নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ বালুকারবার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় একটি সিন্ডিকেট অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের নাকের ডোগায় এই অবৈধ বালুকারবারে বেহাল অবস্থা সড়কগুলোর। চাপাইনবাবগঞ্জের ইজারাদার রাজশাহী সিমানায় অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগ সাজসে। এছাড়াও তাদের দৌরাত্বে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ও বালুমহালের বৈধ ইজারাদাররা। অবৈধ বালুকারবারের প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন বৈধ বালুমহাল ইজারাদাররা।
এছাড়াও তারা সরকারী নির্দেশা অমান্য করে নদীর ধারে বালু রাখছেন। কিন্তু বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এবং পরিবেশ সংক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আসংখ্যা থাকলে বালু উত্তোলণ ও সংরক্ষণ করা যাবে না। কিন্তু অবৈধ বালু কারবারীরা এর তোয়াক্কা না করে একেবারে গ্রামের সাথে নদীর ধারে বালু রাখছেন এবং সেখান থেকে বিক্রয় করছে। এতে করে ঐ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সেইসাথে। অত্র এলাকা মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এই অবৈধভাবে বালুকারবার বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে শতাধীক এলাকাবাসী। রোববার গোদাগাড়ী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে দেয়া স্মারকলিপিতে পৌরসভার তিনজন কাউন্সিলর আব্দুল জাব্বার, এমদাদুল হক ও জাহানারা বেগম ছাড়াও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ রবিউল আলম স্বাক্ষর করেছেন।
জানা গেছে, একটি সিন্ডিকেট গোদাগাড়ী উপজেলার জোতগোসাইদাস ও ভগবন্তপুর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মজুদ এবং সেখান থেকে পরিবহন করছে। স্থানীয় প্রভাবশালী আনারুল বিশ্বাস ও তার ছেলে ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহীন আকতার রোমেন বিশ্বাস এই বালু সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবৈধ সুবিধার মাধ্যমে ম্যানেজ করে তারা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে এই অবৈধ বালুকারবার। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসীসহ বালুমহালের বৈধ ইজারাদাররা।
স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, পদ্মা থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এতে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধ, মাদ্রাসা ও মসজিদ। এছাড়াও নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে তিনটি গ্রাম। ভারি ট্রাক-লরি ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের কারণে এলাকার সড়কগুলো ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় বালু পরিবহনের কারণে এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া সড়কগুলো নষ্ট হয়ে বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সরকারের।
গোদাগাড়ী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল জব্বার বলেন, প্রশাসনের নাকের ডোগায় এই অবৈধ বালু কারবারে তারা অতিষ্ঠ। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়া হলেও তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। অবৈধ এই বালু কারবারের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ।
অবৈধ ব্যবসায়ীরা এটা করেই খ্যান্ত হননি। বৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রাস্তার মধ্যে থেকে পাইপ অপসারনের জন্য গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসন বরাবরে একটি আবেদন করেছেন বলে জানান বৈধ ব্যাবসায়ীরা। এ নিয়ে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) তাসমিন আরা খাতুন। এসময়ে তিনি স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলেন। সেখানকার বাসিন্দা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড গোদাগাড়ী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান মিলু, এলাকাবাসী আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক, মনিরুল ্ইসলাম টুটুল, দুরুল হুদা, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, ইব্রাহিম আলী, ফারুক আহম্মেদ মিলন, লাইলী ও শওকত আরাসহ অন্যান্যরা বলেন, বালুমহাল ইজারাদার জাহাঙ্গীর হোসেন ও হাসিবুর রহমান বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তারা নদী থেকে রাস্তার নিচ দিয়ে পাইপ দিয়ে বালু উত্তোলন করে গ্রামের অনেক বাহিরে রাখছেন।
এতে গ্রামের কোন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছেনা। তারা আরো বলেন, অত্র এলাকা অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। এই এলাকায় পায় বিশ হাজারের বেশী লোক বসবাস করে। কিন্তু তাদের বাড়িরে সামনে রাস্তা দিয়ে অনর্গল অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বালু ট্রলি, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। এরফলে অনেকে দূর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে। রাস্তার মধ্যে দিয়ে পাইপ দেওয়ায় এলাকাবাসীর অনেক উপকার হয়েছে বলে সহকারী কমিশনারকে( ভূমি) জানান তারা। পাইপের জন্য রাস্তায় স্পিডব্রেকারের ন্যায় হওয়ায় যানবাহন এখানে এসে থামে এবং ধীরে পার হয়।
তারা এই রাস্তায় আরো এই ধরনের স্পিডব্রেকার দেয়ার দাবী জানান। সেইসাথে ভাঙ্গা রাস্তা পরিদর্শন করার অনুরোধ করেন। এ সময়ে এসিল্যান্ড কোন কিছু না বলে জনগণের চাপের মুখে ভাঙ্গা রাস্তা নিজের গাড়িতে বসে পরিদর্শন করে চলে আসেন। এলাকাবাসী দ্রুত এই অবৈধ বালু কারবারীদের ব্যবসা বন্ধ করা এবং রাস্তা সংস্কার করার দাবী জানান।
এদিকে, অবৈধ বালুকারবারে আর্থীকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে বালুমহালের ইজারাদাররা। গোদাগাড়ী উপজেলায় বালুমহাল রয়েছে দুইটি। যা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা দেয়া হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি টাকায় বালুমহাল দুইটি ইজারা নিয়েছেন জাহাঙ্গীর হোসেন ও হাসিবুর রহমান নামের দুই বালু ব্যবসায়ী। এ উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বৈধ বালু ব্যবসায়ীরা।
বালুমহাল ইজারাদার জাহাঙ্গীর হোসেন ও হাসিবুর রহমান জানান, শুধু অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই খ্যান্ত নয় তারা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আমাদের বৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা সৃষ্টি ও নানাভাবে হয়রানি করছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে তাদের ব্যবসা। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ইজারার অর্ধেক অর্থ তোলা দায় হয়ে যাবে বলে জানান তারা।
এদিকে বালু কারবারী ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহীন আকতার রোমেন বিশ্বাস বলেন, তিনি বৈধভাবে এখানে ব্যবসা করছেন। তিনি চাপাইনবাবগঞ্জের ইতি ট্রেডার্স এর নিকট হতে বালু ক্রয় করে এখানে রেখে ব্যবসা করছেন। আর বালু নিয়ে যাওয়ার লক্ষে রাস্তা ব্যবহার করার জন্য গোদাগাড়ী পৌরসভার নিকট হতে একাত্তর লক্ষ টাকা দিয়ে রাস্তা ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছেন। রাস্তার এই বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোদাগাড়ী পৌর পৌরসভায় বিগত ১০ বছরে কোন রাস্তার উন্নয়ন ও মেরামাত করা হয়নি। নির্বাচনরে মধ্যে ও পরে কিছু রাস্তা সংস্কার ও কার্পেটিং করা হয়েছে। তবে এই রাস্তা মেরামত করার জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।