নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে বিডিআর বিদ্রোহের পুনরায় বিচার, আটক বিডির সদস্যদের মুক্তি ও চাকুরিচ্যুত বিডিয়ার সদ্যদের পুনর্বহালের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সেনা, নৌ, বিদান ও বিজিবি প্রধানসহ এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল সমন্বয়ক, সুশিল সমাজ ও বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের পুণরায় বিচারের দাবীতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট বিডিআর কল্যাণ পরিষদ ও রাজশাহী জেলার চাকুরীচ্যুত বিডিআর সদস্যদের আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যান এবং তাদের দাবী-দাওয়া সমৃদ্ধ স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের নিকট প্রদান করেন।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ২০০৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা সরকারের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সৈন্য অনুপ্রবেশ করিয়ে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আর এর দায়ভার নিরিহ বিডিআর জোয়ানদের উপর চাপিয়ে দিয়ে সংঘঠিত মিথ্যা বিডিআর বিদ্রোহের দায়ে জেল জুলুমের অত্যাচার করা হয়েছে। সে সময়ে চাকুরিচ্যুত বাংলাদেশব্যপী ক্ষতিগ্রস্ত সকল সদস্যরা মিলে এই মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের উপর জোর পূর্বক মিথ্যা ভাবে চাপিয়ে দেওয়া বিদ্রোহের কলঙ্ককে মুছে দিয়ে পুনরায় সীমান্ত বাহিনীতে নিয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
তারা আরো বলেন, যে কোনো বিদ্রোহের একটা লক্ষ্য থাকে। সেই সাথে সংশিষ্টদের পারস্পারিক যোগাযোগ ও লিডার থাকে। এক্ষেত্রে পিলখানায় বিদ্রোহ চলাকালিন সৈনিকদের এলোমেলো দিক বিদিক ছুটে চলায় প্রমান করে বিডিআর সদস্যরা বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুতি ছিলনা এবং সে সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত ছিলেন না। এখানে ৩য় পক্ষের পরিকল্পিত অনুঘটনে হত্যা কান্ড সংঘটিত হয়। সেই ৩য় পক্ষ তৎকালিন পরনির্ভরশীল ক্ষমতা লোভী প্রধানমন্ত্রী খুনি হাসিনা, হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, শেখ সেলিম, ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাসানুল হক ইনু, মৃত সাহারা খাতুন ও ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত সিকদার, পংকজ দেবনাথ, বাহা উদ্দিন নাসিম সহ অনেকে এদের যোগসাজসে হায়ারকৃত কিলার দ্বারা হত্যাকান্ড ঘটানো হয় ‘যার দায়ভার পরিস্থিতির স্বীকার বিডিআর সদস্যদের ওপর চাপানো হয় বলে উল্লেখ করেন তারা।
প্রকৃত অর্থে মূল খুনিদের আড়াল করতে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের নামে হাসিনা সরকার প্রশ্নবিদ্ধ ও সাজানো বিচার করে অসহায় নিরুপায় বিডিআর সদস্যদের চাকরিচুত সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। যা চরম ভাবে অনায্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে তারা দাবী করেন। বিডিআরগণ বলেন, পিলখানার বাইরের ইউনিটে কোনো হত্যা কান্ড ঘটেনি। এখানে উল্লেখ্য ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল ১০টায় পিলখানায় কথিত বিদ্রোহ ঘটে। যা টিভির মাধ্যমে বাইরের ইউনিটের সৈনিকেরা দেখতে পায় এবং সৈনিকগণ শান্ত থাকেন। বিপত্তি ঘটে পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল ৯ ঘটিকায় ‘সিগন্যাল সেন্টার থেকে দুটো বার্তা আসে।
প্রথম বার্তা বিডিআর স্থাপনায় যে সকল সেনা অফিসার অবস্থান করছেন, তারা সকলে পার্শ্ববর্তী সেনা ছাওনিতে সকাল ১০ ঘটিকার মধ্যে ও রিপোর্ট করবে। দ্বিতিয় বার্তা- সেনা অফিসার যাওয়ার পর সেনাবাহিনী বিডিআর স্থাপনায় আক্রমন করবে। এই দুটো বার্তায় বাহির ইউনিটের সৈনিকরা হতভম্ব ও দিশেহারা হয়ে পড়েন। সেনা অফিসার চলে গেলে সেনা বাহিনীর আক্রমন! তাই, সৈনিকরা সেনা অফিসারদের ইউনিট ছেড়ে যেতে বারণ অথবা বাধা দেন এবং আত্মরক্ষার জন্য সেলভ ডিফেন্ডে যায়। এতে কোনো প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। আরও উল্লেখ্য এই দুটো বার্তা না এলে বাহির ইউনিটে এটুকুও হতো না বলে জানান তারা।
তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ সারা বাংলাদেশে চাকুরিচ্যুত কোনো বিডিআর সদস্য রাষ্ট্র বিরোধী, সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থি কোনো সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়নি। অথছ সুসংগঠিত এই সংস্থাকে বিগত সরকারের খুনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ও তাঁর দোসোরেরা মিলে নিজেদের বাঁচাতে তারা বিডিআরকে বিতর্কিত এবং সাজা প্রদান করেছে। উপস্থিত সাবেক বিডিআর জোয়ানরা উপরোক্ত খুনিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবী জানান। সেইসাথে তাদেরকে চাকুরীতে বহালের দাবী জানান।
মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, বিডিআর কল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোরশেদ আলী, সহকারী সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম, প্রচার সম্পাদক আজাদ আলী, কোষাধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, বিডিআর সদস্যদের পরিবারের সদস্য রাশিদা খাতুন, ফরিদা বেগম, শেফালী খাতুন ও লাহেলাসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও রাজশাহী জেলার চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্য এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।