নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, দলীয়করণ ও আবাসন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিমানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শাহ মখদুম বিমান বন্দরের ম্যানেজার দিলারা পারভীন এর বিরুদ্ধে। তার এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গড়ে তুলেছেন অভ্যন্তরীন সিন্ডিকেট। স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নেতা। শশুর বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার সুবাদে অধস্তন সকল কর্মচারীকে তটস্থ করে রাখেন তিনি। দুই বছর পর পর বদলীর নিয়ম থাকলেও গোপালগঞ্জের পরিচয়ে কোন রকম বদলী ছাড়াই প্রায় চার বছর ধরে স্বপদে বহাল আছেন শাহ্ মখ্দুম বিমান বন্দরের ওই ম্যানেজার।
খবর নিয়ে জানা যায় শাহ মখদুম বিমান বন্দরের ম্যানেজার দিলারা পারভীন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে দূর্নীতি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন। সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, এয়ারপোর্ট ফায়ার অপারেটর নাজমুল হক, সুপার ভাইজার মাহফিজুর রহমান ও আর্মড সিকিউরিটি গার্ড খাদিমুল এর মাধ্যমে কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করেন তিনি।
শাহ্ মখ্দুম বিমান বন্দরের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে চাঁদা আদায় করে থাকেন এয়ারপোর্ট ফায়ার অপারেটর নাজমুল হক ও আর্মড সিকিউরিটি গার্ড খাদিমুল। কেনাকাটা ও প্রতিষ্ঠানের পুরাতন সরঞ্জামাদি বিনা টেন্ডারে বিক্রি এবং টাকার বিনিময়ে সাধারণ যাত্রিদের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সুপার ভাইজার মাহফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিমান বন্দরের চার জন কর্মকর্তা মূল কাজ সম্পাদন করলেও মানেজারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তার পরামর্শেই সকল ধরনের দূর্নীতি মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন দিলারা পারভীন।
বিমান বন্দরের অফিসারদেরকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজার দিলারা পারভীন এর বিরুদ্ধে। নিজের মনপুত না হলে কোন কারন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্ত-কর্মচারীদের শোকজ, সাময়ীক বরখাস্ত ও বদলি করেন তিনি। বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকলেও ম্যানেজার দিলারা পারভীন নিজের পছেন্দের লোক দিয়ে ঐসব দপ্তর পরিচালনা করে থাকেন তিনি। বিমান বন্দরে প্রায় ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রোস্টার ভিত্তিক দায়ীত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১০-২০ গ্রেডের কর্মরত ৭৫-৮০জন অফিসার অভার টাইম ডিউটি করে থাকেন। প্রত্যেকের জন্য মাসে ২০০ ঘন্টা ওভার টাইম বরাদ্দ থাকলেও অধিকাংশ অফিসারে কাছ থেকে কর্মঘন্টা কেটে অর্থের বিনিময়ে নিজের আস্থাভাজনদের দিয়ে ডিউটি করিয়ে থাকেন। ওভার টাইম সংক্রান্ত রেজিস্টারে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নেয়ার বিধান থাকলেও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন তিনি।
শাহ্ মখ্দুম বিমান বন্দরের অফিসারদের জন্য আবাসিক কক্ষের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। সিনিয়রিটি অনুযায়ী বাসা বরাদ্দ না দিয়ে নিজের পছন্দসই ব্যক্তিগণ কে বাসা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এমনকি মহিলা অফিসারকে বাসা না দিয়ে চাটুকার কর্মচারীদের বিনা ভাড়া বাসায় থাকতে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে অনেক অফিসার বিমান বন্দরের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলেও অধিকাংশ ডরমেটরি বহিরাগতদের দখলে। আবার ব্যাচেলর আবাসিক কক্ষ ফ্যামিলি হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দিলারা পারভীনের নির্দেশে।
এ ছাড়াও নিয়মিত অফিস না করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, ইচ্ছাকৃতভাবে চিঠিপত্রে স্বাক্ষর না করা, বিমানবন্দরের অপারেশনাল গাড়ি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন তিনি। বিমান বন্দরে কোন সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয় না। অফিসিয়াল মিটিং হলে সেখানে কোন অফিসারদের না রেখে পছন্দের কর্মচারীদের রাখেন। এমনকি অফিসারদের বিরাগভাজন অফিসারদের পেছনে কর্মচারীদের দিয়ে গুপ্তচর হিসেবে লাগিয়ে রাখেন। কোন অসঙ্গতি দেখলেই ঐ অফিসারকে হিসাব শাখায় ডেকে নিয়ে ম্যানেজার দিলারা পারভীন ও সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বদলী, বরখাস্তসহ নানা রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে শাসন করে থাকেন।
আওয়ামী লীগ পন্থী এ কর্মকর্তা গোপালগঞ্জে বউ হওয়ার সুবাদে অন্য মতাদর্শের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হেনস্থায় লিপ্ত আছেন দীর্ঘ ৪ বছর যাবৎ। বৈষম্যের শিকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ২৫০০ হাজার কোটি টাকা প্রকল্পে কমিশন বানিজ্যে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেও শুধুমাত্র গোপালগঞ্জের বউ হওয়ার সুবাদে স্বামীর ক্ষমতায় এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
এসব বিষয় কথা বলতে শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজার দিলারা পারভীন বলেন, তিনি কোনো গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
জানতে চাইলে বিমান এয়ারলাইনসের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহেল কামরুজ্জামান বলেন, তিনি দিলারা পারভীন এর বিষয় গুলো জানেন না। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।