নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার সরকারি মডেল মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ ওবাইহুল্লাহ’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপ্রত্যাশিত বিষয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মুসল্লীরা। গত ১০-০৬-২০২১ ইং তারিখে পাওয়া নিয়োগের পর থেকে এখন অবদি একের পর এক অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বরত ইমামের বিরুদ্ধে। স্থানীয় মুসল্লী ও মুরুব্বিদের সাথে অশোভন আচরণ, স্থানীয়দের কথা অমান্য করে অন্য মাশহাব মেনে নামাজ আদায় করানো, নিজের ইচ্ছে মতো প্রতি ওয়াক্তের আযান ও নামাজের সময়সূচী নির্ধারণ করা সহ তাবলীগ জামাতের লোকদের সাথে অত্যধিক সখ্যতার বিষয়গুলো স্থানীয় মুসল্লীদের মাঝে চরম ক্ষোপ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। পূর্ববর্তী সময়ে একজন সাবেক এমপি’র ছত্রছায়ায় থাকার কারণে ইমামের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় মুসল্লী ও এলাকার মুরব্বি জমিদাতাগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেন, মুসল্লীদের সাথে কারণে অকারণে ইমাম সাহেব খুব খারাপ আচরণ করেন। ইমাম সাহেবের খারাপ আচরনের কারণে অনেক মুসল্লী এই মসজিদে নামাজ পড়া বাদ দিয়েছেন। মসজিদ ও নামাজ সংক্রান্ত কোন পরামর্শ দিতে চাইলে ইমাম সেটা তো মান্য করেনই না; উপরন্তু বলেন, আপনি কি মসজিদে আমার ভূল ধরতে আসেন ? আপনি এত কথা বলেন কেন! আপনি কি বেশি বোঝেন। এমন ধরনের আচরণ একজন ইমামের কাছ থেকে কখনোই কাম্য নয় বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।
নামাজের মাজাহাব নিয়ে কেউ উপদেশ দিতে গেলে স্থানীয় মুরুব্বিদের অপমান করতেও ছাড়েন না তিনি। রনাবাড়ী জামে মসজিদটি প্রায় দুইশ বছর পুরোনো। এই মসজিদে সেই তখন থেকেই আহলে হাদিসের নিয়মনীতি অনুসরণ করে নামাজ আদায় করার প্রচলন ছিল। মসজিদের জমিদাতা সদস্য গিয়াস উদ্দিন সহ অন্যান্য মুসল্লীরা বলেন, ইমামের কর্মকান্ড ও আচরণ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিতর্ক এখন চরমে। ইমাম সাহেব কাউকে পরোয়া করেন না। নিয়োগ পাবার আগে যাচাই বাছাই পরীক্ষায় তেমন একটা ভাল না করার পরও তাকে পরীক্ষায় প্রথম দেখিয়ে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালিন এমপি আয়েন উদ্দিনের ছোট ভাই বলেও সবার কাছে পরিচয় দিতেন। কিছু বলতে গেলে তিঁনি (ইমাম) বলেন, মনে না চাইলে এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসার দরকার নাই। আপনার মতো মুসল্লী মসজিদে না আসলেও চলবে।
নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মুকবুল হোসেন বলেন, পুরোনো এই মসজিদের স্থলে একটি মডেল মসজিদ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রস্তাব দিলে আমরা তাদেরকে জানিয়ে ছিলাম, এখানে আহলে হাদিস মাজহাবের বেশিরভাগ মানুষ নামাজ পড়ে। মসজিদের জায়গা দেওয়ার পূর্ব শর্তই ছিল মক্কা-মদিনায় যে নিয়মে নামাজ পড়ানো হয় সেই নিয়মে নামাজ পড়ানো হলে মসজিদের জন্য জায়গার ব্যবস্থা আমরা করবো। তখন তারা বলেছিলেন, আপনারা যে নিয়মে নামাজ পড়েন সেই নিয়মই বহাল থাকবে। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের পর যে ইমামকে এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তিনি যাচাই বাছাই পরীক্ষায় চতুর্থস্থান অধিকার করার পরেও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এখানে নিয়োগ নেন।
