শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

গোদাগাড়ীর সুন্দরপুর গণপাঠশালা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুস্কৃতিকারীদের তালা, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত

  • প্রকাশ সময় রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
  • ৩৭ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে সুন্দরপুর গণপাঠশালা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। ২০০২সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে সময়ে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় সুন্দরপুর গণপাঠশালা। ২০১৩সালে সুন্দরপুর গণপাঠশালার সাথে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামটি যুক্ত করা হয়। অত্র বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১৪ জনের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টি মোট পঁচিশ শতক জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত। যার মৌজা সুন্দরপুর, জে.এল.নং- ১১৩, দাগ নং-২১১, খতিয়ান নং-১৩১০, শ্রেণী-ধানী।

২০০২ সালে সুফল হাঁসদা নামে জনৈক ব্যক্তি ঐ সম্পত্তি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। এরপর অত্র সম্পত্তি বিদ্যালয়ের নামে নামজারী করত: হালসন নাগাদ খাজনা প্রদান করা রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে সুফল হাঁসদার ওয়ারিশ দাবীদার মন্টু হাঁসদা বাঁশের লাঠি হাতে করে নিয়ে শনিবার রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের রুম সমুহে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময়ে স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসলেও তাদের রুমে প্রবেশ করতে দেননি মন্টু। এমনটাই বলছিলেন সুন্দরপুর গণপাঠশালা ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি সামসন হাঁসদা।

বিষয়টি কাঁকনহাট পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কল্লোল মোল্লা ও পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে অবহিত করলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ স্কুলে আসেন এবং মন্টুকে দ্রুত এসে তালা খুলতে বললে মন্টু এসে তালা খুলে দেন। এ সময় পর্যন্ত স্কুল কক্ষে প্রবেশ করতে না পেরে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের বারান্দায় ক্লাস করানো শুরু করেন বলে জানান সামসন হাঁসদা।

সামসন হাঁসদা আরো বলেন, এই বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ এবং শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য স্কুল কমিটি আবেদন করেছেন। এই কমিটিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির আরেকটি গ্রুফ মানতে না পেরে তারা স্কুল বন্ধ করে দেয়ার জন্য পাঁয়তারা শুরু করেছে। এই গ্রুফে কারা আছেন জানতে চাইলে সামসন বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির এক নেতা কাঁকনহাট পৌরসভার সুন্দরপুর গ্রামের নন্দলাল টুডু, জয়কৃষ্টপুর গ্রামের সাহেব হেম্ব্রম এর ছেলে লালন হেম্ব্রম, সুন্দরপুর গ্রামের মঙ্গলা হাঁসদার ছেলে বিপ্লব হাঁসদা, পাঁচগাছিয়া গ্রামের সাহেব হাঁসদার ছেলে বাবলু হাঁসদা , সুন্দরপুর গ্রামের বয়লা মার্ডীর ছেলে সুখিলাল মার্ডী ও সুন্দরপুর গ্রামের ঠাকুর হাঁসদা।

তিনি বলেন, উপরোক্ত ঐ ব্যক্তিরা স্কুল যাতে সরকারী না হয় এবং শিশু কল্যাণ ট্রাস্টে যেন কোনভাবেই অন্তর্ভূক্ত না হয় এবং স্কুলের শিক্ষকরা যেন কোনদিন বেতন ভাতা না পায় সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। কিন্তু এই আশা তাদের কোনদিন পুরন হবেনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর কল্লোল মোল্লা বলেন, স্কুল রুমে তালা মেরে মন্টু গংরা অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছে। তিনি বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিক পুলিশকে জানান এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার কথা বললে পুলিশ দ্রুত স্কুলে যান এবং রুমগুলো খোলার নির্দেশনা দেন। এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আগামীতে আরো কোন সহযোগিতা চাইলে তিনি করবেন বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে স্কুলের শিক্ষক লুচিয়ান্না সরেন বলেন, সুফল হাঁসদা বেঁচে থাকতে কোনদিন তার ওয়ারিশগণ এই বিদ্যালয়ের জমি দাবী করেননি। কিন্তু এখন মন্টু, নন্দলাল ও বিপ্লব গংদের প্ররোচনায় স্কুলের জমি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন জানান প্রধান শিক্ষক।

এছাড়াও অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুচিয়া সরেন, স্যানোমিনা হাঁসদা, রওশন আকতার বানু, এলিজাবেদ মুর্মু ও অফিস সহকারী আগাতা হেম্ব্রম বলেন, স্কুলটিতে তারা খেয়ে না খেয়ে পাঠদান ও সেবা প্রদান করে আসছেন। তারা বিগত দুই বছর ধরে কোন বেতন পান না। এরপরেও তারা শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছেন। এখন সামনে একটু সুদিন দেখতে পাচ্ছেন। এই বিষয়টি মন্টু, বিপ্লব ও নন্দলালগংরা মেনে নিতে না পেরে স্কুল নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। শতশত শিশুর শিক্ষাগ্রহন থেকে বঞ্চিত করতেই তারা এই ধরনের ষড়যন্ত্র করছে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। এই ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিয়ে স্কুলটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

স্কুলে কেন তালা লাগানো বিষয়ে জানতে চাইলে মন্টু হাঁসদা বলেন, ঐ স্কুলের জমিটি তাদের। তার বাবা কোনদিন স্কুলের নামে ঐ জমি লিখে দেননি। জমিটি জাল দলিল করে স্কুলের নামে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে তিনি এ নিয়ে মামলা করেননি বলে উল্লেখ করেন। এবিষয়ে নন্দলাল টুডু বলেন, স্কুলে তালা লাগানো বিষয়ে তিনি কোন কিছু জানতেন না। পরে জেনেছেন। তবে এই বিদ্যালয় শিশু কল্যাণ টাষ্টে যাক তিনিসহ তার সহযোগিরা চান না। এই বিদ্যালয় আদিবাসী হিসেবেই চলবে বলে জানান তারা। সেইসাথে চলমান কমিটি তারা মানেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin