নিজস্ব প্রতিবেদক: কালের বিবর্তনে দখল-দূষণে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল রাজশাহীর গাঙপাড়া খাল। দীর্ঘ ৪৭ বছর পর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে খালটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ ও কচুরিপানাসহ দখল-দূষণ মুক্ত করায় এই খালের প্রকৃত সৌন্দর্যের দেখা মিলতে শুরু করেছে।
পাশাপাশি পুণরায় সংস্কারের মাধ্যমে পানি প্রবাহের ফলে ফিরে পেতে শুরু করেছে হারানো যৌবন। এখন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলছেন, খালটি রাজশাহী মহানগরী ও বিমান বন্দরের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। তা করতে পারলে ভিড় জমাবে সব বয়সী দর্শনার্থীরা।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের কোনো কাজ যেন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব না ফেলে তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সেই দিক বিবেচনায় দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্রটি হবে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শিল্পের ছোঁয়ায়। সেই লক্ষ্যে গাঙপাড়া খালসহ নগরীর বিভিন্ন খালের খনন, সংস্কার ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনসহ আধুনিকায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট ডিজাইন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘আমরা বিনোদনের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করি। কিন্তু আনন্দ করতে গিয়ে অজান্তেই পরিবেশের ক্ষতি করে থাকি। এর প্রমাণ হলো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ও এর আশেপাশের এলাকা অপরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠা। পর্যটন স্থানের উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়া, নদী-নালার পানি ময়লায় ভরে যাওয়া ও দুর্গন্ধময় হওয়া, পশুপাখির স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি। জীববৈচিত্র্যের সঠিক পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি খালটি পরিষ্কার রাখতে জনসাধারণকে আর ময়লা-আবর্জনা না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর আরও জানান, খাল-বিলের পানি এই অঞ্চলে বিশেষ করে এর বিস্তীর্ণ বরেন্দ্রভূমিতে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, বিডি ক্লিন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে অভিযানের আওতায় গাংপাড়া খালের ১১ কিলোমিটার এলাকা পরিচ্ছন্ন করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। পরবর্তীতে দুয়ারী ও জিয়া খালকেও অননুমোদিত দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে অভিযানের আওতায় আনা হবে। এ অগ্রগতির মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীর ৮০ শতাংশ খাল অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নওহাটা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মকবুল হোসেন বলেন, গাঙপাড়া খালটি হচ্ছে বারনই নদীর ধমনি। এক সময় এই খালের মাধ্যমে বারনই নদীতে পানি প্রবাহিত হতো। আমি ছোটবেলায় দেখেছি বায়া ব্রিজ হওয়ার অনেক আগে এখানে একটি ঘাট ছিল, যেখানে নৌকা দিয়ে পাড়াপাড় হতাম। এমনকি আমার বাপ-দাদারাও গাঙপাড়া খাল দিয়ে নৌকা নিয়ে নওহাটা হাটে আসতেন। আমি প্রত্যাশা করবো এটি যেন শুধু পরিচ্ছন্নতা অভিযানেই সীমাবদ্ধ না থেকে স্থায়ী পরিকল্পনা করে খাল উদ্ধার ও পুনঃখনন করে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করে জনগণের দুর্দশা লাঘব করা হয়।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীর জলবদ্ধতা দূরীকরণ, খাল খনন ও ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব নির্মূলের অংশ হিসেবে গাঙপাড়া খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.এবিএম শরীফ উদ্দিন। শনিবার সকালে বায়া ঈদগাহ সংলগ্ন খালের কচুরিপানা অপসারণসহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। পরিচ্ছন্নতার এ অভিযানে ৫টি ইউনিটে বিডি ক্লিনের ৩৫২ জন স্বেচ্ছাসেবী ও রাসিকের ১০০ জন পরিচছন্ন কর্মী ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্য, ফায়ার সার্ভিসবৃন্দ নিয়োজিত রয়েছে।
জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে গত ১ নভেম্বর রাজশাহী বায়া ব্রিজ চত্বর এলাকায় বায়া খাল পরিষ্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। রাজশাহী মহানগরীকে ডেঙ্গু ও দূষণমুক্ত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বায়া ব্রিজ এলাকার গাঙপাড়া খালের সাড়ে ১১ কি.মি. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব নির্মূলের অংশ হিসেবে গাঙপাড়া খালে পরিষ্কার অভিযান শুরু করেছে- বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে গাঙপাড়া খালের মুখে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দুয়ারী খাল ও জিয়া খালের অবৈধ দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে এই অভিযানের আওতায় আনা হবে।
পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার আক্তার জামীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহিনুল হাসান, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ-পরিচালক এ.টি.এম গোলাম মাহবুব, রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মামুন, উপ-প্রধান পরিচছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু, মশক কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন মুন, পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা (মনিটরিং) মুসতাক হোসেন, বিডি ক্লিন রাজশাহীর জেলা সমন্বয়ক শাহদাত হোসেন, রেডক্রিসেন্টের উপ-সহকারী পরিচালক মির্জা শামীম আহসান সহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।