নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি’র নয়া পরিচালক হরেন্দ্র নাথ সিং কে অপসারণের দাবীতে বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এর মাধ্যমে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও সংসকৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন আদিবাসী ও ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমিতে হরেন্দ্রনাথ সিং কে পরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তাকে পরিচালক পদে বহাল রাখা হলে বৃহত্তর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হবে।
তারা আরো উল্লেখ করেন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, রাজশাহী হতে পরিচালক পদের জন্য দরখাস্ত আহবান করা হয়েছিল। হরেন্দ্রনাথ সিং ভাতে আবেদন করেননি এবং বিধি বর্হিভূতভাবে তাকে চুক্তিভিত্তিক পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। সিং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত নয় এবং সিং জনসংখ্যা অতি নগন্য। ১৯৫০, ২০১০, ২০১৯ সালের তালিকায় সিং তালিকাভুক্ত নয়। তাকে নিয়োগের ফলে বৃহত্তর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিবাসীদের (সাঁওতাল, ওরাঁও সহ অন্যান্য) প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা হয়েছে।
তারা বলেন, হরেন্দ্রনাথ সিং ফ্যাসিবাদী পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সমর্থক। এছাড়াও তিনি জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ঢাকা জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ এর সহযোগি ওয়ার্কাস পার্টির অঙ্গ সংগঠন। হরেন্দ্রনাথ সিং জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ওয়ার্কাস পার্টির নেতার বিশস্ত ও একনিষ্ঠ কর্মী।
শুধু তাইনয়জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাথে ভারতের নিচ্ছিন্নতাবাদী মাওবাদী সংগঠনের গোপন যোগসূত্র রয়েছে। মাওবাদীদের সাথে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রয়াত সভাপতির যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্রে হজেন্দ্রনাথ সিং মাওবাদী সংগঠনের একজন গুপ্তচর।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার আদায় সংগ্রামের নামে আদিবাসীদের চরম ক্ষতি সাধন করে চলেছে। যার ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাঝে বিবাদ, বিভাজন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এবং বাঙ্গালীদের মাঝে শাড়ি, সহাবস্থান, সম্প্রীতি, ভাতৃত্ব এবং ঐক্যের অবনতি ঘটছে, যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করে দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত করতে অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে তারা কমিশনারের সামনে উপস্থাপন করেন।
স্মারকলিপিতে তারা আরো উল্লেখ করেন হরেন্দ্রনাথ সিং এর নিজস্ব কোন ভাষা ও সংস্কৃতি নেই। যা বিলুপ্তপ্রায়। তার দ্বারা বৃহত্তর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। তিনি একজন অযোগ্য, অদক্ষ, অহমিকা সম্পন্ন ব্যক্তি। তার পরিচালক পদে থাকার মত যোগ্যতার অধিকারী নয়। তাকে পরিচালক পদে বহাল রাখা হলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রসার কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিবাদ, বিভাজন, অনৈক্য, সংযাত, হানাহানি বৃদ্ধি পাবে।
এ সব কিছু বিবেচান করে পরিচালক পদ থেকে হরেন্দ্রনাথ সিং কে অনতিবিলম্বে অপসারণপূর্বক একাডেমিকে কলুষ মুক্তকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানান। উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কথা ও স্মারকলিপি দেখে বিভাগীয় কমিশনার বলেন তিনি এ নিয়ে কোন প্রকার মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে আপনাদের প্রদানকৃত স্মারকলিপি যথাস্তানে প্রেরণের ব্যবস্থা করবেন।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জজ কোর্টের এপিপি নরেন্দ্রনাথ টুুটু, ধামইরহাট মহিলা কলেজের অধ্যাপক এমসি আলবার্ট সরেন, সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক এর সাবেক এপিএস জাকারিয়াস মুর্মু, আদিবাসী নেতা পাউল টুডু, গাব্রিয়েল মারান্ডি, মেকায়েল বাস্কে, পাউলুস সরেন, আদিবাসী মুক্তিমোর্চা রাজশাহী মহানগরের সভাপতি ভাদু বাস্কে, আদিবাসী নারী নেত্রী সবিতা টুডু, আদিবাসী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি(আসারু) এর সদস্য ধনেশ টুডু, সদস্য সোমা হাঁসদা ও সুইটি মার্ডি, এনএজিআর এর সদস্য সুবাশ মার্ডি, গোদাগাড়ী উপজেলা পারাগানা বাইশির সভাপতি বাবুলাল মুর্মু, রাজশাহী মহানগরের ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলাম ও মুজলেশন পরিষদের সভাপতি শাহাদত হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।