মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

পবার বারনই নদীতে আবারো সুতি জালে মাছ নিধন

  • প্রকাশ সময় রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৩ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পবার বারনই নদীতে আবারো চলছে সুতি জালের ঘের দিয়ে মাছ নিধন। আগে এক স্থানে হলেও এখন পাশাপাশি দুই স্থানে ঘের দিয়ে অবাধে মাছ শিকারে মেতেছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। ঘের দিয়ে মাছ শিকারের কারণে নদীর পানির স্রোতে বাধা দেয়ায় জমি ভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেইসাথে অবাধে সব ধরনের মাছ শিকার হওয়ায় মা ও পোনা মাছ মারা পরছে। এতে করে আগামীতে মিঠা পানির মাছের আকাল দেখা দেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অবাধে মাছ শিকার বন্ধে এবং ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে পবা মৎস্য অফিস ও উপজেলা ভুমি অফিসে আবেদন জানিয়েছেন ঐ এলাকার জনসাধারণ। গত ৩ অক্টোবর গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মাধাইপাড়া গ্রামের এনামুল হক এ আবেদন করেন।
জানা গেছে, একই স্থান থেকে অবৈধ সুতি জালের বাঁধ অপসারণ হয়েছে কয়েকদিন আগেই। গত পহেলা অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে পবা উপজেলার সুবিপাড়া ও মোহনপুর উপজেলার মৌপাড়া গ্রাম ঘেঁষে বয়ে চলা বারনই নদীতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সুতি জালের বাঁধ অপসারণ করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন পবা উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রিট জাহিদ হাসান। উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পরেই জাল মেরামত করে আবারও শুরু হয়েছে মাছ ধরা।
প্রতিবছরই নদীতে অবৈধ সুতি জাল দিয়ে প্রকাশ্যেই পোনাসহ মা মাছ নিধন করা হয়। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই এক শ্রেণির অসাধু ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ পোনা ও মা মাছ নিধনের মহোৎসবে নেমে পড়ে। নদীর বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ সুতি জাল বা রিং জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ও মা মাছ। এমনকি শামুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজপ্রাণিও মারা যাচ্ছে সুতি জালের ফাঁদে। পাশাপাশি স্্েরাতে বাধা থাকায় নদীর দুইপাড় ভাঙন কবলে পড়ে।
অবৈধ রিং জাল, কাপাজাল, ভাসা জাল, কারেন্ট জাল, সুতি জালসহ নানা ধরনের জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন কিছু জেলে এবং জেলে নয় এমন ব্যক্তিও। এসব সুতি জালের ফাঁদ থেকে বাদ যায় না ছোট-বড় কোনো মাছই। ফলে সারাবছরই মাছ শুন্য থাকে নদীগুলো।
সরেজমিন দেখা যায়, পবা উপজেলার সুবিপাড়া ও কানচেপাড়ায় এবং মোহনপুর উপজেলার মৌপাড়া গ্রামের বারনই নদীতে সুতি জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন ওই গ্রামের কিছু অসাধু লোক।
ওই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, স্থানীয় ওই অসাধু চক্রটি নদীগুলোর দুই তীর থেকে শুরু করে মাঝখানের ১০ হাত যায়গা বাকি রেখে বাঁশ-চাটাইয়ের বেড়া বসিয়ে দেয়। ফলে শুধুমাত্র ফাঁকা ১০ হাত জায়গা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। আর সেখানে সুতি জাল পেতে রাখে তারা। প্রায় দুইঘণ্টা পর পর পুরো জাল ভর্তি করে মাছ ওঠে। যেখানে তাদের হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ মণ মাছ ধরা পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ জেলেরা।
অথচ সরকারি নিয়মে ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ফাঁসের জাল দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করার নিয়ম। কিন্তু এখন নদীতে বেড় জাল তৈরি করা হয় মশারি দিয়ে। আবার বাঁধা জালের ফাঁস মশারির ফাঁসের চেয়ে কিছুটা বড়। জেলেদের মধ্যে বেড় ও বাঁধা জাল রাক্ষুসে জাল হিসেবেও পরিচিত।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মৎস্য বিভাগ দুই-একটি অভিযানের নামে গেম খেলে। এলাকার মানুষ সচেতন হলে এবং প্রশাসন কার্যকরী উদ্যোগ নিলে এ কাজ করে টিকে থাকা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।’
পবা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, সুতি জাল নিষিদ্ধ। এই জাল দিয়ে মাছ ধরা বেআইনি। এরআগে অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঘের ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জব্দকৃত জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। আবারো ঘের দিয়ে মাছ শিকার করলে ভেঙ্গে ফেলা হবে। তবে নদীটি দুই উপজেলার (পবা- মোহনপুর) সীমানা দিয়ে যাওয়ায় দুই উপজেলার প্রশাসনকে একসাথে অভিযান করতে হয়। অনেক সময় হয়ে উঠে না।
এ ব্যাপারে পবা উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রিট জাহিদ হাসান জানান, বারনই নদীর ওপর অবৈধ সুতি জালের বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে মাছ নিধন করছিল এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। খবর পেয়ে মঙ্গলবার এই অবৈধ সুতি জালের বাঁধ অপসারণ করা হয়। অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin