নিজস্ব প্রতিবেদক: মহাধুমধামে অঞ্জলি, আরতি ও পূজা–অর্চনার মধ্য দিয়ে বিজয়া দশমীতে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে মধ্যে বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের সমাপ্তি হয়। গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার পূজা। বুধবার মহানবমীতে রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলো ছিল ঢাকঢোলের বাদ্য ও ভক্তদের ভিড়ে মুখরিত। নবমীতে দেবী দুর্গা অসুরবিনাশী রূপে পূজিত হন।
আনন্দময়ীর বন্দনায় যে উৎসবের শুরু হয়েছিল, দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হয় সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। উৎসব, আনন্দের বর্ণিল দেবীপক্ষ শেষে ভক্তকুলকে বিষাদে ভাসিয়ে মর্ত্যলোক থেকে স্বামীর ঘর কৈলাসে ফিরবেন ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী দুর্গা। এর আগে ভক্তকূল তার বন্দনায় মেতেছেন। নারীরা তাদের নিজ নিজ স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে সিদুর খেলেন।
এদিন রাজশাহীর মণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভীড় দেখা যায়। ঢাকের তালে তালে মন্ত্রপাঠে আনন্দময়ীকে অঞ্জলী দেন ভক্তরা। পূজা ও সন্ধ্যা আরতির মধ্যদিয়ে শেষে বিদায়ের সুর বাজে মণ্ডপগুলোতে। দশমী পূজায় প্রতিমার হাতে জবা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন ভক্তরা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। এ বছর দেবীর আগমন হয়েছিল গজে (হাতি), আর গমন হয় দোলায় চরে।
এদিকে, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিমা বহনকারী যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে বিসর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ লাইন্স ঘাট এবং আই-বাঁধ ঘাট, কুমারপাড়া মোড় হতে ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোড়, মধু ভ্যারাইটি স্টোর মোড়, আতিয়া স্টোর মোড়, মুন্নুজান স্কুল ও বড় মসজিদ থেকে বড়কুঠি কাস্টমসের গলি শুধুমাত্র প্রতিমা বহনকারী যানবাহনের জন্য একমুখী চলাচলের নির্দেশনা দেন। এ সময় অন্য সব ধরনের যানবাহনের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখেন বলে জানিয়েছে আরএমপি ট্রাফিক বিভাগ।
উল্লেখ্য রাজশাহীতে এবারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এবার জেলাজুড়ে মোট ৪৬২টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৩৮২টি মণ্ডপ গ্রামীণ এলাকায় এবং ৮০টি মণ্ডপ ছিলো মহানগরে। এদিকে পূজা যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো।

রাজশাহী জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয় পূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিলো। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি র্যাবের টহলও ছিলো। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছিলো। পূজা উদযাপন সুন্দরভাবে হয়েছে বলে জানানো হয়।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে রাজশাহীর মাহনগরীর মুন্নুজান ঘাটে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান উপস্থিত থেকে সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন।