নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের গুরুদাসপুরের রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজে এনটিআরসি সনদ ছাড়াই তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে চারজনকে নিয়োগ দিয়েছেন তৎকালীন অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর তাদেরকে চাকরীতে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এই নিয়োগ বলে তাঁরা ৩০ডিসেম্বর ২০১৫সালে চাকরীতে যোগদান করেন।
প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রাপ্তরা হলেন, ইংরেজি বিভাগে নওরিন জাহান, যার সংযুক্ত তালিকার ক্রমিক নম্বর-৩৩, সমাজ কল্যাণ বিভাগে সীমা খাতুন, যার সংযুক্ত তালিকার ক্রমিক নম্বর-৩৪,অর্থনীতি বিভাগে আবু হানিফ যার সংযুক্ত তালিকার ক্রমিক নম্বর-৩৫ ও মনোবিজ্ঞান বিভাগে আজিরন খাতুন যার সংযুক্ত তালিকার ক্রমিক নম্বর-৩৬। সবাই ‘ঘ’ তালিকা ভুক্ত। এখন তারা এমপিও ভূক্তির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আর তাদের সহযোগিতা করছেন কিছু শিক্ষক। এই এমপিও এর জন্য তারা লক্ষ লক্ষ টাকাও ব্যায় করছেন বলে জানা গেছে।
অত্র কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মাহতাব উদ্দিন জানান, গত ২০১৫ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ ইব্রাহিম হোসেন ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদ এর সভাপতি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দস এর আপন মেয়ে জামাই আবুল কাশেম জন প্রতি ৩লক্ষ করে টাকা নিয়ে ক্ষমতা দেখিয়ে অবৈধভাবে এই নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়াও তাঁরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবলও নিয়োগ করেছেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে ঐ সকল অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্তদের এমপিও ভূক্তির জন্য বিপুল অর্থের বিনিময়ে তদবীর করছেন অত্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ হোসেন।
অধ্যক্ষ আরো বলেন, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আবু হানিফ এনটিআরসি এর যে সনদ আবেদনের সময় সংযুক্ত করেছিলেন তা জাল বলেও প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্য তিনজনের এনটিআরসি নেই তাও প্রমানিত বলে জানান তিনি। এক কথায় কারোই এনটিআরসি সনদ নাই। এ নিয়ে অত্র কলেজ এবং গুরুদাসপুর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গুরুদাসপুর এলাকার শুধি সমাজ, অত্র কলেজের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ও ঐ সকল ভূয়া প্রভাষকদের দ্রুত অপসারণ করার দাবী জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। সেইসাথে তাদের এবং যারা ঐ সকল ব্যক্তিদের অর্থেও বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেছেন এবং বর্তমানে যারা তাদের এমপিও করানোর জন্য তৎবীর করছেন তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে সোমবার (২৫ নভেম্বর ২০২৪) মধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহা. আছাদুজ্জামান এর নিকট কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের উপরোক্ত চারজন প্রভাষকের এমপিও করার জন্য তারা বেশ কিছুদিন থেকে চেষ্টা করছেন। তিনি এখানে নতুন এসেছেন। এসে ঐ চারজনের প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখে এবং পর্যালোচনা করে দেখেন কারোই এনটিআরসি সনদ নেই।
এজন্য তাদের এমপিও ভূক্তি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোনদিনও তাদের এমপিও হবেনা বলেও জানান তিনি। কারন ২০০৫ সাল থেকে কলেজ ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রভাষক ও শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসি সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য এনটিআরসি সনদ ব্যাতিত কোনভাবেই কলেজ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ বৈধ হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, উপরোক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ঐ চারজনই অবৈধ। তাদের চাকরীচ্যুত করতে কোন বাধা নেই। কলেজের পরিচালনা পর্ষদ যে কোন সময়ে তাদের চাকুরীচ্যুত করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন পরিচালক প্রফেসর মোহা. আছাদুজ্জামান।