এস.আর.ডেস্ক: চালু হওয়ার এক যুগেরও বেশি সময় পরে বেঁধে দেওয়া হলো আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা এনটিটিএন’র সেবামূল্য (ট্যারিফ)। অপারেটরগুলো শুরুতে যে সেবামূল্য নিতো সেই হিসাবে দাম বেঁধে দেওয়ার পর বর্তমানে প্রায় ৯০ শতাংশ কম দামে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) সেবা নিতে পারবে। এই নতুন মূল্য সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ট্যারিফ ঘোষণা করে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিটিআরসি আইআইজির জন্য বিভিন্ন ভলিউমে ১১টা স্ল্যাবে ব্যান্ডউইথের দাম ও এনটিটিএনগুলোর জন্য ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটির ভলিউম অনুযায়ী, ১৫টি স্ল্যাবে সেবামূল্য বেঁধে দেওয়া হয়। বলা হচ্ছে, এটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানে আইআইজি এবং আইএসপিএদের জন্য বেসরকারি এনটিটিএন’র ব্যাকহল (ক্যাপাসিটিভিত্তিক) ট্যারিফ এছাড়া আগেই আইএসপির দাম ৩টি স্ল্যাবে (৫ এমবিপিএস ৫০০, ১০ এমবিপিএস ৮০০ টাকা এবং ২০ এমবিপিএস এক হাজার ২০০ টাকা) বেঁধে দেওয়া হয়। এর আগেও এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সেবামূল্য ছিল, কিন্তু তা কখনোই সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা একটা দাম ঠিক করে তা গ্রাহকের সামনে উপস্থাপন করতো।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এই ট্যারিফের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘এই মূল্য নির্ধারণের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের আরও এক ধাপ অগ্রগতি হলো। আজকের এই ঘোষণার ফলে সারাদেশে ‘এক দেশ এক রেট’ ইন্টারনেট বাস্তবায়ন আরও সহজ হয়ে গেলো। গত ৬ জুন ‘এক দেশ এক রেট’ ইন্টারনেট ঘোষণা দেওয়ার পরে তা বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছিল। এখন এটা আর থাকবে না।’
তিনি জানান, যে সেবামূল্য বেঁধে দেওয়া হলো, তা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য। তিনি মোবাইল অপারেটরগুলোর জন্যও আইআইজি ও এনটিটিএন’র সেবামূল্য বেঁধে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
মোবাইল অপারেটরের বিরুদ্ধে কল ড্রপ, নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে শত শত অভিযোগ আছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মন্ত্রীর সম্পৃক্ততা বেশি বলে তার কাছে সরাসরি অভিযোগ আসে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘অপারেটরগুলোকে এসব সমস্যা বুঝতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যেই আমরা ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করতে পারবো। এজন্য টেলিটক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, বিটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আল ইসলাম, আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম, আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমদে জুনায়েদ প্রমুখ।
কমিশনের এসএস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনার মাধ্যমে এনটিটিএন, আইআইজির মূল্যসেবা বেঁধে দেওয়ার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। এটা চূড়ান্ত করতে তাকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে ৫২টি বৈঠক করতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে যে সেবামূল্য ঘোষণা করা হয় তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ঘোষণার বাইরে। এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ঘোষণার আওতায় আসতে পারে। তাদের জন্য দ্বার খোলা আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আলাদা কোনও ট্যারিফ করা হয়নি। যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাদের অনেক ধরনের প্রক্রিয়া আছে এ বিষয়ে যুক্ত হওয়ার। তবু আমি তাদের আহ্বান জানাবো, তারা যেন এই ঘোষণার আওতায় চলে আসে। তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।’
অনুষ্ঠানের বাইরে জানতে চাইলে আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমদে জুনায়েদ বলেন, ‘ট্যারিফ ঠিক করে দেওয়ার ফলে সারাদেশে এখন এক দামে ব্যান্ডইউথ বিক্রি হবে। ঢাকার বাইরে একেক আইএসপি একেক দামে ব্যান্ডউইথ কিনতো। এখন থেকে এক রেটে কিনবে। ফলে তা গ্রাহকের দিকেই যাবে। গ্রাহককে সারা দেশে এক রেটে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া আইএসপিগুলোর জন্য আরও সহজ হয়ে গেলো।’