তিনি বলেন, যোগদান করার পর থেকেই তিনি স্থানীয় মুরুব্বি ও মুসল্লীদের সাথে অশোভন আচরণ করা সহ নিজের তৈরি করা আইনে মসজিদ পরিচালনা করে আসছেন। কিছু বলতে গেলে তিনি সাবেক এমপি আয়েন উদ্দীন ও রাসিক মেয়র লিটনের দাম্ভিকতা দেখাতেন। তাদের ভয়ে আমরাও তখন এই ইমামের পদত্যাগ চাইতে পারিনি। স্থানীয় মুসল্লীরা চান এই ইমাম পরিবর্তন করে নতুন ইমাম নিয়োগ দিয়ে মসজিদের নামাজ বা অন্য কার্যক্রম চালাতে। এই ইমামের কথার মধ্যে কোন রস নাই। সবসময় খারাপ ব্যবহার করে। কারণে অকারণে ধমক দেয়। খুব কড়া মেজাজের মানুষ তিনি বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে, রনাবাড়ী জামে মসজিদ (বর্তমানে মডেল মসজিদ) ১৮২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন একটি ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ এটি। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলহাজ্ব খুদি (হাজি)। পরবর্তী সময়ে এই মসজিদটির সার্বিক দায়িত্ব পালন করতেন স্থানীয় মুসল্লী জমিদাতা সদস্য মো: গিয়াস উদ্দিন এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মুকবুল হোসেন। বর্তমানে রনাবাড়ী জামে মসজিদের স্থানেই নির্মান করা হয়েছে পবা উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
বিভিন্ন অভিযোগের সাথে আরো যোগ হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে এই মসজিদের বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি। এরই মধ্যে বকেয়া পড়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো। মসজিদের সার্বিক পরিবেশ সুশৃঙ্খল রাখার স্বার্থে স্থানীয় মুসল্লীগন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ইমামের পদত্যাগ চেয়ে অভিযোগ করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত ইমামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মসজিদের বকেয়া বিল সহ অন্যান্য আর্থিক বিষয়ে জানতে চাইলে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ফিল্ড সুপারভাইজার মুসলেহুদ্দীন বলেন, মসজিদের বিদ্যুৎ বিল সরকারিভাবে দেওয়া হয় না। বলা হয়েছে স্থানীয়ভাবে মসজিদের বিভিন্ন আদায়ের টাকা থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে। কিন্তু স্থানীয়ভাবেও বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয় না। বিদ্যুৎ বিলের জন্য এখন পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ৩২ হাজার ৫০০ পাঁচশত টাকা এবং জেলা প্রসাশক থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ পেয়েছি তা জমা দেওয়া হয়েছে।
গত আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত মসজিদের বিদ্যুৎ বিলের মোট বকেয়া দাড়ায় প্রায় ১০ লাখ ২ হাজার ৯৫৩ টাকা। মসজিদের কোটা এবং বিভিন্ন খাত থেকে কত টাকা আদায় হয়, কি খাতে খরচ হয়, কি ক্রয় করা হয় সুপারভাইজার কে এসবের ভাউচার সহ প্রতিমাসে হিসাব দেওয়ার কথা থাকলেও ইমাম দেয় না। মসজিদ কমিটির টাকা আদায়ের দায়িত্বে সাবেক প্রফেসর আলাউদ্দীনও আছেন। আবার প্রতিদিনের আদায় এবং খরচের চার্ট টাঙানোর কথা থাকলেও তা টাঙানো হয়নি।
জানতে চাইলে ইমাম মাওলানা ওবাইহুল্লাহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে এখান থেকে সড়ানোর জন্য একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রায় দশ লাখ টাকা বিদ্যুতের বিল বকেয়া কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন এসম্পর্কে আমি কিছু জানিনা।