নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে তানোর উপজেলায় এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর নিজের এলাকা তানোরের কলমা ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। সেখানে চেয়ারম্যান হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুই উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং ৫টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন।
গত বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের পর রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। গোদাগাড়ীতে বিজয়ী নৌকার প্রার্থীরা হলেন- গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়নে মাসিদুল গণি মাসুদ, মোহনপুরে খায়রুল ইসলাম, রিশিকুলে শহিদুল ইসলাম টুলু, গোগ্রামে মজিবর রহমান, পাকড়ীতে জালাল উদ্দিন মাস্টার ও দেওপাড়ায় বেলাল উদ্দিন সোহেল। এ উপজেলায় বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- মাটিকাটায় সোহেল রানা, চর আষাড়িয়াদহে আশরাফুল আলম এবং বাসুদেবপুরে নজরুল ইসলাম। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছিলেন।
তানোরে বিজয়ী নৌকার প্রার্থীরা হলেন- কামারগাঁঁঁও ইউনিয়নে ফজলে রাব্বী, বাঁধাইড়ে আতাউর রহমান, পাঁচন্দরে আবদুল মতিন ও চান্দুড়িয়ায় মজিবর রহমান। এ উপজেলায় বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- কলমায় খাদেমুন্নবী চৌধুরী বাবু ও তালন্দে নাজিম উদ্দিন বাবু। তাঁরাও সবাই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছিলেন।
এদিকে কলমা ইউনিয়নের ভোটার স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া খাদেমুন্নবী চৌধুরী বাবু উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। কলমায় দলীয় প্রার্থী ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন। বাবু ভোট পেয়েছেন ১২ হাজার ৭৬৬টি। আর স্বপন পেয়েছেন ৭ হাজার ২৫৬টি। জেলহত্যা দিবসের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে কলমায় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বাঘকে (বাবু) ভোটের মাঠে বিড়াল বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ তবে বাবুই নৌকার প্রার্থীর চেয়ে ৫ হাজার ৫১০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আজন্ম আওয়ামী লীগ নেতা। এলাকায় ভীষণ জনপ্রিয়ও বলে জানা গেছে।
তবে গোদাগাড়ী উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ভোটের ফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। রিশিকুল ইউনিয়নের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুখলেসুর রহমান মুকুল ও গোগ্রাম ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী হযরত আলী এ অভিযোগ তুলেছেন। মুকুল আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছিলেন। আর সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। গোদাগাড়ীর এ দুটি ইউনিয়নের ভোটের ফল ঘোষণা করা হয়েছে গভীর রাতে।
রিশিকুলের পরাজিত প্রার্থী মুখলেসুর রহমান বলেন, ১০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। ১০টি কেন্দ্রেরই প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষর করে তাঁকে ফলাফল শিট দিয়েছেন। এতে তিনি ৭ হাজার ২২ ভোট পেয়েছেন। আর নৌকার প্রার্থী টুলু পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৪৮ ভোট। কিন্তু উপজেলা পরিষদে গিয়ে ভোটের ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁকে ফেল করিয়ে নৌকার প্রার্থীকে পাস করানো হয়েছে। এদিকে রিশিকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল রানা বৃহস্পতিবার রাতেই জানান টুলু ৯১২ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এছাড়াও তার নিকটতম আরেক কর্মী মাহবুব ফেল করা বিষয়টি নিশ্চিৎ করেন। এছাড়াও পুরো রিশিকুলবাসী মুকুলের বিজয়টি নিশ্চিৎ জানেন।
একই অভিযোগ গোগ্রামের স্বতন্ত্র প্রার্থী হযরত আলীর। তিনি জানান, ১০টি কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর করা ফলাফল শিট অনুযায়ী তিনি আনারস প্রতীকে ৯ হাজার ৮৩৫ ভোট পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর চেয়ে ৫১৪ ভোট বেশি পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদে ফলাফল নেওয়ার পর আর ঘোষণা করা হচ্ছিল না। শেষে রাত ১টার দিকে তাঁকে ২৬ ভোটে পরাজিত ঘোষণা করা হয়। আর পাস দেখানো হয় বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী মজিবর রহমানকে।
১০ কেন্দ্রের ফলাফল শিট হাতে পাওয়ার পর সমর্থকেরা হযরতের গলায় ফুলের মালাও পরিয়েছিলেন। কিন্তু ফলাফল ঘোষণায় দেরি দেখে কয়েক শো সমর্থক উপজেলা পরিষদে যান। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা তাঁর গলায় থাকেনি। হযরত বলেন, ফরাদপুর সবুজ সংঘ ক্লাব কেন্দ্রের ফলাফলটি শুধু পাল্টে তাঁকে পরাজিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে আইনের আশ্রয় নেবেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ফরাদপুর সবুজ সংঘ ক্লাব ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এইচএম মোকসেদুল হাসান। তবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেছেন, পরাজিত হলে প্রার্থীরা এ ধরনের অভিযোগ করেন। আসলে অভিযোগ সঠিক নয়। দুই ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণায় দেরি হবার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুজন প্রার্থী ভুয়া ফলাফল শিট এনেছিলেন। তখন ঐ দুই ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে ডেকে ফলাফল শিট যাচাই করা হয়। এ কারণে ফলাফল ঘোষণায় একটু দেরি হয়েছে।