শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন

দেশে হঠাৎ করেই বেড়েছে চিনির দাম, আরও বাড়ার আশঙ্কা

  • প্রকাশ সময় রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১
  • ৩১৬ বার দেখা হয়েছে

 

এস.আর.ডেস্ক: দেশের বাজারে হঠাৎ করেই চিনির দাম বেড়ে গেছে। গত ৩ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। তিন দিন আগের ৭২ টাকার খোলা চিনি শনিবার খুচরা বাজারে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকার মধ্যে। জানা গেছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম হু হু করে বাড়ছে। ফলে দেশের বাজারেও সেই প্রভাব পড়েছে দ্রুতই।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়ায় দেশেও তার প্রভাব পড়েছে। দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার যদি দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়, তাহলে ডিউটিতে একটু ছাড় দিলে ভোক্তারা সুবিধা পেতে পারে।

শনিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মৌলভীবাজারে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৬৯০ থেকে ৩৭৫০ টাকা, প্রতিকেজি ৭৩ দশমিক ৮০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা, যা দুই মাস আগেও ছিলো ৩১০০ টাকা বস্তা, প্রতিকেজি ৬২ টাকা। সে হিসেবে দুই মাসের ব্যবধানে চিনির দাম বস্তায় বেড়েছে ৬০০ টাকা এবং কেজিতে বেড়েছে ১৩.৮০ থেকে ১৫ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা, যা তিন দিন আগেও ছিলো ৭২ টাকা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৮ থেকে ৭০ টাকা ছিল। এখন তা ৭৭ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে দেশে চিনির বড় পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারের মা ট্রেডিং কর্পোরেশনের ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, আমরা মিলগেট থেকে যে দামে কিনি তার চেয়ে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চিনির দাম বাড়তির দিকে। বর্তমানে ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি কিনছি ৩৬৮০ টাকা, বিক্রি করছি ৩৬৯০ টাকায়। বস্তায় প্রায় ৬০০ টাকা বেড়েছে।

তিনি বলেন, শুনেছি বিশ্ববাজারে চিনির দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। এ কারণে মিলগেটে দাম বেশি। আর আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি।

সূত্রাপুরের খুচরা চিনি ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ স্টোরের রিপন বলেন, আজকে ৩৭৫০ টাকায় ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি আনছি। আমাদের কেনা দাম পড়েছে ৭৫ টাকা প্রতি কেজি। এর সাথে লেবার খরচ, পরিবহন খরচ, দোকানভাড়া সব কিছু মিলিয়ে ৮০ টাকায় বিক্রি না করলে কোনো লাভ হবে না। আমরা আগের কেনা প্রতি কেজি চিনি ৭৬ টাকায় বিক্রি করছি। বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। সকাল থেকে মাত্র এক বস্তা চিনি পেয়েছি।

আদনান স্টোরের ফারুক হোসাইন বলেন, গত দুই মাস ধরে চিনির দাম বাড়ছে। আমরা এখন চিনি পাচ্ছি না। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কমে গেছে। দুই মাসের ব্যবধানে ৩১০০ টাকার এক বস্তা চিনি এখন ৩৭৫০ টাকা। মানে ৬২ টাকার এক কেজি চিনির বর্তমান দাম ৭৫ টাকা। সে হিসাবে দুই মাসের ব্যবধানে পাইকারিতে দাম বেড়েছে ১৩ টাকা। দুই মাস আগে প্রতি কেজি চিনি খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিলো ৬৫ টাকা, গত সপ্তাহ থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।

এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেশনের অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিত সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলের দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনির দামও অনেক বেড়ে গেছে। কারণ চিনি উৎপাদনে পেট্রোল ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে প্রতিটন চিনির দাম ৫৪০ ডলার হয়েছে, যেটা দুই মাস আগেও ছিলো ৩২০ ডলার। দুই মাসের ব্যবধানে চিনির দাম প্রতিটনে বেড়েছে ২২০ ডলার। আমাদের সর্বশেষ প্রতিটন চিনি কেনা আছে ৪৮০ থেকে ৪৮৫ ডলারে। এখন সেগুলো ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। সামনে যা আসবে সেগুলোর দাম ৮১ টাকা কেজি ছাড়িয়ে যাবে। তাই আমরা আশঙ্কা করছি আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে চিনির দাম বাড়ছে ভবিষ্যতে আরো দাম বাড়বে। আর সরকার যদি দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় তাহলে ডিউটিতে একটু ছাড় দিলে ভোক্তারা সুবিধা পেতে পারে।

তিনি বলেন, আমি এক কেজি চিনি কিনলে সরকার ৩০ টাকা ডিউটি পাচ্ছে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজার খুব বাড়তি। এ দাম কতো দিন থাকবে তাও জানি না। যদি ডিউটিতে যদি সরকার ছাড় দেয় তাহলে ভোক্তারা একটু সুবিধা পাবে। তবে আমরা এটা চাচ্ছি না। জনগণ যদি কিনতে পারে তাহলে সমস্যা কি। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৭৫ টাকা কেজি চিনি, সেখান থেকে ডিউটি ৩০ টাকা বাদ দিলে ৪৫ টাকা হয়। জনগণকে কি ৪৫ টাকায় চিনি খাওয়ানোর কোন দরকার আছে, যে দেশে চাল ৬০ কেজিতে বিক্রি হয়।

বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশে কয়েক হাজার ডিলার থাকলেও তারা চাহিদা মতো চিনি পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ডিলাররা লোকসানে থাকলেও বর্তমানে দেশে চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি মিলগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়া, চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব ছাড়াও ডিলার বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের কাছে চিনি বিক্রির কারণে দেশে চিনির দাম নিয়ে নতুন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে জানা গেছে, সরকার চলতি মৌসুমে ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ১ মার্চ পর্যন্ত বাকি নয়টি চিনিকলে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৬৪৮ দশমিক ৬০ টন চিনি। এছাড়া আগের মজুদ ছিল ৫৬ হাজার ৩০ দশমিক ৯১ টন। ১ মার্চ পর্যন্ত ফ্রি সেল, ডিলার ও সরকারি সংস্থার কাছে চিনি বিক্রি করা হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ৮৮৩ টন। সব মিলিয়ে সংস্থাটির কাছে বর্তমানে চিনি মজুদ আছে মাত্র ৪৮ হাজার ৭৯৬ দশমিক ৪ টন।

এর মধ্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও মিলস রেশনের জন্য সংরক্ষিত আছে ১০ হাজার ৭৯৮ টন চিনি। সব মিলিয়ে চিনি শিল্প কর্পোরেশনের বিক্রয় যোগ্য চিনি মজুদ নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৯৯৮ টনে, যা সার্বিকভাবে দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টেরা।

বিএসএফআইসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে চিনির চাহিদা গড়ে ১৫-১৭ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি মিল ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানিকৃত চিনিসহ দেড় আড়াই লাখ টন চিনি সরবরাহ করে বিএসএফআইসি। কিন্তু ছয়টি সরকারি মিল বন্দ থাকার পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় দেশে চিনির চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া বিএসএফআইসির নিজস্ব প্রায় চার হাজার ডিলারের কাছে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের পাইকারি ও খোলা বাজারে দাম বাড়ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin