নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মুক্তারের স্ত্রী জেসমিন আক্তার(৪৩) ও দুই ভাতিজা নবাব আলীর ছেলে সোহান (২৫) ও সামিরুলের ছেলে শান্তকে (২৩) আটক করেছে পুলিশ।
এ সময় মেয়রের বাড়ি থেকে নগদ চুরান্নব্বই লক্ষ আটানব্বই হাজার টাকা, একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশী পিস্তল, ৭.৬৫ পিস্তলের চারটি ম্যাগজিন, ৭.৬৫ পিস্তলের ১৭ রাউন্ড তাজা গুলি, ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি গুলির খোসা, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি দেশী তৈরী বন্দুক, একটি এয়ার রাইফের, শর্টগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, ১০ গ্রাম গাঁজা, ৭ পুড়িয়া হেরোইন, ২০ পিচ ইয়াবা ও আঠার লক্ষ টাকার স্বাক্ষর করা চেক উদ্ধার করে পুলিশ।
এ নিয়ে আজ বুধবার (৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী পুলিশ সুপার অফিসে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিংএ পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম বার বলেন, আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে নাটোর বাগাতিপাড়া বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক মনোয়ার হোসেন মজনু তাঁর বাড়ির পাশে একটি ঔষধের দোকানে বসে ছিলেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়র মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় তাঁর দলবল নিয়ে সেখানে যান এবং হট্টোগোল শুরু করেন।
এ অবস্থা দেখে ভয়ে মজনু সেখান উঠে তাঁর বাড়ির ভিতরে চলে যান। এরপর মেয়র তার দলবল নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে মজনুকে মারপিট শুরু করে। এ দেখে স্কুল শিক্ষক মজনুর স্ত্রী ও ছেলে এগিয়ে আসলেও তাদেরও তারা মারপিট করে আহত করেন। মজনু নৌকার পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন বলে তার উপরে এই নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানান এসপি।
এঘটনায় রাতেই মজনু বাদি হয়ে মেয়র মুক্তার আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে অঙকুরসহ আরো ৩-৪ জনের নামে বাঘা থানায় মামলা দায়ের করলে রাতেই তাঁর নির্দেশে মেয়রসহ সহযোগিদের ধরতে অভিযান চালান বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। অভিযানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো: আশরাফুল আলম, সহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি ( চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল মাহমুদের নেতৃত্বে বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম ও পুলিশের অন্যান্য সদস্যগণ অংশগ্রহন করেন। এসময়ে মেয়র ও তাঁর ছেলে পালিয়ে গেলেও ভোর ৫টার দিকে উপরোক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংএ তিনি আরো বলেন, মেয়র মুক্তার আলী নামে পূর্বে আরো পাঁটি মামলা রয়েছে। তবে ঐ সকল মামলায় তিনি জামিনে আছেন। এখন আবার দুইটি মামলা হবে। মেয়র ও তার ছেলে নামে মাদক এবং মেয়র ও তাঁর স্ত্রীর নামে অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন মেয়র যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন আইন তার নিজ গতিতে চলবে। আর মেয়র, তার ছেলে এবং অন্যান্য আসামীদের ধরতে অভিযান চলছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আটক করা হবে বলে জানান এসপি মাসুদ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের কোর্টে চালান দেয়ার প্রস্তুতি চলছিলো।
প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো: আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোনাতন চক্রবর্র্তী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলমসহ পুলিশেল অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য গত পৌরসভা নির্বাচনে মুক্তার আলী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হন। সেই সময় মুক্তারের সমর্থকদের হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মুক্তার আলীকে আড়ানী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।