নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোগান্তি আর হয়রানির অপর নাম রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস। অভিযোগের শেষ নাই এই অফিসের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন কাজ নিয়ে ভোগান্তির শিকাড় হচ্ছেন শিক্ষকরা। নানা অনিয়ম আর দূর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দপ্তরটি। এরই মধ্যে অত্র দপ্তরের পরিচালক ও সহকারী পরিচালককে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেছেন একটি কলেজের ভুক্তভোগী একজন অধ্যক্ষ।
তিনজন কর্মকর্তার নিকট দপ্তরটি এখন জিম্মি হয়ে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মকর্তারা হলেন পরিচালক কামাল হোসেন, সহকারী পরিচালক আবু রেজা আজাদ, সহকারী প্রোগ্রামার ডলি রানী পাল।
লিগ্যাল নোটিশের বিষয়ে জানতে গিয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, এই দপ্তরটিতে ভোগান্তির শেষ নাই। করোনাকালীন প্রণোদনা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। ফাইল ছাড়তে লাগে মোটা অংকের উৎকোচ। প্রতিটি ফাইল বিনাকারণে করা হয় রিজেক্ট। উৎকোচ দিলে ফাইল রিজেক্ট হয় না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ভোগান্তির চরম বিড়ম্বনা শেষে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা ভবন (কলেজ) শাখার পরিচালক ও সহকারী পরিচালকে। ১৫ কর্মদিবসের মাধ্যমে উক্ত নোটিশে জবাব চাওয়া হয়। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে- যথারীতি নিময় মাফিক জামবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শূন্য পদে গত ২৫ জানুয়ারী ২০১৮ ইং তারিখে দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। সেই নিয়োগে ১০ জুন ২০১৮ ইং তারিখে অধ্যক্ষ পদে শাহাবুদ্দিন চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পান।
গত ৮ অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখ বিধি মোতাবেক তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক পুর্বানুমতি পায়। এরপর কলেজ কতৃপক্ষ ৯ অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখে শাহাবুদ্দিনকে অধ্যক্ষের নিয়োগপত্র দেন। পূর্বের কলেজ থেকে ১০অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখে দায়মুক্তি ছাড়পত্র নিয়ে ১১অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখে জামবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। উক্ত নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী সংগঠিত হয়েছে।
ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ ” বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ প্রনয়ণ করেন যা বিগত ১২ জুন ১৮ ইং তারিখে। এই নতুন বিধির ১১.১৭ নং অনুচ্ছেদে এই নীতিমালা বর্ণিত প্যার্টনভুক্ত শূন্যপদ এমপিও ভুক্ত হতে পারবেন” উল্লেখ করে বিধান রাখা হয়। বিগত ১৩ জানুয়ারী ২০২১ ইং তারিখের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (যার স্মারক নং ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৩১.০০২.২০.৩৭) এর মাধ্যমে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারির পূর্বে নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়ে ১২ জুন ২০১৮ তারিখের পরে অবশিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এমন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারী এমপিও ভুক্ত করার জন্য স্ব স্ব অঞ্চলকে নির্দেশ প্রদান করেন।
সর্বশেষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ গত ২৮ শে মার্চ, ২০২১ প্রকাশিত হয়। এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ধারা ১১.২৭ এর আলোকে অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন সংশ্লিষ্ট কাগজ পত্রাদিসহ গত ৪৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে অধ্যক্ষ শুন্য পদে এমপিও ভুক্তির জন্য অনলাইনসহ পরিচালক বরাবর আবেদন করলে তা রিজেক্ট করে দেন। কোন কারণ ছাড়াই কেন তা রিজেক্ট করলেন এবিষয়ে পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদকে নোটিশ প্রদান করেন তিনি।
নোটিশে আরো উল্লেখ আছে যে, উভয় (পরিচালক ও সহকারী পরিচালক) পরস্পর যোগসাজসে গত ১০ মে ২১ ইং তারিখে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ ছাড়াই আবেদনটি রিজেক্ট করেন। রিজেক্টের যে সকল কারণ উল্লেখ করা হয় তার সঠিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে নয়। তবুও অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন এই সম্পর্কিত কারণের ব্যাখা ও যথাযথ কাগজপত্রাদি দিয়ে পূণরায় আবেদন করেন। কিন্তু সেগুলো পর্যালোচনা না করেই পরিচালক ও সহকারী পরিচালক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তা আবার রিজেক্ট করেন।
পরিচালক ও সহকারী পরিচালক ভুল ব্যাখা দিয়ে রিজেক্ট কপিতে তুলে ধরেন। রিজেক্ট কপিতে যোগদানের তারিখ ১১ জুন ২০১৮ বলে লিখা হয়, অথচ শাহাবুদ্দিন যোগদান করেন ১১ অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখে। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক নিয়োগ অনুমোদন হয় ৮ অক্টোবর ১৮ ইং তারিখে অথচ রিজেক্ট কপিতে ১৭ অক্টোবর ১৮ উল্লেখ করে রিজেক্ট করা হয়। যা উক্ত দপ্তরটির পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের চরম অদক্ষতা।
গত ১০ অক্টোবর ১৮ ইং তারিখের পরিচালকের চাহিদা মোতাবেক দায়মুক্তি ও ছাড়পত্র দেওয়া সত্বেও জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১১.১৭ নং অনুচ্ছেদ ও জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১১.২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন এমপিও পাইতে হকদার হওয়া সত্বেও পরিচালক ও সহকারী পরিচালক ২০২১ এমপিও নীতিমালা ১২ (ক) অনুচ্ছেদ না থাকা সত্বেও উল্লেখ করে তার এমপিও ভুক্তিটি রিজেক্ট করেন। যা অদক্ষতা ও দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে,,মাউশির পরিষ্কার নির্দেশনা থাকা সত্বেও একমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনা আবারও চাহিয়াছেন যাহা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সমূহের পরিপন্থী। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, দপ্তরটি সকল কাজের ফাইল পাস হয় দপ্তরটির তিনজনের নেতৃত্বে। প্রতিটি ফাইলের টাকা লেনদেন হয় সহকারী প্রোগ্রামার ডলি রানী পালের মাধ্যমে।
অভিযোগ কারী অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, পরিচালকের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজাদি দেওয়া সত্বেও তাহা উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করিয়া সম্পুর্ণ বিদ্বেষ মুলক ও বে আইনীভাবে আমাকে এমপিও ভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করিয়া রিজেক্ট করেন। যাহা পরিচালকের ক্ষমতার অপব্যবহার মাত্র।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিক বার পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেনকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। এ কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি তাকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করে বলেন, পরিচালক ঠিকমত অফিস করেন না।
অফিসের নিচে আসতেই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কয়েকজন শিক্ষক এগিয়ে এসে বলেন, ভাই এই দপ্তরটির নানা অনিয়ম দুর্নীতি আখড়া হয়ে উঠেছে। এখানে টাকা ছাড়া কোন ফাইল পাস হয় না। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান শিক্ষকরা।