মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:২৬ অপরাহ্ন

রাজশাহীর ৩নংওয়ার্ডে টিসিবির কার্ড কেড়ে নেয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

  • প্রকাশ সময় বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২৯ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ৩নং ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি লোক পাঠিয়ে টিসিবির কার্ড কেড়ে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অত্র ওয়ার্ডের কিছু নারী বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা শাখার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ তোলেন। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা। তাই কার্ড দেওয়ার সময় তিনি দলীয়করণ করেছিলেন। এখন তালিকা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।

রাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি কার্ডের সুবিধাভোগী ২ হাজার ৫৩৩ জন। এরমধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন দাসপুকুর মহল্লার নিলুফা বেগম, দোলকজান বেওয়া, জোসনা বিবি, সালেহা বেগম, প্রতিবন্ধী মাসুমা আক্তার রিতু, সখিনা ইসলাম, সালেহা বিবি, নিমতলা মহল্লার রহিমা বেগম, ফাতেমা বেগম এবং ডিঙ্গাডোবার সাবিনা ইয়াসমিন।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রহিমা। তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে তার প্রতিমাসে একবার সয়াবিন তেল, মশুর ডাল ও চাল টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে পেয়ে আসছেন। গত নভেম্বরে মাসে তারা টিসিবি কার্ড নিয়ে বরাদ্দকৃত মালামাল নেওয়ার সময় স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাদেরকে বলেন যে এই কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই কার্ডে আর টিসিবি চলবে না।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘তারপর মহানগর বিএনপি সদস্য তাজউদ্দীন সেন্টু, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের আমীর মনিরুজ্জামান এবং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতারা তাদের এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার্ড তুলে নিয়েছেন। তারা তাদের কার্ড দেননি। ারা ওয়ার্ড সচিবের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ওয়ার্ড সচিবকে বদলি করা হয়েছে। তাজউদ্দীন সেন্টু কাউন্সিলর অফিসের সামনে বলেছেন যে, “তারা বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী সমন্বয় করে কমিটি করেছেন, অতীতের সব কার্ড বাতিল।” তাদের সরকারী বরাদ্দকুত কার্ড এভাবে বাতিল করা যায় কি না প্রশ্ন করেন?’

এই নারীরা বলেন, তারা দরিদ্র বলেই কার্ড পেয়েছিলেন। অতীতে পেয়েছিলেন বলে তাদের বাদ দেওয়া হবে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের দাবি, কার্ড যেন বাতিল করা না হয়। তারা জানান, কয়েকদিন আগে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা রাসিকের ওয়ার্ড কার্যালয়ে যান এবং কার্ড বাতিলের চাপ দেন। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কার্ড বাতিল করতে রাজি না হওয়ায় তারা ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব আহাদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে তাকে বদলি করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে আহাদ আলী বলেন, নগর ভবন তাকে বদলি করেছে। বৃহস্পতিবার তিনি নতুন কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। আহাদ বলেন, ‘৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকার সময় কিছু লোক তার কাছে আসেন এবং কার্ড বাতিলের চাপ দেন। তিনি তাদের বলেন, এভাবে তিনি কার্ড বাতিল করতে পারেন না। তারা যেন নগর ভবনে যান। তারপর কী হয়েছে বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি।’

জানতে চাইলে ওয়ার্ড জামায়াতের আমীর মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপির লোকজন তালিকা হালনাগাদ করছেন বলে জানি। একটা কমিটিও হয়েছে। কিন্তু জামায়াত এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কেউ যদি এ ধরনের কথা বলে থাকে তাহলে সেটা অমূলক।’

বিএনপি নেতা তাজউদ্দীন সেন্টু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন কাউন্সিলর থাকাকালে টিসিবির কার্ড দলীয়করণ করেছিলেন। এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ নেই, তারা তালিকা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত সবাই মিলেই কাজটা করছেন। তবে তারা কারও বাড়ি থেকে টিসিবির কার্ড কেড়ে আনছেন না। কার্ড কেড়ে এনে তো লাভ নেই। এসব কার্ড এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। তারা শুধু বাড়ি বাড়ি তথ্য নিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।’

তিনি জানান, টিসিবির কার্ড বাতিলের দাবি নিয়ে তারা রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দীনের কাছে যান। তখন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে আহ্বায়ক কমিটি করে একটি চিঠি দিয়েছেন। কমিটিতে জামায়াতেরও লোক আছেন। মোট ছয় সদস্যের এই কমিটি এখন কার্ড হালনাগাদ করার কাজ করছে। তাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি।

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দীন কোন কমিটি করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি কোন কমিটি করলে সিটি কর্পোরেশনের লোক দিয়ে করতে পারেন, অন্য কাউকে দিয়ে তো কমিটি করতে পারেন না। কার্ড হালনাগাদ করতে হলে সেটা সিটি কর্পোরেশনই করবে। অন্য কেউ তো এটা করতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পলিটিক্যাল লোকজন কার্ড বাতিলের আবেদন নিয়ে এলে তিনি অত্র কর্পোরেশনের দুজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। তাদের বলেন, যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সেটা হালনাগাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুই কর্মকর্তা সরেজমিনে ঘুরে এসে তাকে জানান যে, কোথাও কোন সমস্যা নেই। সমস্যা থাকলে তো তারা তাঁকে বলতেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, দলীয় নেতাদের কথায় তিনি ওয়ার্ড সচিব আহাদকে বদলি করে দিয়েছেন।

সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া চিঠি দেখতে চাইলে বিএনপি নেতা তাজউদ্দীন সেন্টু বলেন, তাদের দলেরই এক ছেলের কাছে চিঠিটা আছে। তার কাছ থেকে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেব।’ পরে অবশ্য তাজউদ্দীন সেন্টু হোয়াটসঅ্যাপে কোন চিঠি পাঠাননি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin