গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ার পর সারাদেশের মতো রাজশাহীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাতেও হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন ভবন। ওই সময় থেকে সরকারি ভবনগুলো থেকে যেসব জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়েছিল তার কিছু কিছু ফেরত আসা শুরু হয়েছে। লোকজন স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব ফেরত দিচ্ছেন। তবে তা সামান্যই।
লুট করা সরকারি মালামাল ফেরত দিতে শুক্রবার (০৯ আগস্ট) জুমার খুতবাতেও আহ্বান জানিয়েছেন ইমামরা। এর বাইরে প্রতিদিনই নগরীর পাড়া-মহল্লা মাইকিং করে মালামাল ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তবে লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারে শিগগিরই পাড়া-মহল্লায় সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান শুরু করবে জেলা প্রশাসন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, স্থানীয় তরুণ সমাজ, সংশ্লিষ্ট অফিস ও রেড ক্রিসেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজশাহীর বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা থেকে লুট হওয়া মালামাল ফিরিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। নগর ভবন থেকে লুট হওয়ায় মালামাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মানুষ মালামাল ফেরত দিতে শুরু করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা এসব মালামাল লিপিবদ্ধ করে লোকজনের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছেন। বিশেষ করে হাইটেক পার্ক ও সিটি করপোরেশনের মালামাল ফেরত দিচ্ছেন বেশি। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ও স্থাপনা থেকে লুট হওয়া মালামালও ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ফিরিয়ে দেওয়া মালামালের মধ্যে কম্পিউটার সামগ্রী, অফিস আসবাবপত্র, ফ্যান, এসি, চেয়ার ও সোফা রয়েছে।
এর আগে সোমবার লুট হওয়া বিভিন্ন মালামালের কিছু অংশ বুধবার সন্ধ্যা থেকে ফেরত আসার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে লুট হওয়া মালামালের কিছু অংশ ফেরত আসার কথা জানা গেছে।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে আহ্বান জানানো হয় যেন লুট হওয়া মালামাল ফেরত দেওয়া হয়। কারণ, এটি নাগরিক সেবা দেওয়ার অফিস। সব কাজ থমকে গেছে। এরপর কিছু কম্পিউটার ও চেয়ার-টেবিল ফেরত এসেছে। স্বেচ্ছাসেবীরাও পাড়া-মহল্লায় গিয়ে জিনিসপত্র ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করছেন। তখন তারা কিছু ফেরত পাচ্ছেন। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের ভ্যানেও কেউ কেউ কিছু মালামাল তুলে দিচ্ছেন। তবে এ পর্যন্ত ফেরত পাওয়া মালামাল লুটের তুলনায় সামান্য।’
জনস্বার্থে বিভিন্ন এলাকায় হ্যান্ড মাইক নিয়ে মাইকিং করে এসব সরকারি মালামাল ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানান স্থানীয় তরুণরা। রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ফাহিম রাজ জানিয়েছেন, যা ঘটে গেছে তা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। তারা এগুলো কখনোই সমর্থন করেন না। তাই শুরু থেকেই এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য তাদের পক্ষ থেকে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর সমন্বয়ক তাহাজ নূর আদি বলেন, এসব ঘটনার পর শুরু থেকেই মানুষকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট না করার জন্য সচেতন করা হয়েছে। কারণ এসব সম্পদ সবার। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যারা মালামাল ফেরত দিচ্ছেন তাদের কাউকেই কোনো হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে না। এ ছাড়া তাদের পরিচয়ই গোপন রাখা হচ্ছে বলেও জানান আদি।
শুক্রবার নগরীর মসজিদগুলোতে জুমার খুতবায় বিষয়টি তুলে ধরেন ইমামরা। তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ভবন থেকে যেসব মালামাল লুট করেছেন তাতে তারা জনগণের সম্পদের ক্ষতি করেছেন। কারণ, এগুলো জনগণের টাকাতেই কেনা। ফেরত না দিলে জনগণের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্সেও বোঝা বাড়বে। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় মালামাল আত্মসাৎ করা গুনাহের কাজ। তাই আল্লাহকে ভয় করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নতুন সরকারকে সহযোগিতা করতে মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থানাগুলোতে পুলিশ দ্রুত দায়িত্বে ফিরবে। তখন পুলিশ ও সেনাবাহিনী একযোগে পাড়া-মহল্লায় অভিযান চালাবে। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে মিটিং করে তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। সকলের সমন্বয়ে টিম গঠন করেছে এ অভিযান চলবে। কাজেই যারা সরকারি মালামাল নিয়ে গেছেন তারা দ্রুত ফেরত দিয়ে দিতে পারেন। ফেরত দিলে নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হবে।