নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলের প্রবাহিত নদী, খাল ও জলাশয় অবৈধ দখলমুক্ত, দূষণরোধ ও পুনঃখনন করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), রাজশাহী জেলা কমিটি। বুধবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপির মাধ্যমে এসব দাবি জানানো হয়। এ সময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এসব বিষয়ে নিজের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
স্মারকলিপি প্রদানকালে বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য জামাত খান. বাপা রাজশাহী জেলা সভাপতি প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক জুয়েল কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম, উপদেষ্টা সাংবাদিক শ.ম সাজু, মামুন-অর-রশিদ, এডভোকেট সাফিকুল ইসলাম, গ্রীণ ভয়েস রাজশাহীর সভাপতি রাবেয়া খাতুন, বাপা কোষাধ্যক্ষ মোহা. জাহিদ হাসান, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম নবী রনি, আল-আমিন, সাবেক ছাত্রনেতা রায়হান সম্রাট ও রাশেদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মাকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগরী রাজশাহী। জেলার অভ্যন্তরে বিভিন্ন নদী, খাল ও জলাশয় বিদ্যমান। এক সময় এ সকল নদী, খাল ও জলাশয়ে ছিলো প্রাণচঞ্চলতা।
তবে অবৈধ দখলদার ও বিভিন্ন সরকারি দফতরের অতদারকির কারণে নদী, খাল ও জলাশয়সমূহ ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। এ কারনে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বরা হয়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে। কৃষিকাজে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই অঞ্চল এখন মারাত্মক জলসংকটের মুখে। একই সঙ্গে পদ্মা নদীর পাড় দখল, দূষণ ও পানি প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় নদীর পাড়ে ভরাট ও চর গঠনের প্রবণতা বেড়ে গেছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয় পদ্মা, শিব-বারনই, হোজা, মালঞ্চ, মুসা খাঁ, বড়াল ও নারদ মৃত্যপ্রায়। এসব নদীতে আর কোন নৌকা চলাচল করে না। আগে এসব নদীতে ধরা পড়ত প্রচুর মাছ। নদীর সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। কিন্তু এখন এসব শুধুই অতীত। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সময়ে নদীর উপর নির্ধারিত প্রস্থের তুলনায় অনেক ছোট দৈর্ঘ্যের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, এতে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। দখল-দূষণে হুমকির মুখে পড়েছে নদীগুলোর অস্তিত্ব।
এ অবস্থায় নদীগুলো পুনঃখনন করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সমন্বয়ই নদীর যৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে দেওয়া হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালক, পাউবোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন দফতরে প্রদান করা হয়।