নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ সন্ত্রাস ও জনগণের জানমালের ক্ষতি করলে আইনশৃংখলা বাহিনী বসে থাকবে না। বিএনপি বা জামায়াত-শিবির বলে কথা নেই।
বিশৃংখলাকারী যেই হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর হাতে দমন করা হবে। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। তাই দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর বাঘায় নবনির্মিত আনসার-ভিডিপি কার্যালয় ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান খান এসব কথা বলেন।
আনসার বাহিনীর অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আনসার সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৪ সালে আগুন সন্ত্রাসের সময় তারা বীরত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। পুলিশের পাশাপাশি তারাও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচন ও পূজা উদযাপনে তারাই অধিক দায়িত্ব পালন করে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমান সরকার এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। আর সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারাও এ ধরনের হত্যা সমর্থন করে না।
সীমান্ত এলাকায় অবাধ বিচরণের বিষয়টি খেয়াল রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে ভারত অনুরোধ করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার সেদিকেও নজর রাখছে। সীমান্তে সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে পতাকা বৈঠক হচ্ছে। এছাড়া দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট নিরসনে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক একেএম সাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে চলতি বছরের ১৮ মে রাজশাহীর এই বাঘা উপজেলা পরিষদ চত্বরে ১ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের উপজেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয়ের দ্বিতল ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ ৭০ হাজার ১৬৫ টাকা।
এদিকে বুধবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তাঁর ডাকে সকল ধর্মের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আজকের বাংলাদেশের মাটি মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবার রক্তে রঞ্জিত।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা এমনি-এমনি আসেনি, এর পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তানিদের দুর্বিষহ অত্যাচার-নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমরা তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তা করিনি, নিজের জীবন নিয়ে ভাবিনি, আমাদের একটাই চিন্তা ছিল- দেশ স্বাধীন করতে হবে। সেই সময়টা আমাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। আমরা পায়ে হেঁটে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দূর-দুরান্তে খবর পৌঁছে দিয়েছি। এজন্য অনেক সময় অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আজকের প্রজন্ম বিশ্বাসই করতে পারেনা, তরুণ প্রজন্মকে এসব জানাতে হবে।
একটা সময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির পাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, কীভাবে আমরা যুদ্ধ করেছি, কোথা থেকে সাহায্য পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদেরকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে পতাকা উড়তে দেখেছি এবং ইতিহাস বিকৃত হতে দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধারা তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে না ধরলে তাদের অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে।
তরুণ প্রজন্মকে একটি সুন্দর কলঙ্কমুক্ত দেশ উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, যতটুকু কলঙ্কিত ইতিহাস ছিল, সেটুকু ধুয়ে-মুছে নতুন প্রজন্মকে একটি সুন্দর দেশ উপহার দিতে চাই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, সবাই শিক্ষা পাবে, স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনকে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন, শিক্ষার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তাই করছেন। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন- যার কারণে কোভিড টিকাদানে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম হয়েছে।
শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখন আকাশ্চুম্বী মন্তব্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যতদিন থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশ আলোকিত থাকবে। তাঁর আমলে বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। এ সময় জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে তিনি বলেন, এবারের অনুষ্ঠানটি একটু ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এবার তাঁদের শুধু সংবর্ধনা নয়, পাশাপাশি স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অনীল কুমার সরকার বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ আবু হাসান মোহাম্মদ তারিক, আরএমপি’র কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান, জেলার মুক্তিযোদ্ধাগণ, প্রশাসন ও বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক সুস্থতার লক্ষ্যে মাসব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কর্নার পরিদর্শন করেন।