নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী’ এই ক্যাটাগরীতে তৃতীয় লিঙ্গের মহিন (মোহনা) জয়িতা অন্বেশণে বাংলাদেশ কার্যক্রমের আওতায় রাজশাহী বিভাগের সেরা পাঁচ জনের মধ্যে একজন হয়েছেন। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিটি বিভিন্ন জয়িতার প্রামাণ্যচিত্র দেখে তাদের সফলতা ও অতিতের কষ্টের বিষয়টি চিন্তা করে দশ জনের মধ্যে থেকে পাঁচ জনকে নির্বাচিত করে। তারই একজন মোহনা। তিনি দিনের আলো হিজরা উন্নয়ন মহিলা সংস্থার সভাপতি।
মোহনার জীবনবৃত্তান্ত থেকে জানা যায় মোহ ১৯৮৫ সালের ৯ মার্চ রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানাধীন ছোটবনগ্রাম এলাকায় এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার যখন ১১ বছর বয়স তখন তার হিজড়া হবার বিষয়টি সকলের সামনে আসে। ফলে তিনি তার পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীদের নিকট ব্রাত্য হয়ে পড়েন। তিনি বিদ্যালয়েও যেতে পারতেন না। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। এমতাবস্থায় নৈশ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস করেন। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত একটি এনজিও-তে খুবই সামান্য বেতনে চাকুরী করেন। পাশাপাশি দিনের আলো হিজরা উন্নয়ন মহিলা সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
২০১১ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি কর্মহীন ছিলেন। হিজড়া বলে কেউ তাকে কাজ দিত না। আত্মীয় স্বজনও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তার মা লুকিয়ে তাকে খাবার দিতেন বলে ভাইয়েরা তার মাকেও বাড়ি ছাড়া করেন। ২০১৪ সালে তিনি দিনের আলো হিজরা উন্নয়ন মহিলা সমিতির সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তিনি সমাজে তার মত যে সকল মানুষ রয়েছেন তাদের উন্নয়নের জন্য আত্মনিয়োগ করেন। হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তাদের পরিচিত গণ্ডির বাইরে এনে সমাজের মুলধারায় সংযুক্ত করার জন্য তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
সেইসাথে উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠিত হতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেন। হিজড়াদের আইনগত প্রাপ্তির লক্ষ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। বিভিন্ন দুর্যোগের সময় তিনি দুর্যোগ কবলিত মানুষের সাথে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করেন। পরিবেশ রক্ষায় ফলজ ও বনজ গাছ রোপন করেন এবং অব্যাহত রয়েছে। হিজরা হবার কারণে তার বোনকে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার হতে হত। এক সময়ে এর প্রতিবাদ করলে বোনকে তালাক দিয়ে সন্তান সহ বাবার বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
এই ঘটনার জন্য সবাই মোহনাকেই দোষারোপ করতে থাকে। সেই থেকে তিনি মা ও বোনকে দেখাশোনা করে আসছেন। ধর্মীয় শিক্ষায় আলোকিত করতে তিনি হিজড়াদের জন্য ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বাল্যবিবাহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন। শুধু হিজড়া জনগোষ্ঠী নয় তার কাজে সাধারণ মানুষও উপকৃত হচ্ছেন। স্রোতের বিপরিতে থেকেও তার অবদান প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করা হয়।
সম্মাননা পাওয়ার পরে তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে মোহনা বলেন, তিনি বিভাগীয় পর্যায়ে একজন জয়িতা হয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় যেতে পারবেন এটা আসা করেননি। তিনি অত্যান্ত খুশি। আগামীতে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠির উন্নয়নে কাজ করতে তিনি আরো বেশী উৎসাহীত হবেন বলে আশাব্যাক্ত করেন। সেইসাথে তাঁকে এই সম্মাননায় ভূষিত করায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও মহিলা বিসয়ক অধিদপ্তর রাজশাহীকে ধন্যবাদ জানান।