নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলায় এক বছরে ৩ হাজার ৬৪১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগরীতে ১ হাজার ৪৩৬ জন। আর জেলার ৯ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২০৫ জন। রোববার বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) জেলা শাখার এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত নগরীর একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলন কক্ষে রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়, এক লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করলে এখন গড়ে প্রায় ২২১ জনের যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত হচ্ছে। দেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৬০ হাজার যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিবছর এ রোগে প্রায় ৪৪ হাজার রোগী মারা যায়। মৃত্যুর এই হিসাব করোনার মৃত্যুর চেয়েও বেশি। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ৬ মাস নিয়ম করে ওষুধ খেলেই যক্ষ্মা ভাল হয় বলে সভা থেকে জানানো হয়।
সভায় আরও জানানো হয়, একজন যক্ষ্মা রোগী আরও ১০ জনকে আক্রান্ত করতে পারে। হাঁচি, কাশি, কথ ও থুথু থেকে এই রোগ ছড়ায়। তাই যক্ষ্মা হলে জনসমাগম এড়িয়ে চলাসহ মাস্ক। ব্যবহার করার পারমর্শ দেন তারা। বর্তমানে রাজশাহীতে ব্র্যাক, রিক, তিলোত্তমা ও ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন যক্ষা নিরাময় নিয়ে কাজ করছে। তারা বিনামূল্যে যক্ষ্মার পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাও পাওয়া যায় বিনাপয়সায়। তাই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি হলে যক্ষ্মার পরীক্ষা করাতে হবে। যক্ষ্মা রোগের ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন হতে হবে বলে উল্লেখ করেন অতিথিবৃন্দ।
সভায় জানানো হয়, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে যক্ষ্মার সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে যাদের পরীক্ষা করা হয় তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। এখন কারা হাসপাতালে আটজন যক্ষ্মা রোগী আছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে এক লাখ নমুনা পরীক্ষার মধ্যে যক্ষ্মা পজিটিভ রোগী ২২ জনে নামানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। বছরে যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও মাত্র ২১৪ জনে নামানোর চেষ্টা চলছে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক। তিনি বলেন, রাজশাহীতে যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বিভাগের অন্য জেলার চেয়ে ভাল চলছে। যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা থেকে চিকিৎসা পর্যন্ত সবই বিনাপয়সায় করা হয়। রোগী গরীব হলে তাঁর যাতায়াতের ভাড়াটাও দেওয়া হয়। তাই দুই সপ্তাহের বেশি সময় কাশি, ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যহানি ঘটা কিংবা বিকেল থেকে জ্বর এসে রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে যক্ষ্মার পরীক্ষা করার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।
নাটাবের রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহানুল হক মুন এর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার আব্দুর রব সিদ্দিকী ও বেসরকারী সংস্থা ব্রাকের প্রোগ্রাম অফিসার রফিকুল ইসলামসহ প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স ও অনলাইন পোর্টালের গণমাধ্যাম কর্মীগণ।