রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
অসুস্থ রোগীর পাশে শিল্পপতি আব্দুস সাত্তার টিম বিল্ডিং এবং সেফগার্ডিং ও শিশু সুরক্ষার বিষয়ে ইউসেপ রাজশাহী অঞ্চলে কর্মশালা অনুষ্ঠিত রাজশাহী ন্যাশনার হার্ট ফাউন্ডেশনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচেন মান্নান, খোকন, হাসেন আলী পরিষদের নিরঙ্কুশ বিজয় ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে মহানগর যুবদলের প্রতিবাদ ও সংহতি র‌্যালি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ রাজশাহী মহানগর ও জেলা শাখার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কাঁকনহাটে চাঁদা না পেয়ে সরকারী কাজে বাধার অভিযোগ দাম বেড়েছে সবজির, স্থিতিশীল গোস্তের বাজার কোকো সব কিছু বাদ দিয়ে ক্রীড়াজগৎটাকে বেছে নিয়েছিলেন: মিলন শ্রমিকরাই দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি:ঈশা অসুস্থ বিএনপি নেতার পাশে বিএনপি নেতা দুলু

দশ বছর ধরে ‘মিথ্যা’ মামলার ঘানি টানছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর, প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা

  • প্রকাশ সময় শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১০৪ বার দেখা হয়েছে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ১০ বছর ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের এক মামলার ঘানি টানছেন। মামলার হাজিরা দিতে দিতে তিনি এখন ক্লান্ত। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দাবি, মামলাটি মিথ্যা। জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় শত্রুতা করে একই গ্রামের এক মাদক কারবারি তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। তিনি এ মামলা থেকে মুক্তি চান। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম মনজুর রহমান (৭০)। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার সাবেক সহকারী কমান্ডার (ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক)। ‘মিথ্যা’ মামলা থেকে মুক্তির আকুতি জানিয়ে শনিবার দুপুরে তিনি রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যাবার জন্য ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বাসে চড়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন। বাসে তার পেছন দিকে বসেছিলেন একই গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। তার কাছে একটি বড় ট্রাভেল ব্যাগ ছিল। বাসটি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে সাদাপোশাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাঁচজন সদস্য গাড়িটির গতিরোধ করেন। এরপর একজন লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তি গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। ওই ব্যক্তিটি ছিলেন দালাল। তিনি সরাসরি মনজুর রহমানের সামনে এগিয়ে দাঁড়ান এবং ট্রাভেল ব্যাগ খুলে তন্ন তন্ন করে খোঁজেন। কিন্তুব্যাগে কাগজপত্র ছাড়া কিছুই পাননি। এরপর বাসের পেছন দিকে বসে থাকা রবিউলের ব্যাগ তল্লাশি করলে ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এ সময় রবিউলকে গাড়ির ভেতর থেকে নিচে নামানো হয়। পরে ওই দালাল বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর রহমানকেও বাস থেকে নামিয়ে আনেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর রহমান বলেন, ‘এই ফেনসিডিলের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। কিন্তু রবিউলের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় কারণে রবিউল সুযোগ নিয়ে তাঁকেও ফাঁসিয়ে দেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিসারদের নিকট নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেন। দেশকে ভালবেসে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ক্ষতি করতে অবৈধ ব্যবসা করতে তিনি পারেন না। তিনি আরো বলেন, অফিসারদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত সনদপত্রের ফটোকপি দেখান। কিন্তু একজন উপ-পরিদর্শক পদের অফিসর সনদপত্রটি পড়ে তাৎক্ষণিকভাবে টুকরো টুকরো ছিঁড়ে ফেলে দেন। আর রেগে গিয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাম শুনলে তার মাথায় রক্ত উঠে যায়।”

মনজুর রহমান জানান, সেদিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা তার প্যান্টের পকেট থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। তাঁকে মামলায় না জড়ানোর অনুরোধ করলে তারা তাঁর নিক হতে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিতে পারার কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন উৎসাহী হয়ে তাঁকে মামলায় জড়ান।

তিনি বলেন, ‘রবিউলের ব্যাগে মোট ৬০ বোতল ফেনসিডিল ছিল। তাঁকে মামলায় জড়াতে অধিদপ্তরের লোকেরাই তাদের কাভার্ড ভ্যান থেকে দুটি ব্যাগ আনে। দুই ব্যাগেই ২৫টি করে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে তাঁর আর রবিউলের কাছে ব্যাগ দুটি পাওয়া গেছে দেখিয়ে মামলা করে। আর ১০টি ফেনসিডিল দেওয়া হয় ওই দালালকে। ওই সময় তাঁর নিকট হতে কেড়ে নেওয়া টাকা তিনি ফেরত পাননি বলে জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০২০ সালে আসামি রবিউল ইসলাম মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, সেদিন তাঁকে ও রবিউলকে দুপুরে নগরীর মতিহার থানায় সোপর্দ করেন মাদকদ্রব্যের কর্মকর্তারা। পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। তিনমাস হাজতে থাকার পর তিনি জামিনে বের হন। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাটি রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে চলমান। যার মামলা নম্বর-৪৯৯। ২০১৪ থেকে ২০২৪- এই দশ বছরে হাজিরা দিতে দিতে তিনি নিঃশ^-সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। এই মামলার কারণে বৃদ্ধ বয়সে তিনি সামাজিকভাবে প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। তিনি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান।

মনজুর রহমান আরো বলেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য অস্ত্র তুলে নিয়ে তিনি ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান ও ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করে জীবন বাজি রেখে। সেই দেশে ১০ বছর ধরে তাকেই মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এই মিথ্যা মামলা থাকার কারণে লজ্জায় তাঁর আত্মহত্যা করার ইচ্ছে করে। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে তা তিনি পারেন না।’

মনজুর রহমান সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট তাঁর কষ্টের কথা পৌঁছালে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন। তিনি তাঁর নির্বাহী আদেশের বলে এই মামলা থেকে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করবেন। তাহলে তিনি আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবেন। তা না হলে কষ্ট নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে বওে উল্লেখ করেন তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin