নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার আকুবাড়ি গ্রামে প্রতিপক্ষের লোকজন জমিতে কেটে রাখা পাকা আমন ধান লুটের চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে হামলা করে গুরুতর আহত করে তারা। ঐ সকল সন্ত্রাসী হামলাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তির দাবিতে নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে ভূক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে নগরীর রেলগেট এলাকায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের আকুবাড়ি গ্রামের প্রতিপক্ষের হামলায় আহত কামরুজ্জামান জনির স্ত্রী শাহিনুর আক্তার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তার শ^শুর মৃত. রুপবান প্রামানিক গত ৫৩ বছর আগে ১৩০ নং আকুবাড়ি মৌজায় ৪৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেছিলেন। যার মৌজা আকুবাড়ি, জে.এল নং সাবেক-৩২৯, সিএস দাগ নং-৭২, এস.এ দাগ নং-৭১, সাবেক দাগ নং-৮০২, হাল দাগ নং-৯১৭, জমির পরিমান .৪৭ শতাংশ। তিনি বেঁচে থাকাকালীন সেই জমি চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, গত ৩ বছর আগে তার স্বামী কামরুজ্জামানসহ ওয়ারিশরা সেই জমিতে ধান রোপণ করেন। তখন ধান আধাপাকা অবস্থাতেই প্রতিপক্ষের লোকজন আহচান মন্ডলের নেতৃত্বে জোর করে কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তারা বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেয়। পরে স্থানীয় ৪নং মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি জানানো হয়। তারা দুই পক্ষ নিয়ে বসেন। কিন্ত বিষয়টি স্থানীয়ভাবে অমীমাংসিত থেকে যায়। এরপর থেকে তিন বছরে সব মিলিয়ে বিবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে ১১/১২টি অভিযোগ ও মামলা করেন। তাদের হামলা-মামলায় আমাদের গ্রামে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন মোহনপুর থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন তদন্তপূর্বক জেলা রাজশাহীর অতিঃ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলার প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, মৃত রুপবান প্রামানিকের নামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ আছে। জমিটি তার নামে প্রচলিত আছে। তাদের সব কাগজ থাকার পরেও ভূমি দস্যুরা জোরপূর্বক তাদের জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, গত ২১ নভেম্বর বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে তাদের জমিতে কেটে রাখা পাকা আমন ধান আকুবাড়ি গ্রামের আলিমুদ্দীন ওরফে ভোদার ছেলে মিলন (২৯), আলিমুদ্দীন (ভোদা), আহচানের ছেলে বেলাল (৩৬), মৃত নসিরুদ্দীনের ছেলে নাজিমুদ্দীন (৫৫), বেলালের ছেলে শিহাব (১৮), নাজিমুদ্দীনের ছেলে রায়হান রায়হান ওরফে বাবু ও আজিমুদ্দীনের ছেলে কামরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র (হাসুয়া, কোদাল, রড এবং কাস্তেসহ) এসে জোরপূর্বক জমির ধান তুলে নিয়ে যাচ্ছিল।
লোখমুখে বিষয়টি জানার পর তার মেজ জা রেবেকা, তার স্বামী কামরুজ্জামান জনি, ভাসুরের ছেলে মাহফুজুর রহমান ও মেজ ভাসুর আতাউর রহমান জমিতে যাওয়ার পথে রিয়াজের বাড়ির সামনে পৌঁছালে প্রতিপক্ষরা কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই দেখামাত্র আমাদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। তারা হামলা করে রেবেকা, কামরুজ্জামান জনি, মাহফুজুর রহমান ও আতাউর রহমানকে আহত করে। তাদের হামলায় লোকজন আহত হয়ে মাটিতে পড়ে ছিল বলে উল্লেখ করেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় প্রতিবেশীরা এসে তাদের আহত লোকজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ৩ জন ছাড়া পেলেও বাকি ১ জন তার ভাসুরের ছেলে মাহফুজ এখনও অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হওয়ার পর থেকে তিনি কথা বলতে পারছেনা। চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন। তারা উল্টো তাদের নামে থানায় অভিযোগ করেছেন।
ঘটনার পর থেকে সবাই বাড়ি ছাড়া। এ অবস্থায় তারা মানষিক আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। সেইসাথে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি। এ সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন, আফরোজা খাতুন সন্ধ্যাসহ পরিবারের অন্যান্য লোকজন। এ বিষয়ে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হরিদাস মন্ডল বলেন, থানায় লিখিত অভিযোগ করে থাকলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।