মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫২ অপরাহ্ন

ভুক্তভোগীদের বিক্ষোভ-সমাবেশ, ক্ষতিপূরণ দাবি পুনর্বাসন না করেই গোদাগাড়ীতে ওয়াসার পাইপলাইনের জন্য সীমানা নির্ধারণ

  • প্রকাশ সময় শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৯ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূমিহীন আনোয়ারা বেগমের নিজের কোন সহায়-সম্পদ নেই। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের হলের মোড় এলাকায় মহাসড়কের পাশে বাস করেন সড়ক ও জনপদের (সওজ) জায়গায়। এখন আনোয়ারার বাড়ির ভেতর দিয়ে যাবে রাজশাহী ওয়াসার পাইপলাইন। এ জন্য ওয়াসা আনোয়ারার বাড়ির ভেতরে সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি পুঁতেছে। কিছুদিনের মধ্যে ভাঙা হবে আনোয়ারার বাড়ি। পরিবার নিয়ে আনোয়ারা এখন কোথায় থাকবেন তা জানেন না।

এমন পরিস্থিতি শুধু আনোয়ারার একা নয়। গোদাগাড়ী উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এমন বিপদে পড়েছেন। এদের অনেকে সড়কের পাশে সওজের জায়গায় বাস করছেন। কারও কারও আছে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তা দিয়েই চলে সংসার। কিন্তু তাদের পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অনেকেরই আবার ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর দিয়ে পাইপলাইন নিয়ে যেতে চায় ওয়াসা। তাদের জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

ওয়াসা জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগরসহ আশপাশের এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুর এলাকায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে। গোদাগাড়ীতে পদ্মার পানি নিয়ে পরিশোধনের পর ৫৩ কিলোমিটার প্রধান পাইপলাইন এবং ৪৮ কিলোমিটার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিতরণ পাইপলাইনের মাধ্যমে এ পানি সরবরাহের কথা রয়েছে। এই পাইপলাইন যেদিক দিয়ে যাবে সেই স্থানগুলো চিহ্নিত করে খুঁটি পুঁতেছে ওয়াসা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সওজের জায়গায় থাকা বাড়িঘর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গার ওপর দিয়েও পাইপলাইন নিতে সম্প্রতি সীমানা নির্ধারণ করেছে ওয়াসা। গোদাগাড়ীর সারেংপুর থেকে উপজেলার চাঁপাল পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু ওয়াসা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেয়নি। এর প্রতিবাদে শনিবার সকালে কয়েক হাজার ভুক্তভোগী গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। গোদাগাড়ী নাগরিক স্বার্থ-সংরক্ষণ কমিটি প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন নাগরিক স্বার্থ-সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সালাহউদ্দিন বিশ^াস। তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ওয়াসা একটি কুচক্রি মহলকে ম্যানেজ করে জোরপূর্বক জমি দখল করতে চাচ্ছে। আর অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা টাকা তারা আত্মসাতের চেষ্টা করছে। গোদাগাড়ীর মানুষ তা হতে দেবে না। প্রয়োজনে তারা আদালতে যাবেন।’

নাগরিক স্বার্থ-সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম বরজাহান আলী পিন্টু বলেন, ‘ওয়াসা ব্যক্তিগত জমির পাশাপাশি সওজের জায়গায় থাকা অসহায় গরিব মানুষের ঘরবাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভেতর খুঁটি পুঁতেছে। সরকারকে বলব, আগে এসব মানুষকে পুনর্বাসন করুন। গরিব মানুষের আবাসন নিশ্চিত করুন। তাদের বেঁচে থাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখুন। পাশাপাশি যাদের জমি নেওয়া হচ্ছে তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিন। তা না হলে এভাবে পাইপলাইন নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। আপনারা (ওয়াসা) ৫ আগস্টের আগে যা ইচ্ছা তা-ই করেছেন। এখন ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না।’

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর জেলার (পশ্চিম) ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সরকারের উন্নয়ন কাজের বিরোধী নয়। আমরা বলতে চাই, একজন মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য ও বাসস্থান। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কিংবা পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করলে মানুষের এ দুটি মৌলিক অধিকার আর থাকবে না। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র তখনই চলবে যখন সেখানে মানুষ থাকবে। মানুষ ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না। মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেই সকল উন্নয়ন কাজ করতে হবে। এর বাইরে কিছুই মেনে নেওয়া হবে না।’

সমাবেশে ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ‘ওয়াসা উন্নয়নের নামে আমাদের সন্তানের জায়গা লুটে নিতে চায়। এ অধিকার তাদের কে দিয়েছে সেটি আমরা জানতে চাই। ফ্যাসিবাদ মানে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া। ওয়াসা যে কাজ শুরু করেছে তা নব্য ফ্যাসিবাদ। তাদের কারণে কয়েক হাজার মানুষ আজ পথে বসতে চলেছেন। এটি আমরা মেনে নেব না। কয়েক হাজার মানুষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসন রক্ষায় যা যা করার আমরা করব। পাইপলাইন বসাতে হলে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পুনর্বাসন করতে হবে।’

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সামনুরী মান মধুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গোদাগাড়ী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আলম, ভুক্তভোগী ভুট্টু, কামরুল ইসলাম টুটুল, গোলাম রাব্বানী প্রমুখ। তারাও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান। তা না হলে জনমত গঠন করে সবাইকে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীর হোসেন বলেন, ‘গ্রামের ভেতর কিছু মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর আমাদের স্থাপনা করতে হচ্ছিল। সেখানে ৫২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরপরে মহাসড়কের পাশে আর কোন জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। কারণ, ওই জায়গাগুলো সড়ক বিভাগের। তারা আমাদের কাছে জমি হস্তান্তর করছে। সরকারি জায়গায় স্থাপনা থাকলে আমরা কিছু করতে পারব না।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin