নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা এলাকায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাইসা নামের এক গৃহবধূ। ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসের ৫ তারিখে ঐ গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হন। ঐ গৃহবধূর স্বামীর নাম দ্বীন। দ্বীন বিলসিমলা এলাকার মৃত সাজ্জাদের পুত্র। ঘটনার আগের দিন রাইসার মা ও মামা সামিরুল ইসলাম কে জানায়, দ্বীন তার স্ত্রী রাইসাকে যৌতুকের জন্য মাঝে মধ্যেই মারধর করতো। কিন্তু আগস্ট মাসের ৫ তারিখে দ্বীন তার স্ত্রীকে মারতে মারতে হাত ও পেটে গুরুতর আঘাত করে। এ সময় এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তাদেরকেও ভয়ভীতি দেখান দ্বীন। গৃহবধূ রাইসার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা এলাকায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী গৃহবধূ রাইসার পরিবারকে খবর দিলে রাইসার মা রাইসার মেজ মামা ব্যবসায়ী শামিরুল ইসলামকে বাসায় গিয়ে সব কিছু জানায় এবং যে কোন ভাবে রাইসার চিকিৎসা করাতে তার মামার নিকট কান্না কাটি করে। ফলে সামিরুল ইসলাম প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য রাইসার মামি ও নানি সহ ৪-৫ জন মহিলাদের জামাই দীন এর বাসায় পাঠানো হয়।
কিন্তু জামাই দীন তার বাসায় রাইসার মামিদেরকে দেখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। সেজন্য রাইসার মামি তার মামা সামিরুল ইসলামকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে। ফলে সামিরুল ইসলাম তার ছেলে সাইমন ইসলাম সাদ এবং ভাগ্না মইনুল ইসলাম মঈনকে সঙ্গে নিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য ৬ই আগষ্ট জামাই দ্বীনের বাসায় যান।
জামাই দীনের বাড়ি যাওয়া মাত্রই কোনো কিছু বলার আগেই দীন ও তার ভাই কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি সোটাও হাসুয়া নিয়ে শামিরুল ইসলাম, সাইমন ইসলাম সাদ মঈনসহ সকলকে বেধরক আঘাত করতে করতে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত জখম করে ফেলেন এবং ২ টি মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলে।
উক্ত সময় পথচারী ও এলাকাবাসীদের সহযোগীতায় গৃহবধু রাইসার মামা শামিরুল ইসলামসহ তার ছেলে সাইমন ইসলাম সাদ এবং ভাগ্নে মইনুল ইসলাম মঈনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ নং ওয়ার্ডে আহত অবস্থায় ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিলসিমলার এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান – গৃহবধু রাইসাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এখনো নিজেদের জিম্মায় রেখেছেন স্বামী দ্বীন। বিধায় নিজ বাড়িতেও যেতে পারছেননা গৃহবধু রাইসা। এমনকি গৃহবধু রাইসাকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছেনা মাসহ আত্মীস্বজনদের সাথে।
এদিকে গৃহবধু ও তাদের পরিবারের নির্যাতনের বিষয়ে রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জামাত খান বলেছেন, যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। যৌতুককে নির্মূলের জন্য আমাদের সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে এবং ২০২০ সালের নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
অপরদিকে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক্টিভিস্ট ও রাজশাহী পদ্মা প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেস্টা এম.এ.হাবীব জুয়েল বলেন রাজশাহী শান্তির নগরী। আমরা চাইনা আমাদের এই শান্তির নগরীতে আমাদের মা বোনেরা যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হোক। নির্যাতনকারী যেই হোক কিংবা যে দলেরই হোক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আমরা মানববন্ধনের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চাইবো।
আরও ঊল্লেখ্য যে, গৃহবধু রাইসার মায়ের পারিবারিক অবস্থা স্বচ্ছল না হওয়ায় তাকে ছোট বেলা থেকেই লালন পালন করে বাবার দ্বায়িত্ব পালন করেছেন রাজশাহী মহানগরীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শামিরুল ইসলাম।