নিজস্ব প্রতিবেদক: যেখানেই যাই সেখানেই পরিবর্তনের ছোঁয়া রেখে যান। গত ১১এপ্রিল ২০২২ সালে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সরকারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে প্রথমে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য ও পরিবেশ উন্নয়নের মনোযোগ দেন। কথাগুলো বলছিলেন অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস যদি নোংরা ও অগোছালো থাকে তাহলে শিক্ষার পরিবেশ থাকেনা। এজন্য তিনি প্রথমে পরিবেশ উন্নয়নের দিকে নজর দেন এবং বাগান তৈরী করেন। সেইসাথে প্রতিদিন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করান।
অধ্যক্ষ আরো বলেন, প্রতিটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিফিন এর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তিনি এখানে এসে দেখেন মর্নিং এবং কলেজ শাখায় কোন টিফিনের ব্যবস্থা নাই। তিনি এরও ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, একটানা ক্লাসের এক ঘেয়েমি ভাব দূর করে। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করার জন্যই তিনি এই ব্যবস্থা করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এতে করে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে আসতে আগ্রহী হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি যোগদানের পরে দেখেন ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেক কম। এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য তিনি সপ্তাহে তিনটি করে ক্লাস টেস্টের ব্যবস্থা করেন। সেইসাথে ক্লাস টেস্ট ও আচরনের উপরে নম্বরের ব্যবস্থা করায় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। এছাড়াও গাইড টিচার নিয়োগ করে তার অধিনে ২৫ থেকে ৩০জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে টিম করে দেয়া হয়। আর ক্লাস মনিটরিং এর জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরন করায় শিক্ষার্থীরা আরো উপকৃত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ক্লাসে ও পুরো ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় নিরাপত্তা ও ক্লাস মনিটরিং বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ফলাফলের মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি। ভাল ফলাফল যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ আরো বলেন, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সরকারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজে সহ শিক্ষা কার্যক্রম ছিলোনা। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহ-শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন। এর মধ্যে রয়েছে রেড ক্রিসেন্ট, রোভার, গার্লস গাইড, স্কাউট, বিতর্ক ক্লাব, কবিতা আবৃতি, প্রাকৃতিক সংঘ, নিয়মিত গান, নিজ চর্চা, স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ডক্টরস ক্লাব, ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন ক্লাব গঠন ও পরিচর্যা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুধু এগুলো করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। তিনি প্রতিটি খেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করেন। এরমধ্যে রয়েছে ফুটবল, মেয়েদের হ্যান্ড বল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেট বল, ছেলে ও মেয়েদের জন্য ক্যারম, দাবা, ক্রীকেট ইত্যাদি। এই সমস্ত খেলাধুলা ও সহশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা অনেক আনন্দের মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া করতে পারে। তিনি আরো বলেন, অনেক সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষুধা লাগলে বাহিরের খাবার খেত। এত তারা অনেক সমস্যার পড়তো। এ অবস্থা থেকে মুক্ত রাখতে তিনি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি পরিপূর্ন ক্যান্টিন এর ব্যবস্তা করেছেন। সেখানে সর্বদা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়।
অধ্যক্ষ আরো বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে। আর প্রতিদিন অভিভাবকদের বসার কোন স্থান ছিলোনা। তিনি যোগদানের পরে অভিভাবকদের বসার সুব্যবস্থা করেছেন। সেইসাথে দর্শণার্থীদের জন্য ওয়েটিং রুম তৈরী করেছেন। সেইসাথে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার স্বার্থে সুন্দও লাইব্রেরী ও জাতীয়ী ও স্থাণীয় পত্রিকার ব্যবস্থা করেছেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি প্রথিষ্ঠানের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিও জন্য সুসজ্জিত গেট এবং নামফলক তৈরী করেছেন। আগামীতে আরো কাজ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে ১৩ নভেম্বর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে আন্তঃ শ্রেণি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সরকার অসীম কুমার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার এই প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য এবং শিক্ষা কার্যক্রম দেখে অনেক প্রসংশা করেন।