নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই হাতে গুলি চালিয়ে আলোচনায় আসা রাজশাহীর সন্ত্রাসী জহিরুল হক রুবেল মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে এক স্কুল শিক্ষকের তিন কাঠা জমি দখল করে নেন। এক ব্যক্তিকে বিক্রেতা দেখিয়ে ওই জমি তিনি বেচে দেন পুলিশের এক কনস্টেবলের কাছে। ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এমনই অভিযোগ করেছেন।
এতদিন প্রাণের ভয়ে রাকিবুল ইসলাম নামের ওই স্কুল শিক্ষক নিজের জমিতেই যেতে পারেননি। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর যুবলীগকর্মী জহিরুল হক রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে রাকিবুল নিজের জমিতে গিয়েছেন। সেখানে সাইনবোর্ডও দিয়েছেন। শনিবার রাজশাহী নগরের হড়গ্রাম মৌজার ওই জমির সামনের রাস্তায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রাকিবুল ইসলাম জানান, তার বাড়ি জেলার চারঘাট উপজেলার বাসুপাড়া গ্রামে। তিনি চারঘাটের পাইটখালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ২০১৬ সালে তিনি তার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বিক্রয় কবলা দলিল মূলে বাবর আলী, অসীম ঘোষ ও রংলাল নামের তিন ব্যক্তির কাছ থেকে হড়গ্রাম মৌজার আরএস ৮০৭ নম্বর খতিয়ানের ২৩৪৩ নম্বর দাগের তিন কাঠা জমি কেনেন। এরপর তিনি যথারীতি খাজনা-খারিজ করে নেন। জমিতে সীমানা প্রাচীরও দেন।
তিনবছরআগেএকদিন খবর পানসন্ত্রাসীরুবেলতারজমিরসীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলছে। তিনিছুটেএসে এতে বাধা দেন। তখনসন্ত্রাসীরুবেলতারমাথায়পিস্তল ঠেকিয়েবলেন, এই জমিরুবেলবিশ্বাসনামের এক পুলিশ কনস্টেবলকিনেনিয়েছেন। এই জমিতেআর দাবিনিয়েএলে গুলিকরেহত্যাকরাহবেবলেও স্কুলশিক্ষকরাকিবুলকেহুমকি দেন সন্ত্রাসীরুবেল।
রাকিবুল জানান, এখনও তার নামেই জমির খাজনা চলছে। বাংলা ১৪৩১ সাল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি জেনেছেন, সন্ত্রাসী রুবেল ওই জমি এক ব্যক্তিকে বিক্রেতা দেখিয়ে পুলিশ কনস্টেবল রুবেল বিশ্বাসের কাছে বিক্রি করেছেন। রুবেল বিশ্বাস এখন রাজশাহীর পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ি চালক। ফলে থানায় গিয়েও তিনি প্রতিকার পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সারা জীবনের গচ্ছিত সঞ্চয়ের ২০ লাখ টাকা দিয়ে এই তিনকাঠা জমি কিনেছি। এতদিন সন্ত্রাসী রুবেল ও পুলিশ কনস্টেবল রুবেলের ভয়ে নিজের জমিতেই আসতে পারিনি। ৫ আগস্ট সন্ত্রাসী রুবেল দুই হাতে দুটি পিস্তল নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এই ভিডিও এখনও দেখা যায়। সে এখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। আমি এখন সুবিচার পাব বলে আশা করি। আমি সবার সহযোগিতা চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনস্টেবল রুবেল বিশ্বাস বলেন, ‘২০২১ সালে ওই এলাকায় আমি, আমার স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনেরা জমি কিনেছি। আমি জমি কিনেছি সুকুমার নামের এক ব্যক্তির কাছে। আমি রুবেলকেও চিনিনা, রাকিবুলকেও চিনিনা। কে সংবাদ সম্মেলন করেছে তা বলতে পারবনা।’
এলাকার লোকজন জানান, বলরাম ঘোষ নামের এক ব্যক্তি ও তার চার ছেলের হড়গ্রাম মৌজার প্রায় সাড়ে ৬ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছিলেন সন্ত্রাসী রুবেল। স্বপন ঘোষ নামের এক ভারতীয় নাগরিককে ওয়ারিশ দেখিয়ে এসব জমি তিনি জবর দখল করে জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন। এই চক্রে ছিলেন সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল ওয়াহেদ খান টিটু ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ।
এই চক্রটি জমি জবর দখলের পর বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ৫ আগস্টের পর যুবলীগ কর্মী রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ খান টিটু ও রকি কুমার ঘোষের কোনো খোঁজ নেই। তারা এখন রয়েছেন আত্মগোপনে।