নিজস্ব প্রতিবেদক: নগর দরিদ্র মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি রাজশাহী মহানগর আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এই কর্মসুচীতে সংহতি প্রকাশ করে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম, সবুজ সংহতি ও বারসিক। নগর দরিদ্র ও ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষের আবাসন, বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে বৈষম্যমুক্ত সবার জন্য বাসযোগ্য নগরের দাবিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন জয়দেব কুমার, জোসনা বেগম, মতিয়ার শেখ, সবুজ সংহতির সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন রাজু, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীম, নগর দরিদ্র মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম, সদস্য সচিব নিলুফা ইসমত আরা। কর্মসূচী সঞ্চালনা করেন বারসিক এর গবেষক শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও অন্যান্য নারী পুরুষগণ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ও পদ্মা নদী বিধৌত শহর রাজশাহীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য বাংলাদেশের মধ্যে অনন্য। অনুবুলা ও নিরাপদ পরিবেশের কারনে এখানে নগর সৃষ্টি হয়েছে। দিনে দিনে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের বসবাসে সমৃদ্ধ হয়েছে এই নগর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বস্তি শুমারীর ২০১৪’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে, শহরের জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ভূমিহীন, দুর্যোগপীড়িত, দরিদ্র এবং বেকার লোকো শহয়াঞ্চলে আগমনের প্রবণতা ছিলো। বস্তিতে বসবাস করা ছাড়া তাদের কাছে অন্যকোন উপায় ছিলো না।
তারা বলেন, সমন্বিত উন্নয়নের অভাবে নগর এবং গ্রামের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরী হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানাবিধ প্রাকৃতিক আপদ যেমন, বন্যা, নদীভাঙ্গন, জলাবন্ধাতা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, শৈতপ্রবাহ, লবনাক্ততার কারণে মানুষ জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে ভীড় করছে। ফলে সহজ লভ্যতার কারণে তাদের অধিকাংশেরই জায়গা হচ্ছে শহরের অপরিকল্পিত এবং অপরিচ্ছন্ন বস্তিতে ও ফুটপাতের খোলা জায়গায়। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব গ্রামের পাশাপাশি শহরকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলছে বলে উল্লেখ করেন।
তারা আরো বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের এই প্রভাব শহরের বস্তিবাসীর জীবনকে আরও অসহনীয় করে তুলছে। শহরে আসা লোকদের মধ্যে কেউ কেউ খাস ও খালি জমিতে, মহাসড়ক বা রেললাইনের ধারে এবং শিল্প এলাকায় ছোট ছোট হালকা বা ঝুপড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে সময়ের ব্যবধানে বস্তিবাসীদের সমস্যার হার বাড়তে থাকে। এই শহরের বস্তিবাসীদের কেউ রিক্সা ড্রাইভার, কেউ ছোট দোকানদার, গামেন্টস কর্মী, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল বয়, গৃহকর্মি, ঠেলাগাড়ী চালক, রং মিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী, নির্মাণ শ্রমিক, বাবুর্চি, ফেরিওয়ালা, ফুল বিক্রেতা, ভিক্ষুক, দৈনিক শ্রমিক, ছোট চাকুরি, বুটিক কর্মি, কারখানা শ্রমিক, মেকানিক, দারোয়ান, গরু পালন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বানু শ্রমিকসহ হাজারো পেশায় যুক্ত থেকে তারা শহরটাকে সচল করে রেখেছেন।
কিন্তু রাষ্ট্র এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনকে সচল রাখার জন্য উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপই নেয়নি। বিগত সময়গুলোতে এই রাজশাহী শহরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন হলেও নগর দরিদ্র, ভূমিহীন বস্তিবাসীদের জন্য স্থায়ীত্বশীল ফোন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। বস্তি শুমারীর ২০১৪’র তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে ছোট বড় মিলে বস্তির সংখ্যা ১০৪টি। মোট খানার সংখ্যা ১০২০২, যার জনসংখ্যা ৩৯০৭৭ জন। রাজশাহী শহরে প্রায় ৮০.৫৫% খানা সরকারি জমিতে ঝুঁপড়ি বা ছোট টিনের ঘরে বসবাস করে। দেশের অন্যান্য নগরের মতো রাজশাহীতেও দিনে দিনে বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই নগরের বস্তিবাসী এবং ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষের জন্য কোন উন্নয়ন কাজ চোখে পড়ার মতো নয়।
এই নগরের নাগরিক হয়েও আমরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবাসন সমস্যা, বিদ্যুৎ, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা অধিকার থেকে বঞ্চিত আমরা। এ ছাড়াও আছে কর্মসংস্থানের অভাব। এগুলো সমাধানের জন্য তারা বিভিন্ন দাবী তুলে ধওে বলেন, রাজশাহী নগরের সকল নগর দরিদ্রের মৌলিক নাগরিক ও কোং নিশ্চিত করতে হবে। নগর দরিদ্রের জন্য নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব বাসস্থান/ আবাসন নিশ্চিত করতে হবে।
নেসকো এবং রাজশাহী ওয়াসার বৈষম্যমূলক নীতিমালা/ আইন পরিবর্তন করে বত্তি পর্যায়সহ ভূমিহীন মানুষের প্রতিটি পরিবারে, বিদ্যুৎ মিটার ও পানির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। নগর দরিদ্রের জন্য বিনামূল্যে বিশেষ কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষ্য নিশ্চিত করতে হবে। . দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় নগর দরিদ্রের জন্য বিশেষ বুঝি ভাতা /প্রনোদনা দিতে হবে। রাজশাহী শহরের খাল, প্রাকৃতিক জলাশয়, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক, বিনোদন ভুল, শরীর চর্চা ভুল নগরের সফল শ্রেনীপেশার মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নগর দরিদ্রের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎস্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।