নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় ১১ বছর আগে চাঁদার দাবিতে কলেজ ছাত্র রাজু আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়াও মামলার অপর নয়জন আসামীকে বেকসুর খলাস দেয়া হয়। আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে আদালতের বিচারক অনুপ কুমার এই রায় ঘোষণা করেন বলে জানান আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) এন্তাজুল হক বাবু। যার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-০২/২০১১৮, জি.আর. নং- ২৮১/১০, বোয়ালিয়া মডেল থানার মামলা নং-২২, তারিখ: ১৫ মার্চ ২০১০ ইং।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, রাজশাহী নগরীর দড়িখরবোনা এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে আজিজুর রহমান রাজু ও আমির হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সাজু, বর্তমান ঠিকানা দড়িখরবোনার ফজর আলীর ছেলে রিংকু ওরফে বয়া, দুর্গাপুর উপজেলার ব্রম্মপুর গ্রামের মৃত বাহার সরদারের ছেলে ইসমাইল হোসেন ও বাগমারা উপজেলার হাসনিপুর মাদারীগঞ্জ গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মাহাবুর রশীদ রেন্টু।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১০ তারিখে হত্যার মূল হোতা মাহাবুর রশিদ রেন্টু ও তার ভাইগণ মাদারীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত রাজু জুয়েলার্স নামে স্বর্নের দোকানে যেয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথাকাটি হয়। এর দুইদিন পরে আবারও তারা দোকানে যেয়ে চাঁদা দাবী করলে রাজু চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। এনিয়ে আসামীরা রাজুকে মারপিট করেন। পরে রাজু সেখান থেকে পালিয়ে এসে রাজশাহীতে বসবাস করতে থাকেন বলে এজাহার থেকে জানা যায়। এরপর ১৫ মার্চ ২০১০ ইং তারিখে রাজুকে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে রেন্টু খুন করান। এ নিয়ে তার বাবা এশার উদ্দিন খান বাদী হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি হথ্যা মামলা করেন।
এদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, নিহত রাজুর বাড়ি বাগমারা উপজেলার হাসনিপুর গ্রামে। মাদারীগঞ্জ বাজারে তার বাবা এসার উদ্দিনের একটি স্বর্ণের দোকান ছিল। আসামি মাহাবুর রশীদ রেন্টুর সঙ্গে রাজুর পরিবারের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে মাহাবুর রশীদ তার সহযোগিদের নিয়ে রাজুর দোকানে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে রাজি না হলে স্বর্ণের দোকানে ভাঙচুর চালায় রেন্টু ও তার লোকজন। এ ঘটনায় রাজু বাদি হয়ে রাজশাহী কোর্টে মামলা করেন। যা বাগমারা থানার মামলা নং-০৬, তারিখ: ১৫ মার্চ ২০১০ ইং।
তিনি আরও জানান, মামলার পর আসামীদের হুমকিতে রাজু গ্রাম থেকে পালিয়ে রাজশাহী শহরে আশ্রায় নেয়। নগরের মুন্নাফের মোড় এলাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে মেসে থাকতেন তিনি। এর পর রাজুকে রাজশাহী শহরে হত্যার পরিকল্পনা করে ৩০ হাজার টাকায় চারজন খুনিকে ভাড়া করেন রেন্টু।
তার পরিকল্পনায় ২০১০ সালে ১৫ মার্চ রাজুকে নিউমার্কে এলাকা থেকে প্রথমে অপহরণ করার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে সেখানে হাতুরী দিয়ে আঘাত করে আসামীরা। পরে ধারলো ছুরি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রাজুকে হত্যা করে। তার চিৎকারে আশে পাশের রোখজন রাজুকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সে সময় রাজু রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরের দাওকান্দি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। রাজু হত্যার ঘটনায় পরদিন তার বাবা এসার উদ্দিন বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন।
এন্তাজুল হক বাবু আরও বলেন, এ মামলার ১৫ জন আসামী ছিলেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ১৪ আসামীর মধ্যে আদালত পাঁচজনের ফাঁসি ও নয়জনকে খালাসের আদেশ দেন। এ মামলায় ৫৮ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৩১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা সবাই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের আত্মীয়স্বজনরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। সেখানে ন্যায় বিচার পাবেন বলে জানান তারা।