বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

আগের নিয়মেই আলু রাখতে চান চাষিরা, হিমাগার মালিকদের না

  • প্রকাশ সময় রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৪১১ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে কোল্ডস্টোরেজ কর্তৃকপক্ষের আলু রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও পূর্বের নিয়মে আলু রাখার দাবিতে রাজশাহীর মোহনপুরে কৃষক সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচীতে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি কৃষকের সন্তান। আমি কৃষকের সাথে ও পাশে ছিলাম, আছি থাকবো। এবারে আগের নিয়মে কোল্ডস্টোরগুলোতে আলু রাখার ন্যায্য দাবিতে আমিও একমত।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা আলু রাখার বস্তাসহ আনুসাঙ্গীক কাজ সমাপ্ত করে ফেলেছেন, সেহেতু আগের নিয়মেই আলু নেওয়ার জন্য স্টোর মালিকদের প্রতি আহবান জানান তিনি। রোববার বিকালে মোহনপুরের মৌগাছী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলার সকল আলু চাষির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, গতবার স্টোরগুলোতে ৬৫-৭০ কেজির বস্তার ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা। এবারে ৫০ কেজির ভাড়াও ২৫০ টাকা। এটা হতে পারে না। রেসিও অনুযায়ী ভাড়া কমাতে হবে। এতে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে বসতে হবে। তিনি কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমরা কেউ আইনের উধ্বে নয়। আইনকে আমাদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারি প্রতিষ্ঠানকেও সহযোগিতা করতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি বিশেষ করে এবারে কোন স্টোরে প্রতিবস্তায় ৬৫ কেজি আলু মজুত রাখলে ভ্রাম্যমাণ হবে না। কারণ আইন মানুষের জন্য।

তিনি আরো বলেন, “হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ফসল ফলানোর পরেও অনেক সময় ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। কারণ ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠানোই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি বাংলাদেশের কৃষকের স্বার্থ রক্ষা না হয় তবে তার সার্বিক ফলাফল কোনোভাবেই ইতিবাচক হওয়া সম্ভব নয়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কৃষক তার মেধা ও শ্রম দিয়ে উৎপাদন করে দেশের সামগ্রিক গতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কৃষকের অধিকার খর্ব হলে তার চেয়ে পরিতাপের আর কিছু হতে পারে না। কৃষকদের সমস্যাগুলো সমাধান না করলে দেশের সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

প্রায় প্রতিবছরই হয় হিমাগারে আলু মজুত রেখে নতুবা মজুতের আগেই কৃষকদের ফাঁদে ফেলতে চায় হিমাগার মালিকপক্ষ। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মালিকপক্ষ জানান দিয়েছে এবারে বস্তায় ৫০ কেজির বেশী আলু হিমাগারে রাখা যাবে না। কৃষকলীগ নেতা ও আলুচাষি নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও মৌগাছী ইউপি’র চেয়ারম্যান আল-আমিন বিশ্বাস।

আলুচাষি ও শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আবুল কালাম আজাদ। বক্তব্য রাখেন আলুচাষি মোবারক হোসেন, জাইদুর রহমান, আব্দুল মতিন, বীজ ও বস্তা ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম। বক্তারা বলেন, কোল্ডস্টোরের ফাঁদে পড়ে অনেক চাষি নিঃশ্ব হয়েছে। প্রতিবছরই স্টোর মালিকগুলোর একটা না একটা অজুহাত থাকেই। দেখা গেছে স্টোর থেকে বীজ নিয়ে ক্ষেতে আলু হয় না। কিন্তু স্টোরে ঋণ থেকে যায়। বাড়তে থাকে সুদ। লোকসান হলে জমি বিক্রি করে স্টোরের টাকা পরিশোধ করতে হয়। আর দাম একটু বেশী হলে চলে প্রশাসনের খবরদারি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে কোনো ফসলের ফলন বেশি হলে চাষিদের মুখে হাসি ফোটার বদলে নেমে আসে দুশ্চিন্তার ছায়া। ফসল সংরক্ষণের যে ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে, সেটিকে কোনোভাবেই পরিপূর্ণ, আধুনিক ও টেকসই বলা যায় না। উল্টো হিমাগারমালিকদের কাছে জিম্মি হতে হয় কৃষকদের। আলু চাষের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীর চাষিরা তেমনই বিপাকে পড়েছেন। বছরের পর বছর লোকসান দিয়েও আলু চাষ করে যাচ্ছেন তারা। হিসাব মতে গত ১০ বছরে ছয় বছরই আলুতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হয়েছে। এতে হিমাগার কর্তৃপক্ষের কিছু যায় আসে না।
তারা বলেন, আলু লাগানোর শুরুতেই প্রতিবস্তার আলুর ওজন ও নির্ধারিত ভাড়া চুক্তি করেই কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলুচাষ করে থাকেন। কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই হিমাগার কর্তৃপক্ষের সাথে কোন না কোন কারণে বিপত্তি বাধে। হিমাগারের মালিক পক্ষ নানান অযুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও আদায়ের চেষ্টা করে থাকেন। কৃষকের সমিতি নাই। তাই তারা যেভাবে পারে কৃষকের কাছে থেকে মুনাফা আদায় করে। তবে তাদের কিছু নির্ধারিত দালাল চাষি ও ব্যবসায়ী আছে। এরাও কৌশলে চাষিদের কথা বলে নিজেদের আখের গোছানোই ব্যস্ত থাকে। অনুষ্ঠিত সমাবেশে রাজশাহীর জেলার বিভিন্ন উপজেলার আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘চাষি বাঁচলে আমরা বাঁচবো। চাষিদের নিয়েই আমাদের অবস্থান। হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে বস্তায় ৫০ কেজি। সেখানে কাঁচামাল শুকিয়ে যেতে পারে বলে ৫৫-৬০ কেজি বলা হয়। কিন্তু চাষি ও ব্যবসায়ীরা অনেকে এর চেয়ে বস্তায় বেশী আলু রাখেন। তবে লোকসানের কথা ভেবেই কয়েকদিনের মধ্যে কমিটিতে আলোচনা করা হবে। আশা রাখি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin