মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী জেলা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ

  • প্রকাশ সময় সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৮ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্বে এখনো অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। দীর্ঘ একযুগ ধরে ট্রাক মালিক সমিতির কোন নির্বাচন হয় নাই। সভাপতি আবুল কালাম আজাদ তার পেশি শক্তি খাঁটিয়ে ও বিগত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার দলীয় রাজশাহী মহানগরের কিছু নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ ভাবে সভাপতির চেয়ার দখল করে আছেন। আবুল কালাম আজাদ তাঁর প্রভাব খাঁটিয়ে ট্রাক মালিক সমিতিতে কোন নির্বাচন ও করতে দেন নাই বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত স্বৈরাচার সরকারের শাসন আমলে স্বৈরাচার সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে ও তার চেয়ার ধরে রাখতে নির্বাচন থেকে শুরু করে এমন কোন অনৈতিক কর্মকান্ড নাই যে তিনি স্বৈরাচারী সরকারের কার্যকালাপে সহযোগিতা করেন নাই। তিনি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে স্বৈরাচারী সরকারের সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করেছেন। এখন তো স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে, ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নিজেকে বিএনপির নিবেদিত প্রান বলে দাবি করছেন।
ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে বারশ যানবাহন চলাচল করে। এই সকল যানবাহন থেকে চারটি টোকেনের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক্টর থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হতো ৫ই আগষ্টের আন্দোলনের আগ পর্যন্ত। রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় চলাচলকারী যানবাহন দাঁড় করিয়ে ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এর নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনীর ৭-৮ জন প্রতিদিন লাঠি হাতে করে চাঁদা আদায় করে। মাসে অন্তত তিনি অর্ধ কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন করান। এই চাঁদা দির্ঘ এক যুগ ধরে চলমান ছিলো। চাঁদা আদায় করে সভাপতি আবুল কালাম আজাদ গড়েছেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এতে করে ট্রাক চালক ও মালিকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিলেও এর কোনো সমাধান হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় ট্রাক টার্মিনালের সামনে ঢাকা-চাঁপাইনাববগঞ্জ ও রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের পাশে লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ৭-৮ জন ব্যক্তি। ট্রাক টার্মিনালের সামনে আসামাত্র ট্রাকগুলো লাঠি হাতে নিয়ে ইশারা করে দাঁড় করাচ্ছেন তাঁরা। এর পর সেই ট্রাক থেকে চারটি স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে।
এর মধ্যে ৩০ টাকার একটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহী ট্রাক টার্মিনালের ঠিকাদারের নামে, ৩০ টাকার আরেকটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহী জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে, ৩০ টাকার অপর একটি সিল্প ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহী জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নামে এবং ১০ টাকার একটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হতো রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালিত হাসপাতালের উন্নয়ন ব্যায়ের নামে। একইভাবে নগরীর বিআরটিএ ভবনের সামনেও ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরি দাঁড় করিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক হয়ে যেসব পন্যবাহী যানবাহন ঢাকার দিকে যেত সেসব যানবাহন থেকে একইভাবে চাঁদা তোলা হচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতি করে এখন ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নিজেকে বিএনপির নিবেদিত প্রান বলে দাবি করছেন।
চাঁদা প্রদানকারী ট্রাক চালক লালন উদ্দিন ও আসগর আলী বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর কয়েক দিন এখানে চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। হঠাৎ করে আবার শুরু হয়েছে। গাড়ী দাঁড় করিয়ে ‘তাদের নিকট থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছে। পাথর ও অন্যান্য পন্য বোঝাই ট্রাক হঠাৎ দাঁড় করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তার পরেও লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকরা কয়েকটা রশিদ হাতে ধরে দিয়ে টাকা নিল। দিতে না চাইলে গাড়ী যেতে দেবে না তারা। তাই বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হয়। যে চাঁদা উঠানো হয় এই টাকার মুখ সাধারণ শ্রমকিরা কখনোই দেখতে পায় না। এই টাকা ভাগ হয় শ্রমিক এবং মালিক সমিতির নেতাদের মাঝে। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাক ট্রার্মিনালের নামে চলন্ত ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির কোনো এখতিয়ার নাই। তার পরেও জোর করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে তাদের নিকট হতে।
ট্রাক মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, মালিক সমিতির মিটিংয়ে মালিকদের দীর্ঘ এক যুগ ধরে আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নিকাশ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রদান করেন নাই। এদিকে ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংগঠন চালানোর জন্য চাঁদা আদায় করতে হচ্ছে। এই টাকা শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা বলেন, ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিএনপির কেউ নন। আবুল কালাম আজাদ রাজশাহী মহানগর বিএনপির কোন পদে কখনো ছিলেন না। তিনি আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের দোসর। তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin