নিজস্ব প্রতিবেদক: পবার নওহাটায় অবস্থিত সুর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র টর্চারসেলে পরিণত হয়েছে। ঐ কেন্দ্রে যারা মাদকাসক্ত থেকে মুক্তির জন্য ভর্তি হয়েছেন তাদের উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। সেখানে চিকিৎসার নামে চলে অপচিকিৎসা। নেই কোন রেজিষ্টার্ড ডাক্তার। নিজেরাই শুধু ঘুমের ট্যাবলেট ও ইনজেকশন দিয়ে রোগিদের অচেতন করে রাখে। আর মাসে মাসে নেন রোগির অভিভাবকদের নিকট হতে মাসিক টাকা। শুধু তাইনয় বিভিন্ন চিকিৎসার নামে প্রতিমাসে নেন আরো হাজার হাজার টাকা।
এছাড়াও ঐ প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ। নেই খাবার মান। এমটাই বলছিলেন রাজশাহী জর্জ কোর্টের শিক্ষানবীশ আইনজীবী শিরিন সুলতানা মেঘলা। মেঘলা বলেন, তারা দুই বোন ও এক ভাই। ভাই তোফাইরুল ইসলাম রাহাত সবার ছোট। কোন কারণে তিনি বিপথে চলে গেছেন। তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকাসক্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে ছোট ভাইকে পবার নওহাটার সুর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ২০ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখ ভর্তি করেন। সেখানে চলছিলো চিকিৎসা। তারা জানেন ঐ নিরাময় কেন্দ্রে তাঁর ভাই ভালো আছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা। তার ভাইকে অমানবিকভাবে মারপিট করে পা ভেঙ্গে দিয়েছে ঐ নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকসহ তার লোকজন। শুধু পা ভেঙ্গেই দিয়েই তারা ক্ষ্যান্ত হননি বিনা চিকিৎসায় তাঁকে আটক করে রেখেছিলেন।
চলতি মাসের ১৪ তারিখ শনিবার বেলা ১০টার দিকে এক লক্ষ টাকা দাবী করে পরিচালক। টাকা না দিতে পারায় তারা তার ভাইকে মেরে পা ভেঙ্গে দেন। এ ঘটনা তারা জানেন না বলে জানান শিরিন সুলতানা মেঘলা। তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন নিউমার্কেট ষষ্টিতলায় তাদের জায়গায় উপরে বহুতল ভবন করার জন্য ডেভেলপারকে বাড়ি ভিটা দেবেন। এনিয়ে তার ছোট ভাই তোফাইরুল ইসলাম রাহাত এর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সাক্ষাত করতে চাইলে ঐ তথাকথিত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক ফেরদৌস হাসান (৩২) সূর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ম্যানেজার নওহাটা নতুনপাড়ার রতন কুমারের ছেলে শুভ কুমার বনি (২৯) ও গোদাগাড়ী থানাধীন কেল্লাবাড়ইপাড়ার মইনুদ্দিন আহম্মেদ এর ছেলে সূর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের স্টাফ ইমতিয়াজ আহম্মেদ ও ডালিম তাদেরকে দেখা করতে দেবেন না বলে জানান।
এই আইনজীবী আরো বলেন, গত ১৯সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ বেলা অনুমান ১১টার দিকে বসত বাড়ী বন্টন নামা বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে তিনি ও তার ভাবী ফারজানা আক্তার এবং ভাইয়ের শশুর আফান সরকার সূর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র গেলে উপরোক্ত বিবাদীগণ প্রথমে রাহাত এর সাথে তাদেরকে দেখা করতে দেবেনা না জানান। পরবর্তীতে পরিচালক ফেরদৌস এসে তাঁকে নিয়ে উপরে যান। এ সময়ে তিনি ভাই তোফাইরুল ইসলামকে আজকের জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে চান। এতে ঐ বিবাদীরা তাঁর উপর চড়াও হলে তার সন্দেহ আরো প্রকোট হয়। এ সময়ে তিনি তাঁর ভাবীকে সহ অন্যান্যদের ডাকেন।
তখন ভবনের ২য় তলায় তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার ভাই ঘটনার বিস্তারিত বলেন। এঘটনা বিবাদীগণ শুনতে পেয়ে তাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতেন বলেন। আর এ নিয়ে বেশী বারাবারি করলে তাদেরকে খুন করে গুম করে ফেলবেন বলে হুমখী দেন ফেরদৌস গংরা। এ বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিক পবা থানাকে অবহিত করলে থানা পুলিশ এসে সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তিনি আরো বলেন, তার ভাই গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালে নিয়ে আসলে প্রথমে ডাক্তার তাঁকে ভর্তি নিতে গড়িমসি করেন। পরে এক্সরে রিপোর্ট দেখে তাঁর ভাইকে ভর্তি করেন বলে জানান মেঘলা।
এনিয়ে তাঁর ভাবী ফারজানা আক্তার বাদী হয়ে পবা থানায় বিবাদী পরিচালক ফেরদৌস হাসান (৩২) সূর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ম্যানেজার নওহাটা নতুনপাড়ার রতন কুমারের ছেলে শুভ কুমার বনি (২৯) ও গোদাগাড়ী থানাধীন কেল্লাবাড়ইপাড়ার মইনুদ্দিন আহম্মেদ এর ছেলে সূর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের স্টাফ ইমতিয়াজ আহম্মেদ ডালিম সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পবা থানা পুলিশ শুভ কুমার বনি (২৯) ও ইমতিয়াজ আহম্মেদ ডালিমকে আটক করতে পারলের ফেরদৌস পালিয়ে যাওয়ার তাকে আটক করতে পারেনি বলে জানান তিনি। আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন বলে জানান মেঘলা। তিনিসহ পরিবারের সবাই ঐ সকল সন্ত্রাসীদের বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবী জানান। সেইসাথে কথিত অত্র নিরাময় কেন্দ্রের নামে টর্চারসেল এর কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
এদিকে অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্নধার ফেরদৌস এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার কোন প্রকার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।