আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীর সর্বশেষ সেনাও আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি ছেড়ে গেছে। গত ২০ বছরের তালেবানবিরোধী যুদ্ধের কেন্দ্রে থেকেছে এই ঘাঁটি। এখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার আসন্ন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার ২০ বছর পূর্ণ হবে। আল কায়েদার চালানো ওই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পর আফগানিস্তানে তালেবান সরকার উৎখাতে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। আল কায়েদাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে এই হামলা চালানো হয়।
আমেরিকা বর্তমানে তাদের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাইছে। বিপুল মানুষের প্রাণহানি আর খরচের বিনিময়ে অবশেষে আফগান সরকারের ওপর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চায় তারা। কাবুলের উত্তরের বাগরাম ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার সংখ্যা এক হাজারের নিচে নেমে এসেছে। তবে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলেও আফগানিস্তানের নতুন নতুন এলাকা দখলে নিতে শুরু করেছে তালেবান। দেশটিতে নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কাও রয়েছে।
১৯৮০’র দশকে আফগানিস্তানে আগ্রাসনের পর বাগরাম ঘাঁটি নির্মাণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। কাবুল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামের নামে ঘাঁটিটির নামকরণ করা হয়। ২০০১ সালের ডিসেম্বর সেখানে প্রবেশ করে মার্কিন সেনা। প্রায় দশ হাজার সেনা ধারণ ক্ষমতার করে গড়ে তোলা হয় এটি।
ঘাঁটিটির দুটি রানওয়ের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩.৬ কিলোমিটার। এখানে বড় কার্গো এবং বোমারু বিমান নামতে পারে। ১১০টি বিমান রাখার স্থান রয়েছে। এগুলো সুরক্ষিত রাখতে নির্মাণ করা হয়েছে বিস্ফোরণ প্রতিরোধী দেয়াল। রয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, তিনটি অপারেশন থিয়েটার এবং একটি আধুনিক ডেন্টাল ক্লিনিক।
এছাড়া বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে রয়েছে মার্কিন বাহিনীর হাতে আটক হওয়া মানুষদের জন্য কারাগার। যুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে এটি পরিচিত হয়ে ওঠে আফগানিস্তানের গুয়ানতানামো কারাগার হিসেবে। মার্কিন সিনেটের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আল-কায়েদা সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে সিআইএ যেসব কেন্দ্র ব্যবহার করেছে তার মধ্যে অন্যতম বাগরাম ঘাঁটি।
বর্তমানে আফগানিস্তানে মাত্র ৬৫০ জন মার্কিন সেনা রয়েছে। তারা মূলত কূটনীতিক এবং কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। তাদের সহায়তা করছে ন্যাটো মিত্র তুরস্ক। নিরাপত্তা নিয়ে আফগান সরকারের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তির আলোচনাও চালাচ্ছে তারা।