নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সিরাজী হল রুমে অনুষ্ঠিত হয় লিঙ্গ বৈচিত্র্যতা ও রাজশাহীর হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবন সংগ্রামের গল্পের আসর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এবং দিনের আলো হিজড়া সংঘের সার্বিক সহযোগিতায় আসরে সভাপতিত্ব করেন দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লিটন হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাসিক সংরক্ষিত আসন জোন-৭ এর কাউন্সিলর ও দিনের আলো হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক তৃতীয় লিঙ্গের সুলতানা আহমেদ সাগরিকা ও সদস্য মারুফ। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর গল্প শোনান মোহনা ও সাগরিকা। তারা বলেন, এই সমাজে এক সময় তাদের কোন স্থান ছিলোনা। শুধু সমাজ নয় পরিবারেও নয়। তারা হিজড়া নিজে থেকে হিজড়া হয়ে জন্ম নেয়নি। প্রকৃতগত ভাবে তারা হিজড়া হয়েছেন। যে বাবা-মা তাদের পৃথিবীতে আনলেন তারাই একসময় ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তাদের। পরে তাদের স্থান হয়েছ গুরু মায়ের নিকট। সেখানে তারা অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছেন। এরপরেও তারা শান্তিতে নেই। তাদের পদে পদে নির্যাতিত ও অবহেলিত হতে হচ্ছে।
কাউন্সিলর সাগরিকা বলেন, বর্তমান সরকার হিজড়া সম্প্রদায়ের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার কারনে তিনি আজ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর হতে পেরেছেন। বর্তমানে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন। এছাড়াও তাদের মধ্যে অনেক শিক্ষিত হচ্ছেন। তারা বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করছেন। উদ্যেক্তা হচ্ছেন। খবর পাঠিকা হচ্ছেন। মুলধারার জনগণ যদি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় তাহলে হিজড়ারা আর অবহেলিত থাকবেনা। তারা সবার সাথে কাধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন।
মোহনা বলেন, তিনি এখন একটি সংস্থা পরিচালনা করছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ন লোকের সাথে চলাফেরা করছেন। অনেক দপ্তরে যাচ্ছেন। প্রতিটি দপ্তরের প্রধান ও কর্মকর্তাগণ তাদের গ্রহন করছেন। এমনি করে সকল মানুষ তাদের গ্রহন এবং মানুষ হিসেবে গণ্য করে সে ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাদের সুখ-দু:খের গল্পগুলো উপস্থিত শিক্ষার্থীরা শোনেন এবং তাদের মধ্যে যে সকল ভ্রান্ত ধারনা এবং ভীতি ছিলো তা দুর হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থী। সেইসাথে হিজড়া সম্প্রদায়কে অবহেরা নয় বন্ধু ভেবে পাশে নিয়ে কাজ করার একাত্বতা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।