নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে মাসোহারা দিতে অস্বীকার করায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে ওই ব্যবসায়ীকে রিমান্ডে নিয়ে ঝুলিয়ে রেখে অমানবিক নির্যাতনেরও।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম গাফফার শেখ (৫০)। শহরের কেদুর মোড় এলাকায় শহররক্ষা বাঁধের ওপর তার ভাঙারি মালামাল কেনাবেচার দোকান রয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে একটি সাইকেল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ করা হয়, তিনি চোরের কাছ থেকে সাইকেলটি কিনেছিলেন। তবে গাফফার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।
সাইকেল চুরির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন নগর ডিবি পুলিশের এসআই হুমায়ুন কবির। তিনি গাফফারের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সব মিলিয়ে ১৭ দিন কারাভোগের পর গত সোমবার জামিনে মুক্তি পান গাফফার।
শনিবার রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে গাফফার লিখিত বক্তব্যে জানান, কিছুদিন আগে ডিবির এসআই হুমায়ুন কবির আমার দোকানে এসে বলেন, যেহেতু দোকান সরকারি জায়গায়, তাই আমাকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি গরিব মানুষ, দিতে পারব না বললে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
তিনি আরও জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ডিবির এসআই হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে একটি দল তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন বোয়ালিয়া থানায় সাইকেল চুরির মামলা হয়। ওই মামলায় তাকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। অভিযোগ করা হয়, এক চোরের কাছ থেকে তিনি ৯০০ টাকায় সাইকেল ক্রয় করেছেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরে একদিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয় চোরাই সাইকেল কেনার কথা স্বীকার করানোর জন্য। কিন্তু তিনি মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হননি বলে জানান।
গাফফার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, “অসুস্থতার কারণে তিনি সেদিন বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। কোনো কথা না বলেই তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার দুই হাত উপরের দিকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তারা বলেন, চোরাই সাইকেল কিনেছিস, কোথায় রেখেছিস বের করে দে। তিনি বলেন তিনি চোরাই মালামাল কিনেননি। তখন এসআই হুমায়ুন কবির বলেন, স্বীকার কর, না হলে ঝুলিয়েই রাখব, মাদক ও বিস্ফোরক মামলা দেবে বলে হুমকী দেন হুমায়ন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতে পাঠানো পর্যন্ত তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কিছু খেতে দেওয়া হয়নি, পানি পর্যন্তও না। তিনি অসুস্থ মানুষ, ওষুধ খেতে চেয়েও পারেননি। আটক অবস্থায় ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল, দিলে ছেড়ে দিত বলে জানানো হয়। রিমান্ডেও একইভাবে নির্যাতন করা হয়। দুদিন ধরে ঝুলিয়ে রেখেছিল।
নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে গাফফার বলেন, তিনি জামিনে বের হয়ে এখনো নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যেকোনো সময় মাদক বা বিস্ফোরক মামলায় ফাঁসানো হতে পারে। ডিবি অফিসে নির্যাতনের কথা প্রকাশ করলে তাকে ও তার ছেলেকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে এসআই হুমায়ুন কবির। দোকান খুলতে দিচ্ছে না, বলেছে খুললে আবার ধরে নিয়ে যাবে। তিনি গরিব মানুষ, দোকান না খুললে সংসার কিভাবে চলবে? অতিনি নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার চান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গাফফারের মেয়ে জামাই জীবন। এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন গাফফারের মা সাজেদা বেওয়া।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এসআই হুমায়ুন কবিরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। নগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান বলেন, এ রকম সংবাদ সম্মেলনের কথা তিনি জানেন না। তবে অভিযোগ পেলে তারা তদন্ত করে দেখবেন। লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।