মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:১২ অপরাহ্ন

ভ্রমন পিপাসু রাজশাহীর তামান্না’র সাত মহাদেশ ভ্রমন

  • প্রকাশ সময় রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪১ বার দেখা হয়েছে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজশাহীর মেয়ে তামান্না। যাত্রা শুরু করেছেন তার শিকড় থেকে বেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের একটা উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নেয়ার জন্য। এইচএসসি পাশ করার পর তামান্না পড়াশোনার জন্য পারি জমান আমেরিকায়। সেখানে ইন্ডিয়ানার পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। উল্লেখ্য যে, পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার জন্য বিখ্যাত।

পড়াশোনা শেষ করে তামান্না তার পেশাগত জীবন শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, অটোমোটিভ শিল্পে। তার প্রফেশনাল জীবনের পাশাপাশি তিনি আলোচনায় আসেন সামাজিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য। সমাজসেবায় সংশ্লিষ্ট থাকার জন্য, ইউনাইটেড ওয়ে নামের একটা সংস্থা তাঁকে এবং তাঁর টিমকে সম্মান জানিয়ে স্থানীয় একটি বিলবোর্ডে তার ছবি প্রকাশ করে। বলে রাখা ভালো যে, ইউনাইটেড ওয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পরিচিত এবং প্রশংসিত। এখান থেকে তামান্না চলে যান বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রিতে, একজন ‘কন্টিনুয়াস্ ইম্প্রুভমেন্ট স্পেসিয়ালিস্ট’ হিসেবে, যেখানে তার দায়িত্ব ছিল কাজের মান ও দক্ষতা বাড়ানো এবং এই খাতে নতুন উদ্ভাবন আনা।

পৃথিবীর সবচাইতে বড় অনলাইন বিক্রেতা অ্যামাজন তারপর তামান্নাকে তাদের অংশ করে নেয় ২০২১ সালে। কোভিড-১৯ এর সময় অন্যদের মতই তখন তার কাজ ছিল অনলাইনে। যদিও তামান্না তখন থাকতেন মিশিগানে। তার কর্মদক্ষতার কারণে ২০২৩ সালে তাকে টেনেসির পরিবর্তে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে অ্যামাজনের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে কাস্টমার সার্ভিস অপারেশন্স টিমে যুক্ত করা হয়। সেখানে তিনি নেতৃত্ব দেন ৮০ হাজার কাস্টমার সার্ভিস এজেন্টদের জন্য একটা বিশ্বব্যাপী মেন্টাল হেলথ এন্ড ওয়েল বিয়িং প্রোগ্রাম চালু করতে। যাতে তাদের কাজের পরিবেশ আরও ভালো করা যায়। এখানে সফলতার জন্য তার এই কাজ গ্লোবালি রেকগনিশন পান এবং তামান্নাকে মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

অ্যামাজনে যারা কাজ করে তাদের অ্যামাজোনিয়ান বলা হয়। একজন অ্যামাজোনিয়ান হিসাবে তামান্না অ্যামাজনে কর্মরত অবস্থাতেই ঘুরে আসেন অ্যামাজন রেইনফরেস্ট। উল্লেখযোগ্য যে, অ্যামাজনে থাকা অবস্থাতে খুব কম মানুষই অ্যামাজন রেইনফরেস্ট যান অ্যামাজোনিয়ান হিসেবে। বাংলাদেশি এবং একজন নারী হিসেবে এটি সবার জন্যই গর্বের। এ বছর তামান্না যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে। যেখানে বিমানের উইং তৈরির কাজে সাহায্য করছেন তিনি।

তামান্নার ব্যক্তিগত অর্জনগুলোও তার পেশাগত সাফল্যের মতোই উল্লেখযোগ্য। পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তামান্নার প্রফেসর তার লেখা একটা বইয়ের প্রচ্ছদে থাকার অনুরোধ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই প্রফেসর পরে তামান্নাকে তার ক্লাসের টিচিং অ্যাসিস্টান্ট হিসেবে নিয়েছিলেন তার কোর্সে।

বাবার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত তামান্না বেশিরভাগ সময়ই ঘোরাঘুরিতে মত্ত থাকেন। বয়স ৩০ হওয়ার আগেই তার ইচ্ছে ছিল পৃথিবীর সাতটা মহাদেশ ঘুরে ফেলার। ঠিক সেটাই ২০১৯ সালের মধ্যে করেছেন তামান্না। বাংলাদেশি শাড়ির প্রতি তার ভালোবাসা তাকে অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে শাড়ি পরে ছবি তুলতে উদ্বুদ্ধ করে। তার বন্ধুদের মতে তামান্না সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীল কাজে সবসময় চটপটে থাকেন।

চাকরি আর ঘোরাঘুরি ছাড়াও তামান্না সমাজসেবায় বেশ সক্রিয়। বিগ ব্রাদার্স বিগ সিস্টার্স প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের তিনি মেন্টর করেছেন। এছাড়াও ওয়াইডব্লিউসিএ-তে যৌন নিপীড়নে নির্যাতিতদের সহায়তা প্রদানকারী হিসেবেও কাজ করেছেন রাজশাহীর এই মেয়ে।

সোসাইটি অফ উইমেন ইঞ্জিনিয়ার্স নামের সংগঠনকে বলা হয় মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া এবং এই ক্ষেত্রে তাদের কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পৃথিবীর সব চাইতে বড় সংগঠন। মিশিগানে থাকার সময় তামান্না সেই সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই বছর দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। মিডল স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের ঝঞঊগ (ঝপরবহপব, ঞবপযহড়ষড়মু, ঊহমরহববৎরহম, গধঃযবসধঃরপং) পড়তে উৎসাহিত করতেন তিনি। এখনও তিনি সিয়াটলের এসডব্লিউই চ্যাপ্টারে সদস্য হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তামান্না বই পড়তেও ভীষণ ভালোবাসেন। গল্পের বইয়ের পাশাপাশি, মেন্টাল ওয়েলবিয়িং, ডাইভারসিটি, ইকুইটি এবং ইনক্লুশনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করেন তিনি। শুধু পড়াশোনাই নয়, এসব বিষয়কে কর্মজীবনে এবং সামাজিক জীবনে কাজে লাগাতেও বেশ সোচ্চার তিনি। তার মতে,‘ কথা হল, ’ইনক্লুসিভিটি এন্ড ডাইভারসিটি আর কিয্ টু ওয়ার্ক প্লেস হ্যাপিনেস। এছাড়া, তামান্নার একটা বৈচিত্র্যময় প্রতিভা হচ্ছে তিনি আমেরিকান ‘স্মুথ এন্ড রিদম’ নাচেও বেশ পারদর্শী। যেখানে তিনি অ্যাডভান্সড ব্রোঞ্জ লেভেল পর্যায়ে পারফর্ম করেন ।

তামান্নার গল্প মানুষকে সফল হওয়ার বার্তা দেয়। কঠোর পরিশ্রম আর সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলে, যেকেউ ভালো কিছু করতে পারে তার উদাহরণ হতে পারেন এই নারী। তামান্নার গল্প হয়ত সেই ছোট্ট মেয়েটাকেও সাহস এবং অনুপ্রেরণা দেবে, যিনি পার্বত্য অঞ্চলের কোনো দুর্গম জায়গায় থেকেও বিশ্বদরবারে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন।

এসব বিষয় নিয়ে তামান্না বলেন, একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বড় হয়ে এবং সারাজীবন কাছের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যুদ্ধ করে, আমি সবসময় চেয়েছি এবং চাই, যেন অন্য মেয়েরা নিজেদের সব শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে পারে। পৃথিবীতে কত মেয়েরা নানা রকম যুদ্ধ করে বিজয়ী হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নারীদের শৃঙ্খলগুলো হয় তাদের মনের। এটা বুঝতে পারাটাও বড় বিজয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin