিমারসহ সকল প্রকার নৌযান। চলছে রেল-বিমানও। শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে আগেই। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেওয়া বিধিনিষেধে সংক্রমণের হার না কমলেও সরকার সবকিছু খুলে দিয়েছে।
সরকার মনে করে করোনা সংক্রমণের হার কমানোর ক্ষেত্রে এখন মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাই ভরসা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যই জানা গেছে। জানা গেছে, সরকার এখন থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বত্র টিকা দেওয়া কার্যক্রম জোরদার করছে। দেশের সর্বত্র এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৭ আগস্ট থেকে। পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে জোর দিতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে কঠোর হওয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সরকার মনে করে দীর্ঘকাল ধরে লকডাউন চলতে দেওয়া সম্ভব নয়। আবার করোনা সংক্রমণের হাত থেকে নাগরিকদেরও রক্ষা করতে হবে। তাই মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধিই এখন ভরসা। এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও কঠোর লকডাউন দেওয়া হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বার্থে সব স্টেকহোল্ডার ও মালিক-শ্রমিকের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সড়কে চলাচলের আগে গাড়ি জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করতে হবে, যাত্রীদের শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনও মূল্যে সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে বলেও এসময় তিনি জানান।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তবে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ও জীবন-জীবিকার প্রশ্নে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এরপর ঈদ উদযাপন শেষে ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৯ দিনের এ বিধিনিষেধ গতকাল (১০ আগস্ট) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।
নতুন জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, সড়ক রেল ও নৌ-পথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন যানবাহন চলাচল করতে পারবে। শপিং মল, মার্কেট, দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখা যাবে। সকল প্রকার শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া গণপরিবহন, বিভিন্ন দফতর, মার্কেট ও বাজারসহ যেকোনও প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই প্রজ্ঞাপন জারী করে সরকার লকডাউন শিথিল করে দেয়ায় রাজশাহী থেকে চলথে শুরু করেছে সকল প্রকার যানবাহন। নিয়ম করে চলতে শুরু করেছে যানবাহন। প্রথম দিনেই রাজশাহী মহানগরীর সকল রাস্তা রিক্সা ও অটোরিক্সা দখলে ছিলো। সেইসাথে রাস্তায় বসেছে নানা ধরেনের দোকান। ফলে প্রথম দিনেই একটা যানযোটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ৯০ভাগের উপরে ব্যবসয়ী ও ক্রেতাদের মাস্ক পড়তে দেখা গেছে। অবস্থায় ব্যবসায়ী ও সচেতন জনঘন সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই অবস্থা বিরাজ করলে এবং সরকারী নিদের্শনা মেনে চললে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া এবং লকডাউনের মত কঠোর বিধিনিষেধে আর পরতে হবেনা বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ফরিদ মামুদ হাসান বলেন, সরকারের নির্দেশান বাস্তবায়নে তারা কাজ করেছেন। ইতোমধ্যে তারা পঁচিশ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছেন এবং আগামীতে আরো পঞ্চাশ হাজার মাস্ক বিতরণ করবেন। এছাড়াও এক লক্ষ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, চলমান লকডাউনে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশায় চলে গেছে। ব্যবসায়ী ও জনগণের যখন এই অবস্থা ঠিক তখনই জনগণের কথা চিন্তা করে এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। এ জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকার ও সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সেইসাথে আর কোন লকডাউন নয়, ব্যবসায়ী ও জনগণকে বাঁচাতে এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভিন্ন পথ অবলম্বন করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে ঐক্য পরিষদের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, শুধু ক্রেতা বা সাধারণ জনগণের মধ্যেই মাস্ক বিতরণ নয়। প্রতিটি ব্যবসায়ীকে মাস্ক পড়ে ব্যবসা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসাথে প্রতিটি দোকানে হ্যান্ডস্যানিটাইজার রাখার কথা বলেছেন এবং নো-মাস্ক, নো সার্ভিস নীতি গ্রহন করার জন্য ব্যবসায়ীদের বলেছেন বলে জানান তিনি। করোনা থেকে বাঁচতে সকল সরকারী নির্দেশনা মেনে চলা এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পড়ার অনুরোধ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।